মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাঠ জরুরি কেন?
বাংলা ও বাংলাকে স্বাধীন করার প্রয়াসে আজীবন কাজ করেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে অগ্রপথিক ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ। বাংলা ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। নিজে আলোকিত হয়েছেন, সেই প্রভায় বিভাবিত বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি।
ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি কেবল তাত্ত্বিক আলোচনাই সীমায়িত রাখেননি; তার বিস্তার ঘটিয়েছেন সমাজের প্রতিটি স্তরে। মানুষের মননে ও স্মরণে তাই তিনি প্রাত্যহিক পাঠের বিষয়। বিশেষ করে, ভাষা ও সাহিত্য আলোচনায়। তাঁর জীবনদর্শন পাঠ করে অবগত হওয়া যায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চাকে তিনি কতটা বেগবান করেছিলেন। তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ভাস্বর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখনী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন বৌদ্ধিক মহল।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভালোবাসতেন দেশকে, দেশের মানুষকে। তাই তার সংগ্রামের কেন্দ্রে ছিলো জনমানুষের মুক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ লুপ্ত ছিলো ভাষা-আন্দোলনের মধ্যে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই আন্দোলনে সরাসারি যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দৃঢ় প্রত্যয়ের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। পুলিশ বাহিনীর কড়া পাহারা। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে ছত্রভঙ্গ ছাত্র-জনতা। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সহকর্মীদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে আটকা পড়া অনেককেই উদ্ধার করলেন দেয়াল ভেঙ্গে। বেলা তিনটার দিকে মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ওঠে রাজপথ। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হাসপাতালে হতাহতদের দেখতে আসেন।
এই বর্বরোচিত নৃশংসতার প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি তাঁর আচকান কেটে প্রথম কালো ব্যাজ ধারণ করলেন। ঢাকা জেলা শিক্ষক সম্মেলনের দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন- 'ছাত্ররা এসব ব্যাপারে জড়িত আমরা সে সম্পর্কে নীরব থাকতে পরি না। আমরা আশা করি, একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দ্বারা এই ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাথে বাংলা ভাষার উন্নয়নের বিষয়টি সংযুক্ত ছিল। বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রথম স্বপ্ন পুরুষ ছিলেন। এমনকি তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা ভাষার নানা সমস্যা যেমন-উচ্চারণ, বানান, ভাষা সংস্কার, বাঙলা লিপি ও হরফ সংস্কার ইত্যাদি বিষয়েও তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন যা নানাভাবে বাংলাদেশের জনগণের ভাষা সচেতনতা বাড়িয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নবীন লেখকদের উদ্দেশে বলেছেন-' যদি মনে বুঝিতে পারেন যে লিখিয়া দেশের মঙ্গল সাধন করিতে পারেন/ অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি করিতে পারেন/ তবে অবশ্যই লিখিবেন'। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই দ্বিবিধ প্রত্যয়েরই সারথি ছিলেন।
বাংলা ভাষার প্রতি মুহম্মদ শহীদুল্লহর ছিল প্রবল আবেগ। তার প্রতিফলন দেখা যায় ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকে। বর্তমান বিশ্বের সেরা ভাষাবিজ্ঞানী আব্রাহাম নোয়াম চমস্কি বলেছেন, মাতৃভাষা যে কোনো ব্যক্তির উন্নয়নের উপায়। এ ভাষা ব্যতিরেকে কোনো জাতিই তার উন্নতির শিখরে আরোহন করতে সক্ষম নয়। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এমন চিন্তা ধারণ করেছেন আজ থেকে প্রায় আশিবছর পূর্বে। তাঁর বহুল শ্রুত বাণী আজও আমাদের কানে ধ্বনিত হয়-'যে জাতি তার ভাষাকে শ্রদ্ধা করে না, সে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়'।
এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়-বিশশতকের শ্রেষ্ঠ ভাষাদার্শনিক জোসেফ জোহান ভিটগেনস্টাইনের উক্তিতে-'To understand a sentence means to understand a language/To understand a language means to have a master of technique. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ উক্তির সারতা অনুধাবন করেছেন। তাই তিনি দ্বিধাহীন মাতৃভাষার গুরুত্বকে সামনে এনেছেন। ভাষাবিজ্ঞানীর ভাষায় নয়, সাধারণ্যের কথায় উল্লেখ করেছেন সেই ব্যাপ্তির সারকথা। ভাষাবিজ্ঞানের তত্ত্বকথা সরলীকৃত হয়েছে তাঁর ভাষ্যে। আপন ভাষাকে মণিকুঠরে স্থান দিয়েছিলেন বলেই অসাধ্য করেছেন সাধন। হয়েছেন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সাধক, কুড়িয়েছেন নাম, যশ, খ্যাতি।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। উদার মনোভাবের জন্য তিনি সব ধর্মের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। এই চেতনার লালন বেশ জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে বর্তমান বিশ্বাস আমাদের দেশে যখন উপরিউক্ত সমস্যার আগম ঘটে তখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সমচেতনার বাণী নাড়া দেয় বাঙালি মানসে-'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারা ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ এঁকে দিয়েছে, যে মালা তিলক টিকিতে বা টুপি লুঙ্গি দাঁড়িতে তা ঢাকবার জো নেই। হিন্দু-মুসলমান মিলিত বাঙালি জাতি গড়িয়া তুলিতে বহু অন্তরায় আছে, কিন্তু তাহা যে করিতেই হইবে।"
তার এ বাণীই প্রমাণ করে যে বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর কত ভালোবাসা এবং তিনি কতটা মহৎ, দেশপ্রেমিক ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব। তাঁর এ নীতি অনুসরণ করে সমাজে আমরা অসাম্প্রদায়িক বীজ বপন করতে পারি। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এরূপ অনুশীলন সর্বদা দেখা দেবে সমাজে সমাজে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর চিন্তা সর্বদাই আধুনিক মননের প্রতিচ্ছবি এবং তা সমাজে চর্চার দাবি রাখে।
তার গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের নির্মাতা হিন্দুও নয় মুসলমানও নয়-বৌদ্ধতান্ত্রিক সম্প্রদায়। অবশ্য রূপে-রসে একে সজিব করেছেন মুসলিম আমির উমরাহরা। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ই প্রমাণ করেছেন সংস্কৃত থেকে নয়, বাংলাভাষার উদ্ভব হয়েছে 'গৌড়ীয় প্রাকৃত' (গৌড়ীয় অপভ্রংশ) থেকে। যেমন বাংলায় 'তুমি ঘোড়া দেখ' গৌড়ীতে হবে 'তুম্হে ঘোড়াঅংদেক খহ'। শহীদুল্লাহ্ দেখিয়েছে সংস্কৃতিতে 'ঘোড়া' শব্দ নেই। আছে কেবল 'অশ্ব'।
গৌড়ী প্রকৃত (পালিভাষায়) 'ঘোটক শব্দ পাওয়া যায়' ঘোড়া সেখান থেকেই বাংলাভাষায় এসেছে। নেপালের নেওয়াররা মহাজান বৌদ্ধ। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেওয়ার বৌদ্ধদের কাছ থেকে ১৯১৬ সালে কতকগুলো পুঁথি সংগ্রহ করেন। পুঁথিতে কতকগুলো বৌদ্ধ দোহা বা সঙ্গীত রয়েছে। এই সঙ্গীতগুলো এখন প্রাচীন বাংলার নিদর্শন। শহীদুল্লাহ ওই বৌদ্ধ গানের ওপর ডক্টর অব থিসিস করেন।
আজ থেকে সাতদশক আগেই তিনি বলেছেন আমাদের ভাষায় 'স' 'শ' 'ষ' পৃথক উচ্চারণ সাধারণত হয় না। আমরা কেবল 'শ' উচ্চারণ করি। র-ফলা কিংবা ল-ফলা অথবা ত বর্গের সঙ্গে একত্রিত হলেই কেবল বাংলায় খাঁটি উচ্চারণ আসে। ট-বর্গের সঙ্গে যুক্ত হলে আমরা মূর্ধন্য 'ষ' উচ্চারণ করি। না হলে তালব্য 'শ' বাংলার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হিন্দি-উর্দুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে 'স' উচ্চারণে। এরূপ চিন্তা বর্তমান সমাজে প্রয়োগের দাবি রাখে। বাংলা ভাষা ব্যবহারের অপপ্রয়োগ দেখা দিলেই মনে পড়ে পড়ে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উচ্চারণ ও প্রমিত বানানের কথা। ভাষার বিকৃতি যে মানুষের মানসিক বৈকল্য, যার পচন রোধ করা ডাক্তার, বৈদ্যের পক্ষে অসম্ভব। এরূপ পচন, ঘুনেধরা সমাজের জন্ম দেয়। সৃষ্টি করে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও কর্মহীন-অদরকারি মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক অধ্যয়নে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাঠ আবশ্যিক বিষয়।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করতেন, 'মাতা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি প্রত্যেক মানুষের পরম শ্রদ্ধার বস্তু। তিনি সর্বজনীন শিক্ষার প্রয়োনীয়তায় মাতৃভাষাকে উপযুক্ত বাহন মনে করতেন। বিদেশি ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাকে তিনি সৃষ্টিছাড়া প্রথা ভাবতেন। তাই বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথাও ভাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বাংলা বিভাগ তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলা বানানের জটিলতা ও অনিয়ম নিরসনে তাঁর সুচিন্তিত মতামতটিও যুক্তিযুক্ত ছিল। বাংলা ভাষায় ও বর্ণমালায় এমন বহু বিষয় বর্তমান যা শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয়-অনাবশ্যক ও দুর্বোধ্যও বটে। তিনি বাংলা সন তারিখের অস্থিরতা ও পরিবর্তনমান চরিত্রের জন্য সংশোধন ও যুগোপযোগী করার সুপরিশও করেন। বাংলা ভাষার নানা দিক থেকে সেবার দৃষ্টান্ত তাঁর ক্ষেত্রে বিরল। বাংলা ভাষার জন্য তাঁর নানামুখী অবদান তাঁকে বাংলা ভাষাভাষি জনগণের কাছে এক মহৎ চরিত্র দান করেছে। তাঁকে 'ভাষার ডাক্তার' বললে অত্যক্তি হবে না।
একটি আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের উপযুক্ত বিকাশের জন্যই তিনি বাংলা ভাষার এমন সেবক হিসেবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। মাতৃভাষার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধকে তাঁর বিরোধীপক্ষরা হিন্দুঘেঁষা মনোভাব বলে কটূক্তি করেছেন। তাঁর সত্য কথনের সাহস ও তীক্ষ¥ অন্তর্দৃর্ষ্টি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুকে রক্তপিপাসু করেছে। 'Pundit your are a traitor' বলেও এই অশীতিপর বৃদ্ধ সংগ্রামীকে থামানো সম্ভব হয়নি। তিনি পাহাড়ের মতো মাথা উঁচু করে বুদ্ধিজীবী-কবি-সাহিত্যিদের ও সংগ্রামী ভাষাসৈনিক-যোদ্ধাদের পথিকৃৎ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ন্যায় ও সততা প্রতিষ্ঠায় ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বসংস্কৃতি ও উন্নত মানসিক গঠনের অন্তরায় হতে পারে ধর্মহীন সমাজ। মূল্যবোধ ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন প্রকৃতির আবশ্যিক উপাদানের প্রতি আত্মসমর্পণ। তিনি সমর্পিত করেছিলেন নিজেকে-ছিলেন একটি আদর্শ মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি। ধর্মকে তিনি কটাক্ষ করতেন না। আবার ধর্মান্ধও ছিলেন না। শিক্ষায় ধর্মের অনুপস্থিতি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কখনও কখনও। মর্মে মর্মে তা উপলদ্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে নিজস্ব মত তুলে ধরেছেন-"ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দিয়ে অর্জিত পৃথিবীর সকল শিক্ষা মূল্যহীন"। এ-উক্তির যার্থাথ্য ভগ্নদশা সমাজের দিকে তাকালে সহজেই প্রতিভাত হয়।
একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়েই তিনি আটকে পড়েছিলেন। তিনি বই পড়ায় এতটাই মগ্ন ছিলেন কখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে, লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেছে সেটা টের পাননি। যখন একেবারেই আলো কমে গিয়েছিলো, উঠে লাইট জ্বালাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন দরজা বন্ধ। এভাবেই তিনি বই পড়ায় নিমগ্ন থাকতেন।
মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দয়া-দাক্ষিণ্য হ্রাস পাচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজে। মানুষ এখন নিজেদেরকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। 'আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/ আসে নাই কেহ অবনী পরে/ সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।' কামিনী রায়ের নির্জলা মানুষপ্রেমে কেউ আর উদ্ধুদ্ধ হতে চায় না। রাজনীতি, ভোগনীতির যাঁতাকলে আড়ষ্ট বিলাসী মানুষ কবির কবিত্ব থেকে যোজন দূরে। অথচ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ 'সবার ওপরে মানুষ সত্য/ তাহার ওপরে নাই'-চিন্তার প্রসার ও প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছেন। মানুষের উপকারের মধ্যেই যে জীবনের সার্থকতা তা তিনি ধারণ করেছেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খরচ বহন করে প্রমাণ করেছেন-বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে-অন্নহীনে অন্ন দিতে হবে, শিক্ষাবিস্তারে রাখতে হবে অবদান।
অপসংস্কৃতির বিস্তার তরুণ সমাজের মধ্যে বই পড়ায় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে। 'পড়লে বই আলোকিত হই'-এরূপ চেতনা থেকে সরে যাচ্ছে তারা। প্রসঙ্গে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আমাদের সামনে আসে বই পড়ার বারতা নিয়ে। তিনি বই পড়তে ভালোবাসতেন। তাঁর বিশাল লাইব্রেরি ছিলো। তিনি কাউকে সাধারণত বই ধার দিতেন না। কারণ হিসেবে বলতেন, বই গেলে আর ফেরত আসবে না। একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়েই তিনি আটকে পড়েছিলেন। তিনি বই পড়ায় এতটাই মগ্ন ছিলেন কখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে, লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেছে সেটা টের পাননি। যখন একেবারেই আলো কমে গিয়েছিলো, উঠে লাইট জ্বালাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন দরজা বন্ধ। এভাবেই তিনি বই পড়ায় নিমগ্ন থাকতেন। "
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একজন খাঁটি বাঙালির আদর্শ। মননে ও চলনে তাঁর নীতি আদর্শ সে কথাই প্রমাণ করে। তাঁর লেখার মধ্যে বাঙালি সমাজের উন্নয়নের মন্ত্র ব্যক্ত আছে। তাঁর শক্তিশালী লেখনী আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে মূল্যবোধের সমাজ বিনির্মাণে। তাঁর ভাষাতাত্ত্বিক জ্ঞান আহরণ করে আমরা বাঙময় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখি। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও জ্ঞানীদের কদর করাও তার বাণীতে চিরভাস্বর-' যে সমাজ জ্ঞানীদের সম্মান দিতে জানে না, সেসমাজে জ্ঞানীর জন্ম হয় না।'
মুহম্মদ শহীদুল্লাহর শাস্বত সমাজের বাণী। তিনি বহুমাত্রিক চিন্তার বাতিঘর ছিলেন। এ বিভা দূর করতে পারে নিকষ অন্ধকার। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এ-মনীষীর জীবনালেখ্য পাঠ করে সমাজকে আলোকিত করা সবারই দায়িত্ব।
Comments