বইমেলা বিশেষ-৯

‘আমাদের লেখকরা বেশি অস্থির, পরিকল্পিত কাজ করে না’

প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসছে একুশে বইমেলায়। অভিযান থেকে থেকে প্রকাশ হয়েছে কবি ও অনুবাদক হাইকেল হাশমীর 'শের ও শায়েরি'। তিনি কাজ করছেন উর্দু সাহিত্য নিয়ে। নতুন বই, অনুবাদ ও বইমেলা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

বইমেলা শেষের দিকে। যান কি নিয়মিত?
হাইকেল হাশমী: মেলায় নিয়মিত না। যেতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। যদিও মেলায় আমার দুটি বই এসেছে।  অভিযান থেকে শের ও শায়েরি, উর্দু কবিতার অনুবাদ। দ্বিতীয়টা কবি ওবায়েদ আকাশের কবিতার ইংরেজিতে সংকলন

অনেকে মেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশ করে, কীভাবে দেখেন?

হাইকেল হাশমী : মেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশ ভালো বিষয় না।  প্রকাশনা না যে কোন শিল্পই বাঁচাতে পারে না মৌসুমি ব্যবসায়। আর মেলা ত মেলায়। আড্ডার জায়গা। কেউ ছবি তোলে, কেউ দুই একটা কিনে, গান বাজনা শুনে, আবৃত্তি শুনে, ইয়াংরা ডেটিং করতে যায়-- এটাই মেলার ধরন। একে ঘিরে পাবলিশারদের একটা ধান্ধা চলে। তবে হ্যাঁ, যারা বইয়ের পাঠক সব সময় কিনে বই পড়ে।

কবি লেখকদেরও পরিকল্পনায় সারা বছরের প্রকাশনা না থাকার কারণ কি?

হাইকেল হাশমী : আমাদের লেখকরাও অনেক বেশি অস্থির, দীর্ঘ পরিকল্পনায় কাজ করতে দেখা যায় না। কোন বিষয় গুছিয়ে স্থিরভাবে চিন্তা করে না। শেষ কবে পূর্ণাঙ্গ একটা বই পড়ছে, ভুলে গেছে অনেক লেখক। তারা কেবল লিখে যায়, প্রকাশ করে অবিরাম। প্রকাশক কয়টা বই নিজের টাকায় করে? এখন লেখকের টাকায় বছর বছর বই হয়, তাই পাঠকদের সঙ্গে বোঝাপড়া কম। কোন পাঠক কি বলল তা নিয়ে ভাবার সময়ও কৈ !

অন্যদিকে দেখবেন- বড় লেখকরা বেশি লিখেন না, হেমিংওয়ে বা আখতারুজ্জান ইলিয়াসদের কয়টা বই?  তারা অল্প লিখেছেন মানুষ ও সমাজের কথা। অল্প গল্পে তারা স্মরণীয়। আমরাও তাদের মনে রেখেছি।

লেখালেখিতে কখন এলেন বা খ্যাতিমান বাবার কোন প্রভাব? 

হাইকেল হাশমী : খুব পরিকল্পনা করে না। মনে হয় বেশ দেরিতে প্রকাশে এসেছি আমি। আব্বার কিছু গুণ পেয়েছি বলা যায়। তবে আব্বা নিজেও সারাসরি জানতেন না যে আমি যে লিখি। মাঝেমাঝে আসাদ চৌধুরী চাচা, কামাল লোহানী চাচাদের বলতেন হাইকেল মনে হয় কিছু লেখে। আমি আসলে দেখাতাম না সেই অর্থে।  

অর্থনৈতিক কারন না থাকলে ভাষার গুরুত্ব হারিয়ে যায়। বাংলাদেশে যাদের একাডেমিকভাবে উর্দু আছে, তারা অন্য কোন বিষয় পায় না বলে উর্দু পড়ে।

আপনার বাবা বিখ্যাত কবি নওশাদ নূরি, তার কয়টা বই, তার অপ্রকাশিত কিছু আছে?

হাইকেল হাশমী: বেশি বই নেই। মনে পড়ে বাবা 'মোহেনজোদারো' কবিতাটি লিখেছিলেন বাঙালির ভাষা আন্দোলন সমর্থনে। ওই কবিতার জন্য চাকরিও হারিয়েছেন। ছন্নছাড়া জীবন। ফলে বাবা সব লিখে রাখতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে দুইবার লুট হয়েছে বাসা। অনেক পাণ্ডুলিপি নষ্ট হয়েছে। তাই ২টি বই ছাড়া অন্য কোন বই নেই। তার অধিকাংশ কবিতা প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন কাগজে। তিনি হয়তো রাখেনি সংগ্রহে রাখেননি। 

বাংলাদেশে উর্দু কবিতা বা ভাষার চর্চা কেমন?

হাইকেল হাশমী: কেন হবে? এই ভাষা শিখে উপার্জন করা সম্ভব? মানে প্রয়োজন নেই, মনের তাগিদে ভাষাটা শেখে কেউ কেউ। ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ বাংলাদেশে উর্দুতে কথা বলে। ১৭-১৮ কোটি মানুষের মধ্যে সংখ্যাটা খুব কম। ফলে এর চর্চাও খুব কম হবে। পাঠক কম থাকবে, ভোক্তা কম। এমনকি বিহারিদের ক্যাম্পেও ওরা বাংলা শিখছে এখন।

সুতরাং বাংলাদেশে উর্দু বাঁচবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর বাইরে টিকের থাকার জায়গা কম। ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেই। অর্থনৈতিক কারন না থাকলে ভাষার গুরুত্ব হারিয়ে যায়। বাংলাদেশে যাদের একাডেমিকভাবে উর্দু আছে, তারা অন্য কোন বিষয় পায় না বলে উর্দু পড়ে।

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

The International Monetary Fund has set new performance criteria tied to Bangladesh’s $5.5 billion loan programme, requiring the country to significantly reduce both domestic and external arrears in the power and fertiliser sectors before the next tranche can be released.

7h ago