কিছু বিচারক পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির নিপীড়ক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন: আসিফ নজরুল

অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

কোনো বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত সে ব্যাপারে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, 'এটা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিল। আজকে আদালতের রায়ের কারণে এই কনফিউশনটা দূর হয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখন পুরোপুরি অপারেশনাল করা যাবে।'

আজ রোববার সচিবালয়ে এই রায় নিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'এই সময়ে এটার একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আমাদের হাইকোর্টে কিছু বিচারক আছেন। ওনাদের ব্যাপারে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রচুর কমপ্লেইন রয়েছে যে ওনারা জুলাই গণবিপ্লবে যে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল, সেই শক্তির একটা নিপীড়ক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। তাছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অনেকের এ ব্যাপারে ক্ষোভ রয়েছে।

'এ সমস্ত ক্ষোভ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পস্তি করার একটা অ্যাভিনিউ খুলে গেছে। তারপরেও উচ্চ আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন। উচ্চ আদালত উচ্চ আদালতের মতো করে ব্যবস্থা নেবে।'

সংবিধান অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।

আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।

এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল তা আবার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এলো। সংবিধানে এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল হলো।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের 'দোসর' বিচারকদেরও অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে গত সপ্তাহে ১২ জন বিচারককে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ষোড়শ সংশোধনী মামলা ফের আলোচনায় আসে।

আন্দোলনের সূত্র ধরে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদনটি রোববার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, 'এখন আমরা মনে করি অন্তত ছাত্র-জনতা তাদের দাবিটা চ্যানেলাইজ করার জন্য বা এটাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার জন্য একটা উপযুক্ত ফোরাম পেল। এটাকে আমি একটা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখতে চাই।'

এ পর্যায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাজ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আপনি যদি আজকেই কমপ্লেইন দেন সেটার প্রসেস শুরু করে দেবে। কমপ্লেইন থাকতে হবে। আলাদা করে নোটিফিকেশন দেওয়ার দরকার নেই। সংবিধানে বলাই আছে।'

আসিফ নজরুল আরও বলেন, 'সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যখন বাদ ছিল তখন উচ্চ আদালতের বিচারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ফোরামটা ছিল না। এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মতো ইচ্ছাও তৎকালীন উচ্চ আদালতের প্রশাসনের মধ্যে ছিল না। ফরমায়েশি রায় হচ্ছিল।'

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago