তিস্তার বালুচরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা কালোমাটির চরে গাজর তুলছেন কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষের উদ্যোগ সফল হয়েছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, গাজরের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। প্রত্যাশিত দামও পাচ্ছেন তারা।

কৃষক সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় তিস্তার অন্তত ৩০টি চরে এই বছর ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৩০ মেট্রিক টন গাজর পাওয়া গেছে।

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা কালোমাটির চরে গাজর তুলছেন কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

যারা চরের জমি লিজ নিয়ে এবং শ্রমিক নিয়োগ করেছেন প্রতি হেক্টরে তাদের খরচ হয়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। অন্য দিকে যারা নিজেরা শ্রম দিয়ে গাজর উৎপাদন করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। কৃষকরা প্রতি কেজি গাজর ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

তিস্তার চরের সাড়ে ৮ একর জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ করেছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর কালোমাটির মাদ্রাসাশিক্ষক আইয়ুব আলী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শ্রমিক নিয়োগ করায় তার খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। তবে দাম প্রত্যাশিত পেয়েছেন।

আইয়ুব আলী বলেন, 'গাজর চাষে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। ৮ একর জমি থেকে আমি ১ লাখ ১০ হাজার কেজি গাজর পেয়েছি। প্রতি কেজি গাজর ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে।'

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা কালোমাটির চরে গাজর তুলছেন কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই চরের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, 'আমি ১২ হাজার টাকা খরচ করে ১ বিঘা জমিতে গাজর লাগিয়েছিলাম। ৩ হাজার ৭০০ কেজি গাজর পেয়েছি। বিক্রি করেছি ৪৫ হাজার টাকায়।'

তিনি আরও বলেন, 'বালুচরে আমরা আগে থেকেই গাজর চাষ করতাম, তবে শুধু নিজেদের জন্য।'

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার চর ইচলির কৃষক মজিবর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, ৫ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা। আর গাজর বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা কালোমাটির চরে গাজর তুলছেন কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষের পদ্ধতি জানা ছিল না। এ বছর কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ করে সফলতা পেয়েছি,' যোগ করেন বলেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর তিস্তার চরে উৎপাদিত গাজর দিয়ে স্থানীয় সবজি বাজারগুলো ভরে গেছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে গাজর চাষের পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। কৃষকদের সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তিস্তার চরে বাণিজ্যিকভাবে গাজরের চাষে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt mulling incorporating ‘three zero’ theory into SDG

The government is considering incorporating the "three zero" theory of Chief Adviser Professor Muhammad Yunus into Sustainable Development Goals (SDGs)

1h ago