কুমিল্লা

জামিনের দিনই কারামুক্ত হত্যা মামলার আসামি সোহেল সিকদার

হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার দিনই কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি সোহেল সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার দিনই কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি সোহেল সিকদার। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। 

অন্যদিকে সোহেলের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। 

এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী গণমাধ্যমকে জানান, ২০ দিনের মধ্যে ৩টি বেঞ্চে জামিনের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে দুটি বেঞ্চ জামিন দেয়নি। তবে অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে জামিন নিয়েছে আসামির আইনজীবী।

হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে এত দ্রুত জেলা কারাগার থেকে আসামি মুক্তি পাওয়ার ঘটনাটিকে কুমিল্লা জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন। 

তিনি জানান, বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ অনলাইনে পাঠানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ডাকযোগে পাঠালে অন্তত ৪-৫ দিন সময় লাগার কথা। 

জানা গেছে, হাইকোর্টের ২টি বেঞ্চ থেকে জামিন মেলেনি। তবে ২০ দিনের মাথায় জামিন পেয়েছেন অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে। যেদিন জামিন পেয়েছেন সেদিনই জামিন আদেশ অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে গেছে কুমিল্লার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। জামিন আদেশ পৌঁছানোর পরই দাখিল করা হয়েছে জামিননামা। জামিননামায় স্বাক্ষরের পর তা পৌঁছায় কুমিল্লা কারাগারে। এরপরই বিকেলে মুক্তি পান আলোচিত যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল সিকদার।

অপরদিকে হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনে মুক্তি পাওয়া আসামিকে গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। 

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে জামিন আদেশ হাসিল করা হয়েছে, তাতেই আমাদের আপত্তি। এ ছাড়া যে অস্বাভাবিক দ্রুততায় হাইকোর্টের জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছানো হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে প্রতিটি জায়গায় লোক প্রস্তুত করা ছিল। যার কারণে জামিন হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে।'

চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার মসজিদ গলিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে (৪০) গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের ২ দিন পর দিনগত রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার।
 
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে সোহেল অন্যতম। যিনি তিতাস উপজেলার আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। গত ৬ মে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

এদিকে নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর হাইকোর্টে জামিন চান আসামি সোহেল সিকদার। গত ২৭ জুলাই বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর ৩ ও ১০ আগস্ট আবেদনটি কার্যতালিকায় ছিল। ১০ আগস্ট জামিন জামিন আবেদনটি খারিজের আদেশ দিতে চাইলে আসামির আইনজীবী তা 'নন প্রসিকিউশন' করে নেন।

এরপর ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন চেয়ে পুনরায় আবেদন করেন আসামির আইনজীবী। এরপর আবেদনটি শুনানির জন্য টানা তিন কার্যদিবস কার্যতালিকায় আসে। ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ইতোপূর্বে জ্যেষ্ঠ হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর এখানে পুনরায় জামিন চেয়েছেন। তখন জামিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন ওই বেঞ্চ।

২ দিনের মধ্যে দুটি বেঞ্চ থেকে জামিন না মেলায় অবকাশকালীন বেঞ্চে জামিন আবেদনটি নিয়ে যান আসামির আইনজীবী। অবকাশের প্রথম দিন রোববার বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চের আনলিস্টেড মোশন হিসেবে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য ছিল। ওই দিন শুনানি নিয়ে আসামি সোহেল সিকদারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ওই জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালত আদেশে বলেছেন, মামলার সব বিষয়াদি বিবেচনা করে আমরা আসামিকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিতে সম্মত হয়েছি। অন্তবর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

জামিন আদেশ ২ বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ওই দিনই কুমিল্লার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছে যায়। সেখানে জামিননামা দাখিল ও স্বাক্ষরের পর যায় কারাগারে। এরপরই ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মুক্তি পান আসামি সোহেল সিকদার।

রোববার সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিতাসের মনাইরকান্দি গ্রামে আসেন সোহেল সিকদার। এ সময় তার সঙ্গে দেখা করতে আওয়ামী নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় জমায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Israeli strike hits military base south of Tehran

An Israeli attack on Saturday in Iran's west killed at least five army personnel and wounded nine others, Iranian media reported

55m ago