বন্যায় ঐক্যের সুর

মুগ্ধরা অমর শ্বাশত বাংলায় 

সকল ভয় তুচ্ছ করে মুগ্ধ বলেছিল ‘পানি লাগবে পানি’? ওরাও সম্মিলিত ভাবে ৫৫লাখ বন্যাপীড়িতদের উদ্দেশ্যে বলছেন ‘ত্রাণ লাগবে ত্রাণ’?
সারাদেশে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছবি স্টার

রাত তখন ১২টা। শহর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেটাই শ্বাশত নিয়ম। গ্রাম বাংলা পাশ ফিরে শুয়েছে, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় নিশ্চয় তাই। রাজধানী ঢাকাতেও শোয়ার প্রস্তুতি শেষ হয়ে এসেছে কিংবা হচ্ছে দ্রুত লয়ে। আমাদের চেনাজানা এসব স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জেগে আছে টিএসসি, জেগে আছে শরীর চর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ওখানে রাত দিন এক করে কাজ করে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী। ওদের চোখে ঘুম নেই। ওদের ক্লান্তি নেই। ওরা জেন জি। ওরা শুন্য প্রজন্ম। ওরা সব পারে। ওদেরকে পারতে হয়।

বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে ওরাই আশার আলো, নির্ভরতার প্রতীক, সাহসের গায়ত্রী মন্ত্র। ওরা জেগে আছে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে। ওরা জেগে আছে ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদে। ওরা জেগে আছে ত্রাণ যথাযথভাবে প্যাকেটজাত করার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে। ওরা জেগে আছে বন্যাপীড়িত মানুষের এই দুঃসময়ে যার যার অবস্থান থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিশ্চিত করার নিমিত্তে। এই টিএসসি আমরা হয়তো কেউ চিনেনি। শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই মুহূর্তে টিএসসিতে রচিত হচ্ছে নতুন ইতিহাস। কথা বলছে নতুন এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা। জেন জে এখন বাংলাদেশের মুখ। টিএসসি এখন বাংলাদেশের প্রতিবিম্ব।

ছাত্রদের এমনরূপ-এমন আশা জাগানিয়া ভূমিকা পালন আমাদের কল্পনাতেও হয়তো ছিল না কখনওই। টিএসসি-শরীরচর্চা কেন্দ্র সেই ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জেগে আছে এই মধ্য রাতেও। জেগে থাকছে সারারাত-সারাদিন। ওরা এখন ঘুমায় না, খুব শ্রান্ত মনে হলে জিরিয়ে নেয় একটু। কিন্তু টিএসসি ছাড়ে না। যায় না শরীর চর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। ওদের কাছে বন্যায় আক্রান্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করাই এখন জীবনের ব্রত, বেঁচে থাকার প্রেরণা ও লক্ষ্য।

২৫আগস্ট সোমবার রাত্রি তখন আটটা। মেট্রোতে টিএসসির সামনে নেমেই চোখে পড়ল পুরো এলাকা জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণা। এটা অবশ্য টিএসসির চেনা চরিত্র। কিন্তু চৌহদ্দীর ভেতরে ঢুকতেই ক্রমাগত উন্মোচিত হতে থাকল চেনা চরিত্রের বাইরের ব্যতিক্রমী সব দৃশ্যপট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এখন ত্রাণের নগরী। ছবি স্টার

গেট বরাবর যেতেই দেখা গেল হাতের বাম পাশে ত্রাণের অর্থ সংগ্রহের জন্য একটা বাক্স রাখা হয়েছে। মানুষ জন একের পর এক এসে সেখানে সাহায্য সামগ্রি রেখে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে এই কাজটি যেন সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় তার পরিবেশে নিশ্চিত করছেন। গেটের কাছাকাছি যেতেই একজন ছাত্র মাইকে এসে বললেন। ভেতরে যথেষ্ট ভলেনটিয়ার আছেন। এখন আপাতত ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই। আপনারা বাইরে থাকেন। যে যার মতো রেস্ট নেন। আমরা প্রয়োজন হলে আবার ভলানটিয়ার ডেকে নেব। এই বলে গেট বন্ধ করে রাখা হল।

এখন কী উপায়, কীভাবে দেখা সম্ভব হবে এই কর্মযজ্ঞ ? আমার জন্য অবশ্য ভেতরে আগে থেকে অপেক্ষা করছিলেন ডেইলি স্টার বাংলার সাহিত্য সম্পাদক কবি ইমরান মাহফুজ। একজন ভলানটিয়ার পাঠিয়ে নিয়ে গেলেন আমাকে। টিএসসির ভেতরের ওই মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া, মহড়া কক্ষ, হলরুম আমাদের কাছে নতুন নয় মোটেই। ওখানে গেলেই দেখতাম কোথাও চলছে আবৃত্তির মহড়া, কোথাওবা নাটকের রিহার্সেল। আর সবুজ ঘাসের বুকে যূথবদ্ধভাবে বসে গল্প করছেন নানা দল-উপদল। কিন্তু সোমবার সেসবের কোন বালাই নেই। সর্বত্র ত্রাণের ছড়াছড়ি। ছেলেমেয়েরা সংঘবদ্ধভাবে বসে প্যাকেটবন্দী করার কাজে ব্যস্ত। কারোরই সময় নেই কোনদিকে দৃষ্টি দেওয়ার। সবাই কাজে নিয়ে ব্যস্ত।

জামিল একটু আক্ষেপ ঝাড়ল গণমাধ্যমের প্রতি। ওর কথা হল, দেশের অন্যত্রও কিন্তু এরকম কাজ হচ্ছে। ওর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে কিন্তু সেসবের খবর গণমাধ্যমে সেভাবে আসছে না। গণমাধ্যম কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খবরটাই দিচ্ছে। সিফাত ওর কথা ঘাড় নাড়াল।

এর মাঝেই পরিচয় হল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিফাত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জামিলের সঙ্গে। ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। কারণ ওরাও এখানকার ছাত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যাচ্ছে। সিফাত জানাল, এখানে অনেকেই আছেন যারা ঢাবির ছাত্র না। কিন্তু ঢাকাতেই যেহেতু আছেন তাই এখানেই কাজে যুক্ত হয়েছেন। ও নিজেও জানে না, এখানে ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন ছাত্র আছে কিনা। ওর মতে, ওসব খোঁজার সময়ই তো নেই। এখন শুধু কাজ আর কাজ। তিনদিন ধরে এখানে আছি।

জামিলের ভাষ্যও একই রকম। তবে জামিল একটু আক্ষেপ ঝাড়ল গণমাধ্যমের প্রতি। ওর কথা হল, দেশের অন্যত্রও কিন্তু এরকম কাজ হচ্ছে। ওর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে কিন্তু সেসবের খবর গণমাধ্যমে সেভাবে আসছে না। গণমাধ্যম কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খবরটাই দিচ্ছে। সিফাত ওর কথা ঘাড় নাড়াল।

ওদের দুজনের কথায় হয়তো ঠিক। কিন্তু একথাও তো সত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর ছাপিয়ে যেভাবে একটা গণ-র জায়গা নিতে পেরেছে গণ চরিত্রের অধিকারী হয়ে উঠতে পেরেছে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু সেটা পারেনি। সেই সুযোগও হয়তো নেই। এখানকার ত্রাণ কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে যুক্ত হয়েছে, অন্যত্র সেই সুযোগ আদৌ আছে কি? এখানে কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাইরে সাধারণ লোকজনও এসে ত্রাণ দিচ্ছেন, ত্রাণকাজে যুক্ত হচ্ছেন। সিফাতের কথাতেই জানা গেল, সাধারণ মানুষ কতটা স্বতস্ফূর্তভাবে অনুদান দিচ্ছেন।

একজন নারী এসে কানে থাকা স্বর্ণের দুল দিয়ে গেছেন, এবং ছবি তুলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরকম ঘটনা আরও আছে। বাংলাদেশের এই চিত্র আসলে আবহমান বাংলাদেশেরই চিত্র।

বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারির আহতদের চিকিৎসাসেবায় যখন অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছিল, তখনও কিন্তু পুরান ঢাকার নারীরা হাতের বালা, কানের দুল, নাকের ফুল দিয়ে গেছেন অবলীলায়। ওদের কথার ফাঁকে ফাঁকে দেখলাম কতটা গভীর মনোযোগে ছেলেমেয়েরা যার যার মতো কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করে চলেছেন। এক জায়গায় দেখা গেল, কয়েকজন গুড় প্যাকেট করছেন, কেউ কাটছেন, কেউ পলিথিনে ঢোকাচ্ছেন, কেউ বেঁধে রাখছেন। আর এক জায়গায় দেখা গেল সরিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট বস্তাবন্দী করা হচ্ছে। বস্তাটা ঘুরে ঘরে এক এক জনের কাছে যাচ্ছে, যার কাছে যেটা আছে সেটা ওর ভেতরে রাখছেন। এভাবে সারি ঘুরে বস্তাবন্দী হয়ে যাচ্ছে। আবার বস্তাকে যখন কোথাও রাখা হচ্ছে, তখন সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এবং এক হাতে থেকে আরেক হাত হয়ে সেটা পৌঁছে যাচ্ছে জায়গা মতো। এতে কারও ওপরই খুব বেশি চাপ পড়ছে না, কিন্তু কাজটা হয়ে যাচ্ছে যথাযথভাবে।

এসব কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ শ্লোগান দিচ্ছেন, কেই আবার ধরছেন গান কিংবা কবিতা। মোট কথা উৎসবমুখর পরিবেশে এক অসাধ্যকে সাধন করে চলেছে আমাদের ছাত্র সমাজ, এই সময়ের জেন জি প্রজন্ম। গেটের কাছে এসে মাইকে শোনা গেল, আমাদের ৩০ জন মতো ভলান্টিয়ারা রাখবে। যাদের রেস্ট নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে থেকে ৩০ জন ভেতরে আসেন। কারও সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া এরকম শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব, এটা কি কখনও কল্পনা করা গেছে?  

টিএসসি থেকে বেরিয়ে আমরা চারজন হাঁটতে হাঁটতে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে গিয়েও দেখা গেল একই রকমভাবে কাজে নিয়োজিত রয়েছে শিক্ষার্থীরা। গ্যালারির দোতলা অবধি ঢেকে গেছে ত্রাণের প্যাকেটে। ভেতরের কক্ষগুলোতেও প্যাকেটে ভরা। কোথাওবা মুড়ির প্যাকেটের স্তুপ, কোথাওবা টোস্টের। কোথাওবা পানির বোতল, এভাবে নানারকম জিনিসপত্রে ঠাসা প্রত্যেকটি কক্ষ। এখানে ওষুধও প্যাকেট করা হচ্ছে। অবাক করার বিষয় দুই জায়গাতেই দেখা গেল, ছাত্রদের সঙ্গে তাল মিলেয়ে কয়েকজন মুরুব্বিও কাজ করে চলেছেন। উনাদের মুখেও একই শ্লোগান, গান, কবিতার আবীর ছড়ানো এক উৎসব খেলা করে যাচ্ছে বন্যার্তদের কল্যাণার্থে। ওখানেই দেখা মিললো কয়েকজন কলেজছাত্রের সঙ্গে। যারা সদ্য একাদশে কিংবা সদ্য এইচএসসি পাস। কেউ এসেছে দনিয়া থেকে, কেউ যাত্রাবাড়ি, কেউবা আবার বাসাবো। ওদেরকে কেউ আসতে বলেনি। ওদেরকে কেউ কাজে করতেও বলেনি। ওরা এসেছে নিজেদের তাগিদে। কাজ খুঁজে নিয়েছে নিজেদের মতো করে। স্বেচ্ছাসেবি এসব ভলান্টিয়ারদের বেশীরভাগই দুই তিনদিন হল এখানে এসে কাজে যুক্ত হয়েছেন, এর পর আর ঘরে ফেরেননি। এঁদেরকে যদি আমরা সোনার ছেলে না বলি তা হলে ইতিহাস আমাদেরকে ক্ষমা করবে কি?

সচিবালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আনসার সদস্যদের।

ওখান থেকে সিফাত ও জামিল চলে গেল টিএসসিতে। ইমরানসহ এলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে। দেখা হল ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। আগে থেকেই ছিলেন ফারুক খান। কথায় কথায় বললাম ছাত্রদের এই কর্মযজ্ঞের কথা। আসাদ ভাই বললেন,গতকাল উনিও গিয়েছিলেন। অনেকক্ষণ প্যাকেট স্থানান্তরের কাজ করেছেন। আমরা যখন বাংলাদেশের এইসব আশাবাদের কথা বলছিলাম। তখন আনসারদের প্রসঙ্গও হাজির হল। ছেলেরা সব টিএসসির দিকে যাচ্ছে সেটাও জানালাম। সব দাবিই কেন এখনই জানাতে হবে। সরকারকে সুযোগ না দিয়ে এসব দাবি জানানো কতোট যৌক্তিক এই প্রসঙ্গও এলো। এসব আলাপের ফাঁকেই জানা গেল আনসারদেরকে সরিয়ে দিয়েছে ছাত্ররা। উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের যাদেরকে আটকে রেখেছিল সচিবালয়ে তাদেরকেও মুক্ত করা হয়েছে।

শৃঙ্খলার মধ্যেই ছাত্ররা জেগেছিল বানভাসি মানুষের কলাণার্থে। ত্রাণ নিয়ে ট্রাক গেছে বন্যাপীড়িত ১১ জেলায়। আরও ট্রাক যাবে। ট্রাকে জিনিসপত্র ওঠাতে হবে, আরও প্যাকেটে প্রয়োজনীয় খাবারও ওষুধপত্র ঢোকাতে হবে। একারণেই জেগে আছে টিএসসি, জেগে আছে ছাত্ররা।

কিছুক্ষণের মধ্যে কবি আবিদ আজম ও ছড়াকার মামুন সারওয়ার যুক্ত হলেন আমাদের আলাপে। উনারা সচিবালয়ে হয়ে এসেছেন। জানালেন ছাত্ররা যাওয়ামাত্রই আনসাররা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। আনসাররা মনে করেছিল ছাত্ররা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সমন্বয়কদের মধ্যে বিভক্তি বেড়েছে। এই সুযোগে ক্যু বা অভ্যুত্থান করে ওরা হিরো হতে হয়েছিল। কিন্তু আনসারদের সে গুড়ে বালি পড়েছে। আলাপে আলাপে রাত্রি ১২টা বেজে যায়। বিদায় নিয়ে আমি চলে আসি টিএসসিতে।

এর আগেও মধ্যরাত্রিতে এখানে আসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে। থার্টি ফার্স্টে কিংবা অন্যকোন উপলক্ষে। কিন্তু এরকম টিএসসির দেখা যায়নি কখনওই। ওই সময়গুলোতে পুলিশে থাকে যত্রতত্র । থাকে আইনশৃঙ্খলার নামে কতোটা উদ্ভট নিয়ম কানুন। কিন্তু গতকাল রাতে টিএসসি এলাকায় কোন পুলিশ ছিল না। থাকলেও চোখে পড়েনি। সন্ধ্যার পরও ছিল না। কিন্তু পুরো টিএসসি ও তার আশেপাশের এলাকায় কোন জট লাগেনি। কোন হট্টগোল হয়নি। বরং সুন্দর এক শৃঙ্খলায় আবর্তিত ছিল টিএসসি, শহীদ মিনার এলাকা। এই শৃঙ্খলার মধ্যেই ছাত্ররা জেগেছিল বানভাসি মানুষের কলাণার্থে। ত্রাণ নিয়ে ট্রাক গেছে বন্যাপীড়িত ১১ জেলায়। আরও ট্রাক যাবে। ট্রাকে জিনিসপত্র ওঠাতে হবে, আরও প্যাকেটে প্রয়োজনীয় খাবারও ওষুধপত্র ঢোকাতে হবে। একারণেই জেগে আছে টিএসসি, জেগে আছে ছাত্ররা।

রাজু ভাস্কযের সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যরাত্রির আড়ষ্টতা ভেঙ্গে যখন চোখ রাখি ওদের চোখেমুখে তখন একবুক ভাললাগায় ভরে যায় দেহ ও মন। মনে হয়, ওদের মাঝেই আমাদের মুগ্ধ রয়েছেন। রয়েছেন ইব্রাহীম খাঁর 'ভাঙ্গা কুলা' গল্পের নায়ক  'বড়মিঞা'। ওদের মুখ তাই মুগ্ধর মুখ। ওদের কাজ তাই বড়মিঞার কাজ। এ কারণে হৃদয়-মন এসঙ্গে বলে ওঠে, দিনরাত এক করা টিএসসির এসকল শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক একজন মুগ্ধ। মুগ্ধ যেমন তৃষ্ণার্তদের জন্য পানি নিয়ে হাজির হয়েছিল। সকল ভয় তুচ্ছ করে মুগ্ধ বলেছিল 'পানি লাগবে পানি'? ওরাও সম্মিলিত ভাবে ৫৫লাখ বন্যাপীড়িতদের উদ্দেশ্যে বলছেন 'ত্রাণ লাগবে ত্রাণ'?

Comments

The Daily Star  | English
Indian Padma Vibhushan industrialist Ratan Tata dies at 86

Ratan Tata passes away

India’s top industrialist and Tata Sons Chairman Emeritus Ratan Tata died in a hospital in Mumbai last night, the company said.

6h ago