৪১ সাবেক এমপি-মন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবে দুদক

এর মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় ছিলেন।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য থাকা ৪১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১২ জন আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় ছিলেন।

বাকি সাতজন হলেন—সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী দিপুমনি, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান এবং সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

গতকাল সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তের জন্য একজন পরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি পৃথক দল গঠন করা হয়েছে। তাদের কেউই অন রেকর্ড কথা বলতে রাজি হননি।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সারওয়ার হোসেন ৪১ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত চাওয়ার একদিন পর এই সিদ্ধান্ত আসে।

সারওয়ার জানান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি অভিযোগটি করেছেন।

অভিযোগপত্রে তিনি যেসব তথ্য সংযুক্ত করেছেন, যেখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে কীভাবে তাদের সম্পদ কয়েক বছর ধরে বেড়েছে।

এতে বলা হয়েছে, 'দুর্নীতি ছাড়া সম্পদের এত বৃদ্ধি সম্ভব নয়।'

রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুদক সচিব খুরশিদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ৪১ জনের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ করা হলে কমিশন নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো খতিয়ে দেখবে। এটা কমিশনের রুটিন ওয়ার্ক।

সারওয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অভিযোগ দায়ের করার পরদিন দুদক দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, এতে আমি খুশি। এটা দুদকের নিজে থেকেই করা উচিত ছিল। তবুও, তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রশংসা করি।'

এই তদন্তের অধীনে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা হলেন—টিপু মুনশি (বাণিজ্য), জাহিদ মালেক (স্বাস্থ্য), গোলাম দস্তগীর গাজী (বস্ত্র ও পাট), ইমরান আহমদ (প্রবাসী কল্যাণ), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), শাজাহান খান (নৌ পরিবহন), হাসানুল হক ইনু (তথ্য), ফরিদুল হক খান (ধর্ম), মেহের আফরোজ চুমকি (নারী ও শিশু), স্বপন ভট্টাচার্য (এলজিআরডি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), কামাল আহমেদ মজুমদার (শিল্প), জাহিদ আহসান রাসেল (যুব ও ক্রীড়া) এবং মেহের আফরোজ চুমকি (নারী ও শিশু)।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন—বেনজীর আহমেদ (ঢাকা-২০), একেএম সরওয়ার জাহান (কুষ্টিয়া-১), শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ (বগুড়া-২), শহিদুল ইসলাম বকুল (নাটোর-১), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), সেলিম উদ্দিন তরফদার (নওগাঁ-৩), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), এনামুল হক (রাজশাহী-৪), নূরে আলম চৌধুরী শাওন (মাদারীপুর-১), শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১), মামুনুর রশিদ কিরণ (নোয়াখালী-৩), কাজিম উদ্দিন আহমেদ (ময়মনসিংহ-১১), আনোয়ার হোসেন (পিরোজপুর-২), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাট-২) এবং জিয়াউর রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২)।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের এই উদ্যোগটি বেশ বিলম্বিত হলেও স্বাগত জানাই।

তিনি বলেন, 'ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখার প্রত্যাশা থাকবে মানুষের। কিন্তু এটি আরও একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে দুদক তথাকথিত এই রাঘব বোয়ালদের তখনই ধরে যখন তারা ক্ষমতার বাইরে থাকে।'

তাকসিমের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে দুদক। গতকাল এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখাকে চিঠি দেওয়া হয়।

তাকসিমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে এবং এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাকসিমের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago