২ পুলিশ কর্মকর্তার ‘চাঁদাবাজি-নির্যাতনের’ নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত
সাভারের আশুলিয়ায় পৃথক তিনটি ঘটনায় ৩ জনকে নির্যাতন ও তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া, এই ৩ জনের একজন তার মেয়েকে পুলিশের কথামতো তাদের হাতে তুলে না দেওয়ায় তাকে নির্যাতন এবং ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকার ভুক্তভোগী আরিফ খান জানান, গত ২৮ মে সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের এক দোকানে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সময় তাকে আটক করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান সিদ্দিকী ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বদরুল হুদা।
পুলিশ হঠাৎ হাতে হাতকড়া পড়িয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। তার বাড়ি তল্লাশি করে পাওয়া ৩০ হাজার টাকা পুলিশ নিয়ে নেয়। পরে মুক্তির জন্য তার স্ত্রী ও মেয়েকে আরও ১ লাখ টাকা জোগাড় করতে বলে এবং তাকে জোর করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী আরিফের দাবি, গাড়িতে তোলার পর পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন যে, যদি মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এর প্রতিবাদ করলে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে নির্যাতন করেন। গাড়িটি গাজীপুরের দিকে যায়। গাজীপুর থাকতেই পুলিশ কর্মকর্তারা তার মেয়েকে ফোন করে বাবার মুক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন।
অবশেষে তার পরিবার গ্রামের বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করে এনে দেওয়ার পর রাত ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে ছেড়ে দেন।
অপরদিকে, এই ২ পুলিশ কর্মকর্তা অপর একজনকে আটক করেন এবং প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেন। পরে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। তার পরিবার পুলিশকে ৭৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ভুক্তভোগী নাজমুল হোসেন মোল্লা জানান, গত ১১ জুলাই মাদক মামলায় এই ২ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে আটক করেন। সেসময় তার কাছে থাকা ২৪ হাজার টাকা পুলিশ ছিনিয়ে নেয়।
আরও বেশি টাকার জন্য এই ২ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নির্যাতন করেন। পরে তার পরিবার ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর মধ্যরাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তার ভাই ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল টাকার জন্য আমার ভাইকে জিম্মি করেন।'
'সেদিন রাতে ৪ ঘণ্টা ধরে ভাই নিখোঁজ থাকায় আমি থানায় গিয়ে বিষয়টি পরিদর্শক (অপারেশন) জামাল সিকদারকে জানাই', বলেন তিনি।
আসাদুজ্জামান মোল্লা আরও বলেন, 'অভিযুক্ত ২ পুলিশ কর্মকর্তা পরে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চান এবং এএসআই বদরুল জামাল শিকদারের সামনেই মুক্তিপণের টাকা ফেরত দেন।'
তবে জামাল সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।'
তৃতীয় ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেনও ভাদাইল এলাকার বাসিন্দা।
তিনি বলেন, তাজিবুল মীর নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করছিলেন এসআই নোমান সিদ্দিকী।
আলমগীরের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তাজিবুলের মৃত্যু হয়।
তবে ১ লাখ টাকা না দিলে আলমগীরকে সেই মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন এসআই নোমান।
অবশেষে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেন আলমগীর।
এসআই নোমান ডেইলি স্টারকে জানান, গত ২৮ মে মেয়েকে তাদের হাতে তুলে না দেওয়ায় বাবাকে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
তিনি ১১ জুলাই নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেন।
'তবে আমি জানি যে, ওই লোকের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে', বলেন এসআই নোমান।
এ ছাড়া, আলমগীরের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এসআই নোমান এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন।
একইভাবে এএসআই বদরুল হুদাও বলেন যে, এসব ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান জানান, তারা এসব ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন।
তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন এসপি।
Comments