অন্তত ২৮০ সাংবাদিক ও ২৮৭ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দায়ের করা মামলার মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামিরা আদালতের মাধ্যমে সাজা বা খালাস পেয়েছেন কিংবা মামলাটি খারিজ হয়েছে।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে এমনটিই জানা গেছে। সংস্থাটি ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই আইনের অধীনে দায়ের করা প্রতিটি মামলার লগ তৈরি কয়েছে।

তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ১ হাজার ১০৯টি মামলার রেকর্ড করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ হয়েছে ফেসবুকের কার্যক্রমের জন্য।

এসব মামলায় মোট ২ হাজার ৮৮৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে মাত্র ৫২ জন মামলা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি পেয়েছেন।

বাদী মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন ৯ জন।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ এখনও প্রায় ১ হাজার বা তার বেশি মামলার মধ্যে মাত্র তিন-চতুর্থাংশ তদন্ত করছে।

এই মামলাগুলোর মধ্যে অন্তত ৭২৫টি ২০২২ সালের আগে থেকে চলছে। অর্থাৎ, তদন্ত সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া আইনি সময়সীমার এটি স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এই গবেষণার প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, 'আইনে বলা হয়েছে, ৬০ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারেন। ৭৫ দিন পরে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এটি তখন ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে চলে যায়।'

তিনি 'কী ঘটছে: বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ব্যবহারের প্রবণতা ও নিদর্শন' শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, 'গত ৪ বছরে আমরা দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রেই নির্ধারিত ৭৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া না হলেও আসামিরা হেফাজতে রয়েছেন এবং বিচারের আগে শাস্তি পাচ্ছেন।'

প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে ৮টি করার পরও বিচারের গতি বাড়েনি বা আসামিদের দ্রুত জামিন পেতেও সাহায্য করেনি।

তিনি আরও বলেন, 'বিষয়গুলো আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, কারণ অভিযুক্তদের মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর অর্থ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলা হয়েছে এমন আসামিদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হলেও দায়ের করা সব মামলা বা অভিযুক্তদের সবাই এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নয়। এর কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মামলা ও আসামির পরিসংখ্যান দিতে চায় না।'

একে বলা হয়েছে, 'সাইবার ট্রাইব্যুনালের ডেটা থেকে শুধুমাত্র সেই মামলার তথ্য জানা যায়, যেগুলো আদালতে পৌঁছেছে এবং বিচারাধীন রয়েছে। এই সংখ্যা মোট মামলার একটি ছোট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।'

গবেষকরা আসামিদের প্রায় অর্ধেকের পেশা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আসামিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক। অন্তত ২৮৭ জন রাজনীতিবিদ এবং ২৮০ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতিবিদরা, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদরা সাংবাদিকদের নামে সবজেয়ে বেশি মামলা করেছেন।

এসব মামলার বেশিরভাগই মানহানির অভিযোগে করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানহানির অভিযোগে সরাসরি ১৪০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে মন্ত্রীদের মানহানির অভিযোগে ৬৪টি মামলা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আলী রীয়াজ বলেন, 'ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা প্রতি মাসে ৪ দশমিক ২১টি মামলা করেছে এবং প্রতিটিতে গড়ে ২ দশমিক ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সহজ কথায়, একটি আইনে প্রায় ৪ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ২ জনের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।'

এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অভিযোগকারীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তারা যথাক্রমে ৭৪ ও ৭২টি মামলা করেছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে নীরব করার জন্য একটি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।'

সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Cases Under DSA: Almost all accused kept hanging লিংকে ক্লিক করুন

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago