প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট

গত ২০ মার্চ শুনানি শেষ হয়। কিন্তু আদালত রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল। আজ সোমবার সেই বহু প্রতীক্ষিত রায় ঘোষণা হয়।
গত প্রায় তিন বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ছবি: ডয়চে ভেলে
গত প্রায় তিন বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ছবি: ডয়চে ভেলে

ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দফার ভোট শেষ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট।

গত কয়েক বছরে এই মামলা রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা।

বস্তুত রায় বের হওয়ার পরেই রাজ্যের সাবেক বিচারপতি এবং বর্তমানে তমলুক আসনে বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রায়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। অভিজিতের কথায়, 'মুখ্যমন্ত্রী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে জোচ্চুরি করেছেন। তার পদত্যাগ করা উচিত।'

সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করছে। সব মিলিয়ে ৩৫০টি মামলা দায়ের হয়েছিল এই ঘটনায়। রায় ঘোষণার শুরুতেই আদালত জানিয়েছে, প্রতিটি মামলাই আদালতে গ্রহণযোগ্য। এরপর বলা হয়, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল করা হচ্ছে। এর ফলে বাতিল হচ্ছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের সুদ-সহ বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই অর্থ ফেরত দিতে হবে। বার্ষিক সুদের হার ১২ শতাংশ হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত।

উল্লেখ্য, এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার নির্দেশে বহু নিয়োগ বাতিল হয়েছিল। রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী জামিন পাননি। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তিনি। যা নিয়ে নানা স্তরে বিতর্ক হয়েছে।

সোমবার সেই বহুল আলোচিত নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে মামলাটি চলেছিল হাইকোর্টে।

গত ২০ মার্চ শুনানি শেষ হয়। কিন্তু আদালত রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল। আজ সোমবার সেই বহু প্রতীক্ষিত রায় ঘোষণা হয়।

আদালত জানিয়েছে, মানবিক কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসকে। কিন্তু বাকি প্রায় ২৬ হাজার মানুষের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে। অপর দিকে এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র এসএসসি'র ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সব মিলিয়ে ৩৫০টি মামলার শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে গেছিল এমন পাঁচ হাজার মানুষের মামলাও আছে। সুপ্রিম কোর্ট তাদের রক্ষাকবচ দিলেও ছয়মাসের মধ্যে মামলা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

গত প্রায় তিন বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের দাবি, পরীক্ষায় পাশ করা সত্ত্বেও তারা চাকরি পাননি। নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী নানাভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সোমবার আদালতের রায়ে এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ থমকে গেছে। একইসঙ্গে যারা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের নিয়োগ বৈধ কি না, সে বিষয়েও রায় জানিয়ে দিল আদালত।

এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপিপ্রার্থী অভিজিৎ তার মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী দিনে ভোট প্রচারে এই বিষয়টি সামনের সারিতে আসবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Awami League journalist couple arrested

The indiscriminate arrests and murder charges

Reckless and unsubstantiated use of murder charges will only make a farce of the law, not bring justice to those who deserve it.

10h ago