নলকূপ অপারেটরদের হাতে জিম্মি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক
রাজশাহীর সাঁওতাল কৃষক মুকুল সরেন সেচের একটি গভীর নলকূপের ঘরে দাঁড়িয়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি গত ৯ এপ্রিলের। একই গভীর নলকূপের সামনে গত বছর আত্মহত্যা করেছিলেন আরও দুই কৃষক। তারাও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। এই তিন কৃষকই বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু এলাকায় শোষণমূলক সেচের পানি বণ্টন ব্যবস্থার শিকার।
ভূগর্ভস্থ পানি দ্রুত নিঃশেষ হতে থাকায় বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন বরেন্দ্র অঞ্চল। কৃষি কাজের জন্য পানির চাহিদার কারণে সেচ নলকূপগুলো হয়ে উঠেছে কৃষক শোষণের হাতিয়ার। এই কৃষকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়ায় শোষণের ফলে তারা আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। আর এই কাজগুলোর পেছনে রয়েছেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা।
গত বছর অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি সেচের পানি না পেয়ে সেচ নলকূপের ঘরের সামনেই কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ এবং মামলার নথি অনুসারে, স্থানীয় গভীর নলকূপ অপারেটর তাদের জমিতে সেচের পানি দেবেন না বলে জানালে ওই দুই কৃষক কীটনাশক পান করেন।
জনরোষে পরে অভিযুক্ত অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। এ ঘটনার পর বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের তত্ত্বাবধানকারী সরকারি সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সাখাওয়াতের পরিবর্তে অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব দেয় হাসেম আলী বাবুকে। কিন্তু তাতেও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত অপারেটরদের অত্যাচার থেকে কৃষকরা রেহাই পাননি।
মুকুল সরেন রাজশাহীর ইশ্বরীপুর গ্রামের গভীর নলকূপের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এই একই জায়গায় আত্মহত্যা করেন অভিনাথ ও রবি মার্ডি। মুকুলকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু অভিনাথ ও রবি মার্ডির ভাগ্য এতটা ভালো ছিল না।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে মুকুল বলেন, 'আমার জমিতে আট দিন ধরে সেচের পানি দেওয়া হয়নি। সেচের পানি না পেয়েই আমি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।'
তিনি বলেন, 'আট দিন ঘুরিয়ে নলকূপ অপারেটর একদিন আমাকে ফোন করে পানি নিতে ডাকেন। এ কথা শুনে ভোর ৫টার আগেই সেখানে উপস্থিত হই। কিন্তু তিনি আমাকে বিকেল পর্যন্ত বসিয়ে রাখলেন, কিন্তু পানি দিলেন না। অন্যদিনগুলোর মতো বললেন, পরে ফোন করতে। আমার খেত শুকিয়ে যাচ্ছিল। তার এই কথা শুনে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। নলকূপের ঘরেই কীটনাশক ছিল, খেয়ে নিলাম।'
শাঁখের করাত
সরকারি পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র আট মিটার নীচে ছিল। কৃষকরা সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠ ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পর ১৯৯০-এর দশক থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। এতে করে কৃষক বছরে তিনবার ফসল চাষ করতে সক্ষম হন এবং উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলো শস্য উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দেখাদেখি সচ্ছল কৃষক ও ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এই অঞ্চলে নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে শুরু করেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১২ সাল থেকে নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ করে দেয়। তারা ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়। কিন্তু, অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এর প্রভাব পরে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর।
পরিহাসের বিষয় হলো, বরেন্দ্র অঞ্চল প্রচুর পরিমাণ ধান ও শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখলেও এই ফসলের উৎপাদনের জন্যই এই অঞ্চলে গুরুতর পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
ওয়ারপোর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় কমপক্ষে ১৮ মিটার। এই তিনটি জেলা ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক এক হিসেবে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের প্রায় ৭০ শতাংশ—১ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ কোটি লিটার পানি—বেসরকারি গভীর নলকূপ দিয়ে তোলা হয়। ঢাকা শহরে প্রতিদিনের ২৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা হিসেব করলে, বরেন্দ্র অঞ্চলের বেসরকারি গভীর নলকূপগুলোর উত্তোলন করা পানি দিয়ে ঢাকা শহরের প্রায় দেড় বছরে পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব।
এই বেসরকারি নলকূপ অপারেটররা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত ব্যক্তিদের যোগসাজশে এমন একটি সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, যার মাধ্যমে দরিদ্র কৃষকদের শোষণ করা হচ্ছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহীর সভাপতি বিমল রাজোয়ার বলেন, 'যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন এই দুষ্টচক্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে অপারেটর ছিল এই দুই দলের। ২০০৯ সালে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের লোকেরা এখন এগুলো চালাচ্ছেন।'
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদও বিষয়টি স্বীকার করেন।
ডেইলি স্টারকে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'কৃষকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা কিছু অপারেটরকে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।'
ভালো উদ্যোগের অসৎ ব্যবহার
এই অঞ্চলের পানির ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে, বরেন্দ্র চাষিরা ১৯৯২ সালে শুরু থেকেই বিএমডিএর ব্যবস্থাপনায় নামমাত্র অর্থের বিপরীতে সেচের পানি পেয়ে আসছে, যা এখন প্রতি ঘণ্টায় ৮৫ থেকে ১২৫ টাকা।
বিএমডিএর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০০৫ সালে কর্তৃপক্ষ পানি বাঁচাতে এবং বেসরকারি টিউবওয়েল অপারেটরদের শোষণ বন্ধ করতে কাগজের কুপন সিস্টেমের পরিবর্তে প্রি-পেইড মিটার সিস্টেম চালু করে।
বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ১৬ হাজার সরকারি এবং ৫৬ হাজার ব্যক্তিচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এর অর্ধেকের বেশি টিউবওয়েল রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে।
'স্কিম এলাকা' নামে পরিচিত একটি নির্দিষ্ট এলাকার গভীর নলকূপ পরিচালনার জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কৃষকদের একটি গ্রুপ তৈরি করে এবং ১০ শতাংশ কমিশনে অপারেটর নিয়োগ করে। ২০১৪ সাল থেকে কৃষকদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়, যেগুলো তারা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএমডিএর অফিস বা ডিলারদের কাছ থেকে রিচার্জ করতে পারেন। এই কার্ড ব্যবহার করে তারা সরকার নির্ধারিত চার্জের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সেচের পানি নিতে পারেন।
বিএমডিএর নিয়ম অনুযায়ী, নলকূপ অপারেটরদের অবশ্যই 'আগে আসলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে স্মার্ট কার্ড ব্যবহারকারী কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেচের পানি সরবরাহ করতে হবে এবং কখনোই স্কিম এলাকার বাইরে পানি সরবরাহ করতে পারবেন না।
কিন্তু, মুকুল সরেনসহ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু ও বর্ষাপাড়া গ্রামের অন্তত ১৭ সাঁওতাল কৃষক জানান, অপারেটররা কোনো নিয়ম মানতে রাজি নন। তারা দরিদ্র কৃষকদের সেচ কার্ড ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যে স্কিম এলাকার বাইরে ধনী কৃষকদের কাছে পানি বিক্রি করেন।
কিছু ক্ষেত্রে অপারেটররা কৃষকদের কাছ থেকে স্মার্ট কার্ডগুলো নিয়ে নেন এবং সরকার নির্ধারিত হারের ৬ থেকে ২৮ গুণ বেশি দামে পানি নিতে সরাসরি চুক্তি করতে বলেন কৃষকদের। কৃষকরা এই দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে দেরি করে পানি সরবরাহ করেন, এমনকি অনেককে পানি দেওয়াও হয় না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
বর্ষাপাড়া গ্রামের গোপাল সরেন বলেন, 'আমরা কার্ড দিয়ে সেচের পানি নিতে চাইলে অপারেটর আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি করান। অনেক সময় গভীর রাতে পানি দেন। তখন পানির জন্য আমাদেরকে সারা রাত জেগে থাকতে হয়।'
বিএমডিএর ২০০৮ সালের সেচ নীতি অনুযায়ী, সেচের পানির জন্য নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ এবং এমনটি হলে অপারেটরদের ডিলারশিপ বাতিল হতে পারে।
বিজয়নগর গ্রামের কৃষক আবু বকর বলেন, 'যারা বেশি টাকা দিতে পারে, তারা বেশি পানি পায়। এটা তাদের ব্যবসায়িক মডেল।'
রাজশাহীর তানোর উপজেলার শংকরপুর ও মহর গ্রামের অন্তত ৪০ জন কৃষক ডেইলি স্টারকে বলেন, হয়রানি এড়াতে তারা প্রতি বিঘায় অপারেটরদেরকে দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছেন, যাতে সময়মতো সেচের পানি পান।
ইশ্বরীপুর গ্রামের গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করে ১২৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করা ১৪ জনের মতো কৃষক জানান, গত মৌসুমে তারা বিঘা প্রতি অন্তত ৮০০ টাকা দিয়েছেন সেচের পানির জন্য। যদিও তাদের এসব জমি এই নলকূপের 'স্কিম এলাকা'র ভেতরে ছিল না।
ইশ্বরীপুর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু জানান, তিনি 'মানবিক কারণে' স্কিম এলাকার বাইরে পানি সরবরাহ করেন। 'যখন একজন কৃষকের পানির প্রয়োজন হয়, তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। নিয়ম ভেঙে হলেও তাকে পানি দিতে হয়।'
তানোরের শংকরপুর ও মোহর গ্রামের ১৪ জন অপারেটরই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে ১২ জন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। তাদের একজন অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
কৃষকরা জানান, ১৪ অপারেটরের মধ্যে মাত্র একজন স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে সেচের পানি দেন।
নিজেদের নির্ধারিত হারে সেচের পানি দেওয়া এক অপারেটর মো. আসাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকরা আমার রেট অনুযায়ী সেচ নিতে রাজি হন। কারণ, এই রেটে পানি নিলে তাদের আর পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না এবং অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে হয় না।'
আসাদুজ্জামান বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের তালন্দ ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক।
বাকি ১৩ জন অপারেটরের নাম ও দলীয় পরিচয় ডেইলি স্টারের কাছে রয়েছে।
বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক জানান, কৃষকদের কাছে সেচের পানির জন্য বিঘা প্রতি তিন হাজার টাকা দাবি করায় তারা গত মাসে এক অপারেটরকে অপসারণ করেছেন।
তিনি বলেন, 'কিন্তু অনেক সময় অপারেটরদের রাজনৈতিক যোগসূত্রের কারণে আমাদের হস্তক্ষেপে খুব বেশি কাজ হয় না।'
তিনি জানান, গত বছর এক অপারেটরকে অপসারণের পর তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে যান। যদিও মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত বিএমডিএর সিদ্ধান্তে সমর্থন দেয়।
যেন 'সামন্তবাদ' ফিরেছে
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অত্যধিক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এই অঞ্চলের পানির সংকট কৃষকদের সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে৷
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, শুধুমাত্র ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমপক্ষে দুই ফুট কমেছে, যা স্বাভাবিক বার্ষিক হ্রাসের দ্বিগুণ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলা, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এবং নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা অন্যতম।
অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, 'স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও গভীর নলকূপের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে সামন্তবাদ আবার ফিরে এসেছে, যার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা আরও ক্ষমতাবান হয়েছে এবং বৈষম্য আরও পাকাপোক্ত হয়েছে।'
রাজশাহীভিত্তিক এনজিও সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ভলান্টারি অর্গানাইজেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আরিফ ইথার এই সংকটের জন্য দায়ী করেন কর্তৃপক্ষের শিথিল নজরদারিকে।
তিনি বলেন, 'জাতিগত সংখ্যালঘু কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ, তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকেন।'
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ভালো ফলনের জন্য মার্চ থেকে মে মাসের প্রথম দিকে ধান ক্ষেতে সময়মতো ও পর্যাপ্ত সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কৃষকদের পানি না দেওয়া হলে ফলন ও কৃষক উভয়ই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
কৃষকের সেচ স্মার্ট কার্ডের পিছনে লেখা একটি স্লোগান বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির গুরুত্ব সত্যিকার অর্থেই তুলে ধরেছে—'বরেন্দ্র সেই ভূমি যেখানে পানিই জীবন'।
সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি তাদের জীবন দিয়ে এ কথা প্রমাণ করেছেন, আর মুকুল সরেন তার জীবনের শিক্ষা পেয়েছেন।
জগপুর গ্রামের কৃষক মাজেদ আলি বলেন, 'সেচ নলকূপগুলো অপারেটরদের জন্য তেলের খনি। কিন্তু আমাদের মতো কৃষক যাদের পানি প্রয়োজন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।'
Comments