মুক্তিপণ আদায়ে ‘মগের মুল্লুকে’ পাচার করা হচ্ছিল ৫৭ রোহিঙ্গাকে

মেরিন ড্রাইভ থেকে টেকনাফের সমুদ্র সৈকত। ছবি: স্টার

আন্তসীমান্ত অপরাধীদের একটি চক্র ৫৭ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাচার করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিল। পাচারের প্রস্তুতির সময় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভের পাশের সৈকত থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।

অপরাধী চক্রটি রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের ছামিলায় পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একটি মাছ ধরার নৌকায় তোলার সময় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।

ছামিলা হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মিয়ানমারের একটি গ্রাম। রোহিঙ্গারা এই গ্রামটিকে চেনে 'মগের মুল্লুক' নামে। আইনের শাসন না থাকায় গ্রামটির এই নাম হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ছামিলায় জিম্মি করা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের নির্যাতন করা হয়। মুক্তিপণ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে জিম্মিদের নির্যাতন করা হয়। এর আগেও অপহরণের শিকার অনেক মানুষ মুক্তিপণ দিয়ে ছামিলা থেকে মুক্তি পেয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিক এখনো সেখানে আন্তসীমান্ত অপরাধী চক্রের হাতে আটক রয়েছে।

উদ্ধারকৃতরা জানিয়েছে, মেরিন ড্রাইভের পাশে টেকনাফের দক্ষিণ ল্যাম্বরিতে টেকনাফভিত্তিক অপহরণকারী চক্রের খপ্পরে কমপক্ষে আড়াইশ রোহিঙ্গা রয়েছে। চক্রটির হোতা টেকনাফের মহেশখালিয়া পাড়ার ইয়াসিনসহ তার চার সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এই চক্রটির হাত থেকে অন্য রোহিঙ্গারা উদ্ধার না হলে যেকোনো সময় তাদেরকে ছামিলায় পাচার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

উদ্ধার হওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জেনেছেন ডেইলি স্টার। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

ভুক্তভোগীরা জানান, বাবুল নামের এক রোহিঙ্গা বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল তাদেরকে। মাছ ধরার নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখান তিনি।

গত বুধবার পাচারকারীরা যখন তাদেরকে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে দুটি ছোট মাছ ধরার নৌকায় তুলে দিচ্ছিল তখন টেকনাফভিত্তিক অপহরণকারী চক্রটির ১০ থেকে ১২ জন সদস্য পাচারকারীদের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয়।

অপরাধীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ছিল জানিয়ে তারা বলেন, তাদের টেকনাফের দক্ষিণ ল্যাম্বরিতে সমুদ্র সৈকত ও মেরিন ড্রাইভের কাছে কয়েকটি অস্থায়ী বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল।

ভুক্তভোগীরা জানান, তারা সেখানে ২৫০ জনের মতো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে দেখেছেন, যাদের অন্য বাড়িতে বন্দি রাখা হয়েছে।

তারা বলেন দক্ষিণ ল্যাম্বরি, হাবিবছড়াসহ অন্যান্য কিছু এলাকা অনেকগুলো বাড়ি অপহৃতদের আটকে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।

ভুক্তভোগী এক রোহিঙ্গা বলেন, আমরা ওই এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আশেপাশের এলাকার সবাই অপহরণকারীদের লোক হওয়ায় পালাতে পারিনি।

উদ্ধারকৃতরা জানান, আন্তসীমান্ত অপরাধ চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদের ছামিলাতে পাঠিয়ে দেয়। কারণ, পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে সময় লাগে।

তারা জানান, ছামিলাকেন্দ্রিক অপহরণকারীরা কাউকে অপহরণ করার পর প্রথমেই তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যাতে তারা ভয় পেয়ে যায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পাচার হওয়ার আগে ৫৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধ চক্রের সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh vs Vietnam RMG exports

Can Bangladesh fend off Vietnam in RMG race?

Bangladesh's limited trade diplomacy, coupled with its slower shift towards value-added production, could allow Vietnam to surpass it in global rankings

10h ago