মার্কিন নৌবাহিনীকে টেক্কা দিতে পারে চীনের নতুন রণতরী ফুজিয়ান

চীনের নৌবাহিনীর অপর দুই রণতরী শানডং (৬৬ হাজার মেট্রিক টন) ও লিয়াওনিং (৬০ হাজার টন) চেয়ে অনেক বেশি ভার বইতে পারে ফুজিয়ান (৮০ হাজার মেট্রিক টন)।
চীনের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ফুজিয়ান। ছবি: জিন হুয়া/চীনের সরকারি গণমাধ্যম
চীনের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ফুজিয়ান। ছবি: জিন হুয়া/চীনের সরকারি গণমাধ্যম

চীনের সবচেয়ে নতুন, বড় ও আধুনিক রণতরী 'দ্য ফুজিয়ান' প্রথমবারের মতো সমুদ্রে নেমেছে। সাংহাই থেকে পূর্ব চীন সাগরের উদ্দেশে বুধবার এই রণতরীটি তার পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে এই রণতরী নির্মাণ করেছে চীন। 

গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।

এটা চীনের নিজেদের নির্মাণ করা তৃতীয় রণতরী।

জিয়াংনান শিপইয়ার্ডে ফুজিয়ানকে নির্মাণ করতে মোট ছয় বছর সময় লেগেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জিনহুয়া বুধবার জানায়, সমুদ্রে মহড়ার সময় রণতরীর প্রোপালশন ও ইলেকট্রিক সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা ও স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করা হবে।

২০২২ সালে এই যুদ্ধজাহাজের উদ্বোধন হলেও এবারই প্রথম সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে ফুজিয়ানকে।

চীনের নৌবাহিনীর অপর দুই রণতরী শানডং (৬৬ হাজার মেট্রিক টন) ও লিয়াওনিং (৬০ হাজার টন) চেয়ে অনেক বেশি ভার বইতে পারে ফুজিয়ান (৮০ হাজার মেট্রিক টন)।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফুজিয়ানের চেয়ে বড় রণতরী রয়েছে।

ফুজিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার হল তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম, যার মাধ্যমে অপর দুই রণতরীর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভারী যুদ্ধবিমান এই জাহাজ থেকে উড়ে যেতে পারবে। পুরনো দুই রণতরীতে স্কি-জাম্প প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই ফিচারের কারণে চীন আরও বড় বড় যুদ্ধবিমানকে আরও বেশি দূরত্বে পাঠাতে পারবে, এবং একইসঙ্গে, এই বিমানগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি গোলাবারুদ বহন করতে পারবে। সার্বিকভাবে, এই রণতরী চীনের নৌযুদ্ধ সক্ষমতাকে অনেকাংশ বাড়িয়ে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ইউএসএস জেরার্ড আর ফোর্ড ও অন্যান্য জাহাজ। ফাইল ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ইউএসএস জেরার্ড আর ফোর্ড ও অন্যান্য জাহাজ। ফাইল ছবি: এএফপি

এই তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের একটিমাত্র রণতরীতে ব্যবহার হয়েছে, যার নাম ইউএএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। মার্কিন নৌবাহিনীর বাকি ১০টি পুরনো রণতরীতে বাষ্প-চালিত ক্যাটাপাল্ট ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা হয়।

তবে মার্কিন রণতরীগুলোর বিশেষ একটি সুবিধা রয়েছে, যা চীনের তিন রণতরীর নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো পারমাণবিক শক্তিতে পরিচালিত। যার ফলে এগুলো দীর্ঘসময় সমুদ্রে থাকতে পারে। অপরদিকে, ফুজিয়ানে প্রথাগত জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে, এই রণতরীকে নিয়মিত বিরতিতে কোনো বন্দর থেকে অথবা অন্য তেলের ট্যাংকার থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়।

মার্কিন নৌবাহিনীর ফোর্ড রণতরীর বহন ক্ষমতা প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। অপর দশটি মিনিৎজ ক্লাস রণতরী ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ভার বইতে পারে। এই বড় আকারের মার্কিন জাহাজগুলো অন্তত ৭৫টি যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে ৬০টি যুদ্ধবিমান বহন করবে ফুজিয়ান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফুজিয়ানের মহড়া তিন থেকে ছয় দিন ধরে চলতে পারে।

চীনের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ফুজিয়ান। ছবি: জিন হুয়া/চীনের সরকারি গণমাধ্যম
চীনের সবচেয়ে আধুনিক রণতরী ফুজিয়ান। ছবি: জিন হুয়া/চীনের সরকারি গণমাধ্যম

সার্বিকভাবে, বিশ্লেষকদের মতে ২০২৬ এর আগে ফুজিয়ান পুরোপুরি প্রস্তুত হবে না।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী 'পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির' (পিএলএএন)  যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৪০টি।

পিএলএএনের রাজনৈতিক কমিশনার ইউয়ান হুয়াঝি মার্চে জানান, চতুর্থ রণতরীর ঘোষণা খুব দ্রুতই আসতে পারে।

চতুর্থ রণতরীটি পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন হবে কী না, তা সময়ই বলে দেবে।

এ মুহূর্তে সংখ্যায় চীন এগিয়ে থাকলেও, সক্ষমতার দিক দিয়ে মার্কিন নৌবাহিনী এগিয়ে আছে।

Comments