গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত: এখনো আতঙ্ক কাটেনি গ্রামবাসীর

বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ এলাকায় কর্তব্যরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: স্টার

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ এলাকায় গত বুধবার ভোরে লাইনচ্যুত হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। 

ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় একজন ঘটনাস্থলে নিহত ও ১১ জন আহত হন।

ফায়ার সার্ভিস ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন জানায়, দুষ্কৃতিকারীরা মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রেললাইনের ২০ ফুট অংশ গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে ফেলে। এতে ট্রেনটি চিলাই ব্রিজে আসামাত্র ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনের পাশের নিচু জমিতে পড়ে যায়।

ঘটনার ভয়াবহতার কথা ভেবে এখনো আতঙ্কে আছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা হওয়ার পর নতুন আতঙ্ক চেপে বসেছে গ্রামবাসীর মধ্যে।

আজ শুক্রবার ঘটনার তৃতীয় দিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে, তাদের কথায় আতঙ্ক ফুটে ওঠে।

তারা জানান, দুর্ঘটনার চিত্র মনে পড়লেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

এলাকাবাসীর দাবি, অন্য এলাকার কেউ এসে রেললাইন কেটেছে।

বনখড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দেখা হয় স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন ও আকতার হোসেনের সঙ্গে। তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাড়িতেই অবস্থান করছি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচার করতে হবে।'

তারা বলেন, 'অবরোধের প্রথম দিকে দুষ্কৃতিকারীরা স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছিল বলে শুনেছেন। তখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশ এসেছিল।'

বনখড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম স্থানীয় টোব্যাকো কারখানায় চাকরি করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনার দিন অফিসে যাওয়ার পর শুনতে পাই চিলাই ব্রিজের কাছে ট্রেন পড়ে গেছে।'

বনখড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম নাজমুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমিক। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা না।'

'অন্য কোনো এলাকা থেকে দুষ্কৃতিকারীরা এখানে এসে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে', বলেন তিনি।

দুর্ঘটনাস্থলের পাশে জমিতে ধান কাটছিলেন কৃষক মহির উদ্দিন। তিনি জানান, আতঙ্ক থাকলেও তারা বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এত বড় ঘটনায় আমরা ভয় পেয়েছি। দুর্ঘটনা দেখার পর থেকে মনে হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। ট্রেনটি যদি চিলাই ব্রিজে উঠে যেত তাহলে অনেক যাত্রী মারা যেত।'

ঘটনার পর থেকে গ্রামে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

মামলা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে হয়রানি করছে না বলেও জানান তিনি।

গৃহিণী নাসিমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন দলে দলে দুর্ঘটনাস্থল দেখতে আসেন। এ ঘটনা যারা করেছে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে।'

'তবে কোনো নিরপরাধ মায়ের সন্তান যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হয়', বলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। 

আজ সকাল থেকে ওই এলাকায় ট্রেন চলতে দেখা গেছে। লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় আধা কিলোমিটার অংশে সব ট্রেনের গতি ছিল একেবারেই ধীর।  
শুক্রবারও লাইন সংস্কারের কাজ করতে দেখা গেছে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীদের। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয়দের সঙ্গেও তারা কথা বলেন।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ৮ সদস্যের একটি দল ২৪ ঘণ্টা এ গ্রামে দায়িত্ব পালন করছেন।

দুর্ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা (রেঞ্জ-৩) ফারুক হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেল বিভাগের ৪ জন এবং মাস্টার রোলের ৯ জনসহ মোট ১৩ জন রেললাইন সংস্কারে দিনরাত কাজ করছেন।'

আগামীকাল শনিবারও সংস্কার কাজ চলবে বলে জানান তিনি। 

এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও কাউকে আটক করা হয়নি।'

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া রেল পুলিশের (ঢাকা অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাজহারুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সম্মিলিতভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকটাও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Gen Z factor in geopolitics

The Gen Z factor in geopolitics and the Bangladesh-US dynamics

Gen Z should keep in mind that the US cannot afford to overlook a partner like Bangladesh given the country’s pivotal position in South Asia’s economic landscape.

10h ago