চীনে নির্মিত উড়োজাহাজ সি৯১৯, ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি অর্ডার
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কোমাক) তাদের সি৯১৯ মডেলের ১০০টি উড়োজাহাজের নতুন অর্ডার পেয়েছে। প্রথম সফল বাণিজ্যিক ফ্লাইটের পরই তারা এ তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
চীনের মূল উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার চায়নার এই অর্ডারের পর কোমাকের বহু বছরের ব্যবসা নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক মহলে উড্ডয়ন খাতে বোয়িং-এয়ারবাসের আধিপত্য অবসানের আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
এ মাসের শুরু পর্যন্ত সি৯১৯ এর একমাত্র ক্রেতা ছিল চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। এয়ার চায়নার সাম্প্রতিক অর্ডারের ফলে কোমাক এখন আরও বলিষ্ঠ অবস্থানে পৌঁছে গেছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
কোমাক এর আগে জানিয়েছিল, তারা এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি উড়োজাহাজের অর্ডার পেয়েছে। এই অর্ডারের বেশিরভাগই এসেছে চীনা এয়ারলাইনস থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এয়ার চায়নার কাছে উড়োজাহাজ বিক্রি নিশ্চিত করায় কোমাকের জন্য আরও ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হতে পারে।
বেইজিংভিত্তিক উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার চায়না ৬০টি আন্তর্জাতিকসহ মোট ১৯৬টি গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
অপরদিকে উড়োজাহাজের নিরাপত্তা বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত এই খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বোয়িং। সাম্প্রতিক কিছু দুর্ঘটনায় বোয়িংয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে সম্প্রতি মার্কিন উড্ডয়ন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের উৎপাদন সম্প্রসারণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সি৯১৯ উড়োজাহাজ অনেকটাই বোয়িংয়ের এই মডেলের আদলে তৈরি। বিশ্লেষকদের মত, বোয়িংয়ের শূন্যস্থান পূরণে সফল হতে পারে চীনের প্রতিষ্ঠানটি।
অস্ট্রেলিয়ার উড্ডয়ন খাতের বিশ্লেষক হিউ রিচি বলেন, 'আমার মতে সি৯১৯ হচ্ছে বড় একটি উন্নয়ন, যা শুধু চীনের জন্যই নয়। সার্বিকভাবে উড্ডয়ন খাতে এই মডেলটি নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা করে দিয়েছে। ৭৩৭ ও বোয়িং থেকে মানুষ সরে আসতে চাইছে।'
বোয়িং ক্রেতাদের জানিয়েছে, অর্ডার অনুযায়ী উড়োজাহাজ সরবরাহে দেরি হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে এখন সব নির্মাণাধীন বা ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত উড়োজাহাজের নতুন করে নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
অপরদিকে এই খাতের অপর বড় প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসও সরবরাহ শৃঙ্খলের জটিলতায় ভুগছে। এসব কারণে তারা বেশ কিছু অর্ডারের ডেলিভারি বিলম্বিত করে ২০২৫ সালে নিয়েছে।
সি৯১৯ এর বাণিজ্যিক ফ্লাইট মে মাসেই শুরু হয়েছে। চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের প্রথম ফ্লাইটটি সফলভাবে সাংহাই থেকে বেইজিংয়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
এটি বোয়িংয়ের ৭৩৭ ও এয়ারবাসের এ৩২০ মডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চীনের 'অংশীদাররা' সবার আগে আন্তর্জাতিক ক্রেতা হতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আগামীতে চীন বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে এই উড়োজাহাজ কেনা ও ব্যবহারের শর্ত জুড়ে দিতে পারে।
Comments