মতিঝিল থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

মতিঝিল থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. হাসান ছালামকে (৪১) রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

সোমবার রারে র‌্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

আজ মঙ্গলবার র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছালামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের পাড়াগ্রামে। তার বাবার নাম মো. আব্দুস ছালাম। হাসান ছালাম যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো- জেমস সুপার শপ লিমিটেড, জেমস অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড, গুলিস্থানে জামিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মালিবাগ টুইন টাওয়ারে এশিয়ান স্কাই শপ, বারিধারায় জেমস গ্রুপ, জেমস অ্যাগ্রোফুড লিমিটেড, জেমস গ্যালারি লিমিটেড, জেমস রিয়েল অ্যাস্টেট লিমিটেড। 

আরও বলা হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় সে একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। ফলে যখন সে দেখতে পায় ভালো মুনাফা করতে পারে তখন আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য তৎপরতা চালায়। এসময় সে তার ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেয়। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে সে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে সে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক প্রদান করলেও নির্ধারিত তারিখে তার একাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায় না এবং ব্যাংক কর্তৃক চেক ডিজঅনার করা হয়। এমনিভাবে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন এবং টাকা ফেরত চাইলে পাওনাদারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এর ফলে পাওনাদারগণ তার বিরুদ্ধে আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করে। 

এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। নিদির্ষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো পরিশোধ না করায় এ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। এতেও কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপের দায়ে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত কর্তৃক তাকে বারবার টাকার বিষয়ে মীমাংসা আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হলেও সে কখনই আদালতে হাজির হয়নি। এ ছাড়া বিজ্ঞ আদালতে চলমান মামলা গুলোর শুনানিতেও সে কখনো হাজিরা দেয়নি। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য সে তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গাঁ ঢাকা দেয় এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

গ্রেপ্তার আসামি ২০০৮ সালে কুমিল্লায় মাসিক হারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। এখানে এসে বসুন্ধরা সিটিতে প্রথমে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে জেমস সুপারশপ নামে পাথরের ব্যবসা শুরু করে। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে সে বসুন্ধরা সিটিতে আরও ৪টি দোকান ভাড়া করে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে। সে বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাটের ব্যবসায় এসকল অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকে। 
এ ছাড়া তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজি করে ও জমি বন্ধক রেখে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে প্রথম কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা চলতে থাকে এবং ২০২০ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তখন থেকে সে রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি ও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। 

আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জেমস সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। পরে গিয়াস উদ্দিন তার কাছে প্রতি মাসে লাভের টাকা চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে থাকে। গিয়াস উদ্দিন সঠিকভাবে লাভের টাকা না পাওয়ায় নিরূপায় হয়ে তার মূলধন ফেরত চায়। তখন আসামি হাসান ছালাম পাওনাদার গিয়াস উদ্দিনকে তার মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি প্রদান করে এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন নিরূপায় হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় আসামির নামে ২০২২ সালে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন এবং রায়ের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ কর্তৃক তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
 

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

59m ago