যেভাবে ৪০০ টাকার বই ৪ হাজার, ২০০ টাকার পর্দা ১ হাজার

লালমনিরহাট নার্সিং কলেজ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বইয়ের মূল্য ৪০০ টাকা হলেও ভাউচারে দেখানো হয়েছে ৪ হাজার টাকা। দরজা ও জানালার প্রতিটি পর্দা বাজারে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও ভাউচারে দেখানো হয়েছে ১ হাজার টাকা।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা ভাউচার এবং সংশ্লিষ্ট দোকান যাচাই করে দামের এই পার্থক্য দেখা গেছে।

ভাউচারে ৩০ টাকা দামের ডাস্টার ও স্কেলের মূল্য দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ১২০ টাকা ও ১৫০ টাকা। অতিথি শিক্ষকের নামে ভুয়া ভাউচার করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

একইভাবে ক্যাবল, ওজন মাপার মেশিন, ডিএনসি সেট, সার্জিক্যাল ও মনোহারী পণ্য কিনতে কয়েকগুণ বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ ছাহেবা বেগম ও প্রধান অফিস সহকারী আরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত এই সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

জিনিসপত্র কেনার জন্য ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কলেজে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের 'নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এডুকেশন সার্ভিস এনএমইএ' খাতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

নার্সিং কলেজটির জন্য জিনিসপত্র কয়ের নথি ও ভাউচার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভাউচার ভুয়া এবং একই ব্যক্তি এসব ভাউচার লিখেছেন। ভাউচারে উল্লেখিত পণ্যের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে ২-৪ গুণ বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য ১০ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই কলেজের প্রধান অফিস সহকারী আরিফ আহমেদ নিজেই এসব ভাউচার লিখেছেন। কলেজ অধ্যক্ষ ছাহেবা বেগমের দিক নির্দেশনায় আরিফ আহমেদ এসব ভুয়া ভাউচার তৈরি করেছেন এবং পণ্যের অধিকমূল্য ভাউচারে উল্লেখ করেছেন।

লালমনিরহাট শহরের উত্তরা সিনেমা রোডে কম্পিউটার গেজেট নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার, প্রিন্টার, মনিটর ও কম্পিউটারের মালামাল ক্রয়ের ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পণ্যই কেনা হয়নি।

ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মনির হোসেন জানান, তিনি নার্সিং কলেজে কোনো পণ্য বিক্রি করেননি। তার দোকানের ক্যাশমেমো কীভাবে তারা সংগ্রহ করেছেন এটা তিনি জানেন না।

তিনি বলেন, 'নার্সিং কলেজ থেকে আরিফ আহমেদ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি কমদামে নিম্নমানের পণ্য কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, আমি নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করি না। তাই তার কাছে কোনো পণ্য বিক্রি করা হয়নি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট শহরে একটি বিপণির দোকানের ম্যানেজার ডেইলি স্টারকে জানান, নার্সিং কলেজ থেকে আরিফ আহমেদ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাদের কাছ থেকে কিছু পণ্য কিনেছেন। কিন্তু, তিনি লেখা ক্যাশমেমো না নিয়ে ফাঁকা কয়েকটি ক্যাশমেমো নিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছেন, এই বিপণিতে কিছু পণ্য বিক্রি করা না হলেও, ক্যাশমেমোতে সেই পণ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

নার্সিং কলেজের প্রধান অফিস সহকারী আরিফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, বরাদ্দকৃত অর্থে তারা সঠিকদরে সঠিক পণ্য কিনেছেন। তারা বাজারমূল্যে পণ্য কিনেছেন।

অধিকাংশ ভাউচার নিজে কেন লিখেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে আরিফ আহমেদ বলেন, 'এ বিষয়ে যদি অডিট আপত্তি হয় তাহলে সেটা আমরা দেখবো। আপনাকে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কলেজের অধ্যক্ষ আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি সেভাবেই কাজ করেছি।'

নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ছাহেবা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগটি সঠিক নয়। প্রধান সহকারী আরিফ আহমেদের মাধ্যমে সব ধরনের পণ্য বাজারদরে কেনা হয়েছে।'

আরিফ আহমেদ নিজেই ভাউচার লিখেছেন এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, 'এ বিষয়ে আমি জানি না।' 

Comments

The Daily Star  | English

BB tightens loan classification rules to meet IMF conditions

Payment failure for three months or 90 days after the due date will now lead to classification of loans regardless of type, according to new rules announced by the central bank yesterday, aligning with international best practices prescribed by the International Monetary Fund (IMF).

2h ago