এমপি আনার হত্যা: ‘প্রভাবশালী শত্রু’ তৈরি করেছিলেন আনার
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর ঝিনাইদহে স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেছিলেন আনার।
গত কয়েক বছর ধরে, ঝিনাইদহের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং যশোরের এক রাজনৈতিক নেতা, যারা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, তারা অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করায় আনারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তদন্ত কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা হয়তো হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।'
গতকাল ঢাকার একটি আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, সোনা চোরাচালানে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারের অংশীদার আকতারুজ্জামান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের নাম জানা যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নিজ শহর ঝিনাইদহে শাহীন মিয়া নামে পরিচিত আক্তারুজ্জামান এমপি আজিমকে কলকাতায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং সেখানেই তাকে হত্যার ব্যবস্থা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান এবং নিউ টাউন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করেন।
আক্তারুজ্জামান ওই সময় কলকাতায় অবস্থানরত তার সহযোগী আমানউল্লাহকে যেকোনো মূল্যে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা কার্যকর করতে বলেন।
এদিকে আসামি আমানউল্লাহ, সেলেস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে গতকাল আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
যোগাযোগ করা হলে ডিবির (ওয়ারী বিভাগ) উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। আমাদের কাছে কিছু ক্লু আছে, যেগুলো তাদের বক্তব্যের সঙ্গে যাচাই করে দেখব।'
গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন এমপি আনার। চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে বলে পরদিন সেখান থেকে চলে চান তিনি।
পরে গোপাল আনারের মোবাইল ফোন থেকে বেশ কয়েকটি টেক্সট মেসেজ পান যেখানে তাকে ফোন করার দরকার নেই বলা হয়। বুধবার ভারত ও বাংলাদেশ পুলিশ জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার।
গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আক্তারুজ্জামান এবং এমপি আনার একসঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালান চক্র চালাতেন। গত বছরের শেষের দিকে টাকাপয়সা নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব হয়, সেসময় আজিম ১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের স্বর্ণ নিজের কাজে রেখে দেন।
গোয়েন্দারা জানান, আনারের কাছ থেকে চোরাচালান করা সোনা কিনতেন পশ্চিমবঙ্গের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল।
গতকাল গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি কখনো স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আনার ও আক্তারুজ্জামান জুটি সম্পর্কেও তিনি জানতেন না।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাতিশালা বর্জ্য খালের ওপর একটি সেতুর কাছে আজিমের দেহাবশেষ ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পুলিশের বেশ কয়েকটি দল সেটি খুঁজছে।
পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বৃহস্পতিবার জিহাদ হাওলাদার নামে ২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। জিহাদ মুম্বাইতে অবৈধভাবে বসবাস করতেন এবং কসাই হিসাবে কাজ করতেন।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, জিহাদ আরও চার বাংলাদেশির সঙ্গে সংসদ সদস্যকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। কীভাবে তিনি ও অন্যরা লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেন তাও কর্মকর্তাদের জানান তিনি।
আক্তারুজ্জামান দুই মাস আগে জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে আসেন, বলেন সিআইডি কর্মকর্তা।
গতকাল বারাসতের আদালত তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন।
জিহাদই সম্ভবত অন্য সন্দেহভাজনদের জন্য একটি গাড়ি এবং নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করেছিলেন বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ঢাকার তদন্তকারীদের মতে, সন্দেহভাজনদের একজন সেলেস্তি আক্তারুজ্জামানের বন্ধু। তিনি ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কলকাতায় যান এবং ১৫ মে আমানুল্লাহর সঙ্গে ফিরে আসেন।
সেলেস্তি রাজধানীর উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে।
(আমাদের দিল্লি সংবাদদাতা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন)
Comments