থানায় আসামির ঝুলন্ত মরদেহ: ‘পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়’

হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা হেফাজতে চোর সন্দেহে আটক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য 'বিশ্বাসযোগ্য নয়' বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

গত মঙ্গলবার রাতে বানিয়াচং থানার একটি কক্ষে আটককৃত যুবক উপজেলার নন্দীপাড়া মহল্লার গোলাম রাব্বানীর ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

পুলিশের দাবি, থানায় নিজের গেঞ্জি আর বেল্ট দিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন রাব্বানী।

এদিকে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানা হাজতে আসামির মৃত্যু হয়েছে। ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা গ্রামের আনোয়ারকে মঙ্গলবার বিকেলে গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে নেয় পুলিশ। মধ্যরাতে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ।

এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলা হলেও পুলিশ বলছে, স্ট্রোক করে তিনি মারা গেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক বিবৃতিতে এ দুটি ঘটনায় ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

হবিগঞ্জ

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য, এশার নামাজের সময় থানা হাজতে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 
পুলিশের দাবি, তাদের অগোচরে হাজতের ফ্যানের সঙ্গে পরনের বেল্ট ও গেঞ্জি গলায় বেঁধে ঝুলে রাব্বানী আত্মহত্যা করেছেন।

উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাব্বানীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।

রাব্বানীর স্বজনদের অভিযোগ, গোলাম রাব্বানীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বলছে, চুরির মামলায় গোলাম রাব্বানীকে ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। থানা কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। থানার হাজতখানায় সবসময় লোকজন বা পাহারাদার থাকে। সেখানে পরনের বেল্ট ও গেঞ্জি গলায় বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করা একেবারেই অসম্ভব। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, থানা হাজতখানায় সাধারণত ফ্যান থাকে না। আর থাকলেও তা বেশ উঁচুতে এবং কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়া সেটার কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এরপরও হাজতখানার ভেতরে বা বাইরে লোকজন থাকবে না এটা মেনে নেওয়া যায় না। থানা কর্তৃপক্ষ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সংগঠনটি থানা কর্তৃপক্ষের এ ঘটনার ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে রাব্বানীর মরদেহের সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত করে তা প্রকাশের দাবি করছে। সেইসঙ্গে দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

জামালপুর

সরিষাবাড়ীতে মারামারির মামলায় আনোয়ার হোসেনকে পুলিশ ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

মৃতের স্বজনরা বলেন, পুলিশ সুস্থ অবস্থায় আনোয়ারকে ধরে নিয়ে গেছে। এমন কী হলো যে, রাতেই তিনি মারা গেলেন।

সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মেহেদী হাসান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে আনোয়ার হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন মনে করে, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

'যেকোনো ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব' উল্লেখ করে এমএসএফ বলছে, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। 

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু যেভাবেই হোক না কেন, মরদেহের সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত করে তা প্রকাশের জোর দাবি জানায় এমএসএফ। পাশাপাশি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানায় সংগঠনটি।

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

53m ago