উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যায় ‘জড়িত’ আ. লীগ নেতা বহিষ্কার হননি ৫ মাসেও
নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যায় জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে তিনি মারা যান।
গুলির ঘটনায় দুজনকে মতিঝিল থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তাদের ঢাকায় আত্মগোপনের নির্দেশ দিয়েছিল।
বিষয়টি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করে ২৮ মে লিখিত আবেদন করে শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ।
কিন্তু প্রায় ৫ মাস পার হলেও আসাদুজ্জামান আসাদকে বহিষ্কার করা হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগ বলছে, ব্যস্ততা ও কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় বহিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
আসাদুজ্জামান আসাদ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বলেও জানা গেছে।
তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলী বরাবর চিঠি দেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন নাজির ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম রাখিল।
চিঠিতে বলা হয়, হারুনুর রশিদ খান হত্যায় জড়িত ও গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন যে, আসাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাছাড়া এ ঘটনায় গত ৮ মার্চ ডিএমপির করা এক মামলার আসামি হিসেবে আসাদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, ১৪ মার্চ শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আসাদকে বহিষ্কার করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনার ২ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান মারা যাওয়ার পর মামলায় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানসহ মোট ২০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে ৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন আমিনুর।
আমিনুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন টানা ২৫ বছর ধরে। শিবপুরে সংগঠন টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করেছেন। অথচ তাকে হত্যায় দলীয় লোকজন জড়িত। আমার চাচা রবিউল আলম কিরন ১৯৮৫ আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য ছিলেন, তাকে জনসভায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। আজও ওই হত্যাকাণ্ডে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।'
'আমরা চাই আসাদসহ যারা আমার বাবার হত্যায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'শিবপুরে আলোচিত নার্গিস হত্যাসহ আসাদ বিভিন্ন মামলার আসামি। দলীয় মনোগ্রাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছেন তিনি।'
জানতে চাইলে শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম রাখিল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আসাদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে আবেদন দেওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। সভা হলে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে জানতে চাইব। আমরা তার সঙ্গে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেই না। কিন্তু সরকারি কর্মসূচিতে আমাদের হাত থাকে না। তাকে বহিষ্কার করা উচিৎ ছিল।'
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দল আমাকে বহিষ্কার করেনি। আমি ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছি এবং নিম্ন আদালতও আমার জামিন বহাল রেখেছেন। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার।'
যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। আমরা গত ৬ মাসে মিটিংয়ে বসতে পারিনি। তাছাড়া, বহিষ্কারের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে মিটিং করার বিষয়ও আছে।'
পুলিশের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও বহিষ্কারাদেশের সুপারিশ করার ৫ মাস পরও কেন কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এমন প্রশ্ন করা হলে জি এম তালেব বলেন, 'মামলা হচ্ছে আইনের বিষয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ আন্দাজে কিছু অনুরোধ করলেই হবে না। বহিষ্কার মামুলি বিষয় নয়। তারপরও তার বিষয়ে আমরা বিবেচনা করব।'
Comments