ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও জয়পুরহাটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৩ হত্যা মামলা

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা তিনটি দায়ের হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও জয়পুরহাটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা তিনটি দায়ের হয়।

গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় নিহত সেলুনকর্মী জাহিদুল ইসলাম সাগরের (২৮) ছোট ভাই আনারুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের সাভার প্রতিনিধি জাহিদ হাসান শাকিলসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন ২০০ জন।

সাগর রংপুরের তাজহাট থানাধীন দুর্গাপুর এলাকার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। রফিকুল ইসলাম সপরিবারে আশুলিয়ার বাইপাইল বগাবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। সাগর একটি সেলুনের দোকানে কাজ করতেন।

বাদীর আইনজীবী ইমরুল হাসান বলেন, 'সিজিএম আদালতে আজ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত আগামী তিন দিনের মধ্যে আশুলিয়া থানাকে মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দিয়েছেন।'

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে রাস্তায় নেমেছিলেন সাগর। দুপুর ২টার পর বাইপাইল এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সাগরকে মারধর করে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইয়ারপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ ভুইয়া সাগরের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। 

সাগরকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনার পর সাগরের মরদেহ রংপুরে দাফন করা হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২০ জুলাই কাঁচপুর এলাকায় বাসচালকের সহকারী নিহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। 

এ নিয়ে গত ৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হলো।

নিহত মো. জনির বাবা মো. ইয়াসিন বাদী হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সোনারগাঁ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, মামলায় ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭ বছর বয়সী মো. জনি নাফ পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি সোনারগাঁ পৌরসভার বালুয়া দিঘীরপাড় গ্রামে।

গত ২০ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে কাঁচপুর এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। একটি গুলি তার বুকে এবং আরেকটি তার পিঠে বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই জনির মৃত্যু হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের নির্দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন আন্দোলনকারীদের দমন করতে নির্বিচারে গুলি চালালে জনি নিহত হন, এজাহারে উল্লেখ করেন ইয়াসিন।

এর আগে শনিবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ও সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।

এদিন জয়পুরহাটে শেখ হাসিনাসহ ২১৭ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নিহত মেহেদী শেখের (২৫) স্ত্রী জেসমিন আক্তার সৃষ্টি  বাদী হয়ে জয়পুরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

শুনানি শেষে আদালত জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী আব্দুল মোমিন ফকির দ্য ডেইলি স্টারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মেহেদী পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। তিনি শহরের নতুনহাট এলাকার মৃত আলতাফ হোসেন শেখের ছেলে।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরে ৭০০-৮০০ মানুষ জয়পুরহাট সদর থানার বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা থানার ভেতরে অবস্থান করছিলেন। থানার ভেতর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে মেহেদী গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

Comments