২৭ বছর পর থাইল্যান্ডে ফিরলেন রাজপুত্র, হতে পারেন পরবর্তী রাজা

রাজা ভাজিরালংকর্নের ৪ সন্তান নিভৃতচারী হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে ভাচারাইসর্ন ভিভাচারাওংসে অন্যতম। এতদিন পর্যন্ত সবার ধারণা ছিল, তাদের রাজকীয় মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সিংহাসনের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের তালিকাতেও তাদের স্থান নেই।
থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মেঝ ছেলে ভাচারাইসর্ন প্রায় ২৭ বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন। ছবি: রয়টার্স
থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মেঝ ছেলে ভাচারাইসর্ন প্রায় ২৭ বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন। ছবি: রয়টার্স

থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মেঝ ছেলে ভাচারাইসর্ন প্রায় ২৭ বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন। তিনি রাজধানী ব্যাংককে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি পরিচর্যাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

আজ বুধবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভাচারাইসর্ন ভিভাচারাওংসের এই সফর অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর।

নতুন সরকার গঠন নিয়ে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গন ইতোমধ্যে উত্তপ্ত রয়েছে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪২ বছর বয়সী, দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা রাজপরিবারের এই হাস্যমুখী সদস্যের অপ্রত্যাশিত আগমন সবার নজর কেড়েছে।

রাজা ভাজিরালংকর্নের ৪ সন্তান নিভৃতচারী হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে ভাচারাইসর্ন ভিভাচারাওংসে অন্যতম। এতদিন পর্যন্ত সবার ধারণা ছিল, তাদের রাজকীয় মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং সিংহাসনের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের তালিকাতেও তাদের স্থান নেই।

তবে গত ডিসেম্বরে রাজার বড় সন্তান প্রিন্সেস বজ্রকিতিয়াভা নারেন্দিরা দেবিয়াভাতি (৪৪) হঠাত অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে গেলে পালটে যায় পরিস্থিতি। দেবিয়াভাতিকে সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে ধরা হচ্ছিল। তবে রাজকন্যার কোমা থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজার নিভৃতচারী ৪ সন্তানের একজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজকীয় পদের জন্য প্রস্তুত করার কথা আলোচনায় রয়েছে।

ভাচারাইসর্নের অঘোষিত সফরে এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটতে পারে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা। তবে রাজপ্রাসাদ থেকে এ বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

ভাচারাইসর্ন রাজা ভাজিরালংকর্নের দ্বিতীয় স্ত্রী সুজারিনে ভিভাচারাওংসের ৪ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। সুজারিনে এক সময় অভিনেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ভাজিরালংকর্ন যখন যুবরাজ, তখন সুজারিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তাঁর। ফলে ভাচারাইসর্ন, তার ৩ ভাই, ১ বোন ও মা রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের রাজপরিবারের খেতাব। পরে বিদেশে পাড়ি জমান তারা।

এর আগে ৪ ছেলে রাজার সঙ্গে আবারো সম্পর্ক স্থাপনের আবেদন জানিয়ে চিঠি প্রকাশ করেছেন এবং দেশের ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে এতে কোনো ফল হয়নি।

ভাচারাইসর্ন ব্যাংককে ৩ দিন ধরে পর্যটকের মতো ঘোরাঘুরি করেছেন। তিনি থাই খাবার খেয়েছেন, মন্দিরে গেছেন এবং টুকটুক এ চড়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, থাইল্যান্ডে ফিরে আসা তার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো।

তবে তিনি কিছু আনুষ্ঠানিক দায়িত্বও পালন করেন। তিনি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, বৌদ্ধ সংঘের প্রধান ধর্মগুরুর সঙ্গে দেখা করেন, যাকে তার পিতা এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি রাজপ্রাসাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। অনেক থাই নাগরিক এ বিষয়গুলোকে 'রাজকীয় দায়িত্ব' পালনের সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।

ভাচারাইসর্ন প্রায় ২৭ বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে ব্যাংককে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি পরিচর্যাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। ছবি: রয়টার্স
ভাচারাইসর্ন প্রায় ২৭ বছর পর নিজের জন্মভূমিতে ফিরে ব্যাংককে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি পরিচর্যাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে রাজার ৪ সন্তানের মধ্যে তিনি সবচেয়ে দৃশ্যমান ও সক্রিয়। তিনি সেখানে থাই সম্প্রদায়ের উচ্চকণ্ঠ সদস্য ও থাই রাজপরিবারের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

থাইল্যান্ডে রাজপরিবারে উত্তরাধিকারের বিষয়টি রাজা নিজেই নির্ধারণ করেন। এখনো রাজা ভাজিরালংকর্ন তার উত্তরাধিকারীর নাম ঘোষণা করেননি। রাজকন্যা দেবিয়াভাতি এই দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। রাজার সবচেয়ে ছোট ছেলে রাজপুত্র দিপংকর্ন (১৮) বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। ধারণা করা হয়েছিল, রাজার মৃত্যুর পর তার কন্যা দিপংকর্নের  প্রতিনিধি হিসেবে অথবা রানী হিসেবে রাজ্যশাসন করবেন।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সফল ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ভাচারাইসর্নকে এখন অনেকে ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে দেখতে চাইছেন।

এ বিষয়ে রাজা ভাজিরালংকর্নের অভিমত জানা যায়নি।

আগামী দিনগুলোতে ভাচারাইসর্নের সফরের মূল কারণটি জানা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago