সবাই জানে সোহেলরা অনেক অর্থবিত্তের মালিক, তবে উৎস জানে না কেউ

আবু সোলায়মান মো. সোহেল
আবু সোলায়মান মো. সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজন আবু সোলায়মান মো. সোহেল। এলাকায় নিজেকে কখনও প্রপার্টি ডেভেলপার কিংবা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে নিজ এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

সোহেলের গ্রামের বাড়ি বানাশুয়া ও পার্শ্ববর্তী শিমরা গ্রাম ঘুরে জানা যায়, সোহেলের বাবা আব্দুল ওহাব এলাকায় 'ওহাব বিএসসি'নামে পরিচিত। ওহাব বিএসসি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কিছু জমিজমা লোক দিয়ে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করতেন।

তবে গত মাসে দেড় কোটি টাকা দিয়ে দেড় বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, তাদের আয়ের উৎস এবং সম্পত্তি কেনার মধ্যে মিল নেই।

আব্দুল ওহাব ও জাহানারা বেগমের তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সোহেল সবার ছোট।

সোহেল স্থানীয় বানাশুয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও পরবর্তীতে নর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বলে জানা যায়।

পরিবার ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, কুমিল্লা ও বুড়িচংয়ে দুটি স্বর্ণের দোকান আছে সোহেলের পরিবারের। এছাড়াও ডিপ টিউবওয়েলে স্কিমে পানি দেওয়ার মাধ্যমে আয় করেন তারা।

তার বড় ভাই মো. সুজন স্বর্ণের দোকানের দেখাশোনা করেন আর মেজ ভাই মো. খালেদ গ্রামের কৃষি জমি ও স্কিমের পানি দেওয়া থেকে আয় করেন।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, এইসব স্বর্ণের দোকান, কৃষি থেকে আয় আর ডিপ টিউবয়েলের আয় সবই লোক দেখানো। এগুলো এত সম্পদ কেনার উৎস হতে পারে না।

এলাকায় সোহেল নিজেকে ঢাকায় একজন প্রপার্টি ডেভেলপার বলে পরিচয় দিতেন। গ্রামের মানুষকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ও প্রবাসীর কাছে ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

সোহেলের মো. খালেদের স্ত্রী সানজিদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সোহেল ঢাকায় গার্মেন্টেসের ব্যবসা করেন। মাঝে মাঝে গ্রামে আসেন।

তিনি আরও বলেন, তার শ্বশুর সোহেলের বাবা আব্দুল ওহাব বর্তমানে আমেরিকায় তার মেয়ের কাছে আছেন।

তিনি জানান, সোহেলের এক বোন লাকি আমেরিকায় প্রবাসী অন্য বোন মুরাদনগরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

সোহেলদের প্রতিবেশী মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ১৫ বছরে সোহেলদের পরিবার তাদের বাড়ির উত্তর দিকে রেললাইন পর্যন্ত মাঠে প্রায় ৩০ বিঘা জমি কিনেছে। আশেপাশে স্থানীয় অহিদ, অপু, জলিলদের কাছ থেকে আরও ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমি কিনেছে।

তিনি আরও বলেন, গত মাসে সোহেল আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হানিফের কাছ থেকে বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিম পাশে দেড় কোটি টাকায় দেড় বিঘা জমি কিনেছে।

স্থানীয় আব্দুল জব্বারের ছেলে হেলালের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন সোহেল যা এখনো ফেরত পায়নি।

আমড়াতলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সোহেলের পরিবার এলাকায় স্বর্ণ জমা রেখে সুদের ব্যবসা করত। শহরের কাপড়িয়াপট্টিতে তাদের জুয়েলারি দোকানটা সাদামাটা। তাদের এত সম্পদ অর্জনের সাথে আয়ের তেমন মিল নেই। টিভিতে তার সম্পর্কে জানতে পেরে অবাক হয়েছি।

দেড় কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আব্দুল হানিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জায়গাটি আমাদের পৈত্রিক। গত জুন মাসে সোহেলের বাবা ওহাব বিএসসি জায়গাটি কিনেছেন। তবে এখনো পুরো টাকা দেননি। তিনি আমেরিকা থেকে ফিরলে বাকি টাকা দেবেন।'

আমড়াতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, এলাকায় সোহেলরা অনেক অর্থবিত্তের মালিক বলে সকলেই জানে, তবে উৎস জানে না কেউই।

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

2h ago