৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কলেজের টাকা আত্মসাতের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সাভার প্রেসক্লাবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

কলেজের ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাভার সরকারি কলেজের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন অভিযুক্তদের অভিভাবকরা।

সোমবার দুপুরে সাভার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

তাদের অভিযোগ, প্রকৃত দোষীদের বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর সাভার সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. ফজলুল হক সাভার মডেল থানায় এ মামলা করেছিলেন।

মামলার আসামিরা হলেন-কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সীমান্ত জয় পাল (২১), সমাজকর্ম বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিদোয়ানুল ইসলাম (২০), ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবীর সাহা (২১), একই বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সূচনা আক্তার মীম (২১) ও স্নাতক (পাস কোর্স) ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান আলী (২০)।

তাদের বিরুদ্ধে কম টাকায় পরীক্ষার ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাসে রশিদ জালিয়াতি করে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলায় মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশ ও কলেজের ডেটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এ্যাডি সফটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সীমান্ত জয় পাল,  রিদোয়ানুল ইসলাম, জয় পাল ও তাদের অভিভাবকরা।

এ সময় সীমান্ত জয় পালের বাবা সজীব পাল বলেন, 'এ্যাডি সফটের সার্ভিস অপারেটর গোলাম রাব্বানী ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশের কর্মকর্তা জসিম মিয়া মূলত শিক্ষার্থীদের কম টাকায় ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে আমার সন্তান তাদের মাধ্যমে টাকা জমা দেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের মামলায় আসামী না করে আমাদের সন্তানদের মামলায় আসামি করেছেন।'
 
একই দাবি করেন আরেক শিক্ষার্থী আবীর সাহার বাবা গোবিন্দ সাহা।

সীমান্ত জয় পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ্যাডি সফটের সার্ভিস অপারেটর গোলাম রাব্বানী ও  মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশের কর্মকর্তা জসিম মিয়ার দেওয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে আমি ৪ জন পরিচিত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের দেই। এরপর যখন জাল রশিদের অভিযোগ এলো, তখন টাকা ফেরত দেই। কিন্তু আমার নামে মামলা হলো।'

আবীর সাহা জানান, তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোট ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠার পর টাকাগুলো ফেরত দিয়েছেন।

রিদোয়ানুল ইসলাম জানান, তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পরে তা আবার ফেরতও দিয়েছেন।

তারা বলেন, 'আমরা দোষী নই। আমরা এ্যাডি সফটের সার্ভিস অপারেটর গোলাম রাব্বানী ও টেলিক্যাশের কর্মকর্তা জসিমের প্রলোভনে পরে শিক্ষার্থীদের উপকার করতে গিয়ে ফেঁসে গেছি।'

তবে অভিযুক্তদের এ দাবির বিষয়ে সাভার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমরুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জানতে পারি আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই একটি চক্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা নিয়ে তাদের জাল রশিদ দিচ্ছে। পরে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সংশ্লিষ্ট ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করি। জালিয়াতির সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদেরই আসামি করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা আরও জানতে পারি যে আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান টেলিক্যাশও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে রশিদ দিচ্ছে, অথচ আমাদের কলেজের ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা জমা হচ্ছে না। আবার ব্যাংকে টাকা জমা না হলেও কলেজের সফটওয়্যার সিস্টেম থেকে শিক্ষার্থীদের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে দেখাচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এ্যাডি সফটের হাতে। পরে আমরা প্রতিষ্ঠান দুটির সংশ্লিষ্টদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে টেলিক্যাশের সঙ্গে লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছি।'

অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে এ্যাডি সফটের সার্ভিস অপারেটর গোলাম রাব্বানী বলেন, 'শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের বাঁচাতে আমার নাম জড়াচ্ছেন। আমি আসলে কিছুই জানি না।'

যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশের জোনাল ম্যানেজার মো. ইসমাইল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।'

জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সজল খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। টেলিক্যাশ ও এ্যাডিসফটের কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

4h ago