পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীসহ নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস, সাইবার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

বাম থেকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, অর্থমন্ত্রী মিহতাহ ইসমাইল ও পিএমএল-এন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়াম নওয়াজ। ছবি: এপি/এএফপি
বাম থেকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, অর্থমন্ত্রী মিহতাহ ইসমাইল ও পিএমএল-এন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়াম নওয়াজ। ছবি: এপি/এএফপি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের (পিএমও) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 'হ্যাক' হয়েছে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েকদিনে ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের ফোনালাপের বেশ কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে।

আজ রোববার পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও একজন সরকারি কর্মকর্তার ফোনালাপের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ২ মিনিট দীর্ঘ ফোনকলটি শেয়ার করেন। কলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, 'মারিয়াম নওয়াজ তার জামাতা রাহিলকে ভারত থেকে কারখানার জন্য সরঞ্জাম আমদানিতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।'

আজ ফাঁস হওয়া ক্লিপগুলো পিটিআইর একাধিক নেতা টুইটারে শেয়ার করেছেন। এই ক্লিপগুলোতে তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল ও পিটিআই আইনপ্রণেতাদের জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে কথোপকথন শোনা যায়। 

প্রথম ক্লিপে পিএমএল-এন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়াম ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে কথা বলেন।

মারিয়াম নওয়াজ এর আগে জনসম্মুখে পেট্রোল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি জানান, তার দল সরকারি জোটের অংশ হলেও, এ সিদ্ধান্তে তার কোনো ভূমিকা নেই।

ফোন কলে মারিয়ামকে বলতে শোনা যায়, 'তিনি কোনো কিছুর দায়িত্ব নেন না। টিভিতে বিচিত্র সব কথা বলেন, যার জন্য মানুষ তাকে নিয়ে মজা করে। তিনি জানেন না তিনি কী করছেন।'

'নিশ্চিতভাবেই তিনি সহজ সমাধানের দিকে গেছেন', প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন।

এরপর মারিয়াম সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পিএমএল-এন দলের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ইসহাক দারের দেশে ফিরে আসার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং শেহবাজকে 'চাচা' সম্বোধন করে আবারও বলেন, 'তিনি (মিফতাহ) জানেন না তিনি কী করছেন।'

সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। ছবি: রয়টার্স
সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। ছবি: রয়টার্স

উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার পাকিস্তানে ফিরছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে অর্থনীতি বিষয়ে সহায়তা দেবেন।

ফাঁস হওয়া ২য় ক্লিপে শেহবাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, আইনমন্ত্রী আজম তারার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও সাবেক স্পিকার আয়াজ সাদিকের কণ্ঠ শোনা যায়। তারা সবাই পিটিআই দলের আইনপ্রণেতাদের সংসদের নিম্নকক্ষ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করেন।

সরকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পিটিআই নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

পিটিআই নেতা ফাওয়াদ জানান, ডার্ক ওয়েবে যেভাবে পিএমও'র তথ্য বেচাকেনা হচ্ছিল, তাতে দেশের সাইবার নিরাপত্তার করুণ দশা প্রকাশ পেয়েছে।

'এটা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, বিশেষত ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি)। রাজনৈতিক বিষয়গুলো বাদ দিলেও, নিরাপত্তা ও বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এখন সবার হাতে', যোগ করেন তিনি।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি। ছবি: রয়টার্স
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি। ছবি: রয়টার্স

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মন্ত্রী তাইমুর খান ঝাগরা জানান, 'পিএমও থেকে ৮ গিগাবাইট তথ্য হ্যাকিং ও ফাঁস হয়েছে।'

তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'কোন আইনের আওতায় এবং কে রাজনৈতিক নেতাদের ফোনালাপ রেকর্ড করছে? এবং কে এই তথ্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে?'

সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি জানান, একটি ফোনকলে ইশাক দারকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ফাঁস হওয়া অডিওগুলো থেকে নিশ্চিতভাবেই উন্মোচিত হয়েছে যে অভিযুক্ত আসামী নওয়াজ শরীফ ও তার জামিনে মুক্ত কন্যা সরকারের ওপর কী পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করছেন। এই আমদানিকৃত সরকার একটি অপরাধীদের আড্ডাখানা।'

তিনি আরও জানান, 'প্রকৃত সমস্যা' হচ্ছে কে বা কারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা তার বাড়িতে আড়িপাতা যন্ত্র বসালো, তা খুঁজে বের করা।

'এসব অবস্থানে আড়িপাতা যন্ত্র বসানো গেছে দেখেই হ্যাকিং সম্ভব হয়েছে। কে এর জন্য দায়ী এবং কোথা থেকে এ বিষয়ে নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত এসেছে? এই প্রশ্নগুলোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Police struggling to get back on their feet

In the beginning of the year, the police were accused of being a tool implementing “Sheikh Hasina’s engineered election”, then they became the heavy hand attempting to crush the mass uprising. Days after Hasina’s ouster, the force appeared to have disintegrated. And now, they are trying to gain public trust in combating crime.

10h ago