ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহ
(ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছর। ভাষা আন্দোলনের একাত্তরতম বছরে ডেইলি স্টারের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজন 'একুশের একাত্তর'। ধারাবাহিক এই আয়োজনে ২১ দিনে ডেইলি স্টার প্রকাশ করবে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ২১ জনপদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আজকের ষষ্ঠদশ পর্বে থাকছে বরিশালের ভাষা আন্দোলনের চিত্র)
ভাষা আন্দোলনের অগ্নি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল ময়মনসিংহেও। ২ পর্বের ভাষা আন্দোলনে পূর্ব বাংলার যে কয়টি জেলায় আন্দোলন সমানতালে চলেছিল তার মধ্যে ময়মনসিংহ অন্যতম। মুসলিম লীগের প্রবল দাপট থাকা সত্ত্বেও ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহ রেখেছে উল্লেখযোগ্য অবদান।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ শহরের বিপিন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে প্রথমবারের মতো কোনো ছাত্রসভা। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবে তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে গণপরিষদের মুসলিম লীগের সদস্যদের বিরোধিতা এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার আন্দোলন পৌঁছে গিয়েছিল ময়মনসিংহেও। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ, বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই ময়মনসিংহে গঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ জেলা কমিটি। জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ময়মনসিংহেও ১১ মার্চকে মূল কর্মসূচির দিন হিসেবে ধার্য করা হয়েছিল।
আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ জুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। প্রচারণার কাজে সংযুক্ত ছিলেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রনেতারা। টিনের চোঙায় ফুঁকে শহরজুড়ে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। এ সময় ময়মনসিংহ শহরের নির্দিষ্ট কিছু দোকানে এবং সাধারণ মানুষ থেকে চাঁদা তুলে আন্দোলনের কর্মসূচির খরচ নির্বাহ করা হতো।
১১ মার্চ আন্দোলনের মূল দিনে ময়মনসিংহ শহরে সর্বাত্মক হরতাল ও ধর্মঘট পালিত হয়েছিল। আন্দোলন সফল করার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিল ময়মনসিংহের ছাত্র জনতা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্র এদিন মিছিলসহ এদিন ময়মনসিংহ শহর প্রদক্ষিণ করে। ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে এসব মিছিলের দাবি ছিল একটাই, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।' মিছিল শেষে শহরের বিপিন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী সভা। সভায় বক্তব্য দেন রফিকউদ্দিন ভূঁইয়াসহ ছাত্র নেতারা। সভার আয়োজনে বিশেষভাবে অবদান রেখেছিল স্থানীয় রেনেসাঁ সোসাইটি।
২১ ও ২৪ মার্চ মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান ও কার্জন হলে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে ঢাকার মতো ময়মনসিংহের ছাত্ররাও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
২৫ মার্চ ময়মনসিংহ শহরের বিপিন পার্কে রফিকউদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ছাত্র-জনতার এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যোগ দিয়েছিলেন ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো ছাত্র এবং সর্বস্তরের জনতা। সভায় বক্তব্য দেন ময়মনসিংহের ছাত্রনেতারা। সভা শেষে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। হঠাৎ এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। উত্তেজিত ছাত্র-জনতা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ময়মনসিংহ শহর। মুসলিম লীগের নেতাকর্মীরা এ সময় পুলিশকে সাহায্য করে। পুলিশি লাঠিচার্জে আহত হন আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
এরপরের ৪ বছরে ময়মনসিংহের ভাষা আন্দোলনে ঢিমেতালেই চলছিল। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' ঘোষণা করলে পূর্ববঙ্গের নানা শহরের মতো বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষও।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্দোলনের মূল দিন হিসেবে নির্ধারিত করে আন্দোলন সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান ময়মনসিংহের আন্দোলনকারীরা। এ সময় শহরজুড়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। আন্দোলন সফল করার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে লাল রঙে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগান লেখা হয়। ময়মনসিংহে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি। সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসাইনকে। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় রফিকউদ্দিন ভূঁইয়াকে। ভাষা আন্দোলনের কর্মীরা এ সময় টিনের চোঙার মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে শহরে প্রচারণা চালায়। একইসঙ্গে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। বিলি করা হয় লিফলেটও। আন্দোলন দমন করতে ময়মনসিংহ শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মূল দিনে ময়মনসিংহে সর্বাত্মক ধর্মঘট ও হরতাল পালিত হয়েছিল। এদিন ময়মনসিংহ শহরের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেছিল। এদিন সকালে অধ্যাপক সৈয়দ বদরুদ্দিনের নেতৃত্বে আনন্দমোহন কলেজ থেকে ছাত্রদের বড় একটি মিছিল বের হয়ে পুলিশের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে ময়মনসিংহ শহর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন আনন্দমোহন কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকসহ জনতা। মিছিল শেষে ময়মনসিংহের বিপিন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি জানান।
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর ময়মনসিংহে এসে পৌঁছামাত্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র ময়মনসিংহ। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে এবং সিদ্ধান্ত জানতে মানুষের ঢল নামে নগরীর শ্যামাচরণ রায় রোডে অবস্থিত রফিকউদ্দীন ভূঁইয়ার বাসভবনের সামনে। সেদিন থেকেই ময়মনসিংহে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি রাজপথে নেমে আসে ময়মনসিংহের সর্বস্তরের জনতা।
এদিন আনন্দমোহন কলেজের ছাত্রী তাহমিদা সাঈদার নেতৃত্বে ছাত্রীদের দীর্ঘ এক মিছিল কলেজ থেকে বের হয়।
সব মিছিল গিয়ে একত্রিত হয় ময়মনসিংহ টাউন হল প্রাঙ্গণে। মিছিল শেষে আয়োজিত হয় বিক্ষোভ শোক জনসভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন রফিকউদ্দীন ভূঁইয়া। সভা থেকে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করা হয়। একইসঙ্গে সমাবেশ থেকে বক্তারা নুরুল আমীন মন্ত্রিসভার পদত্যাগ, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানান।
২৩ ফেব্রুয়ারি আনন্দমোহন কলেজে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। এদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রতিটি মহকুমার সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগ্রাম কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় ময়মনসিংহে লাগাতার হরতাল ও ধর্মঘট পালিত হবে।
এদিন ময়মনসিংহের কাওরাইদ হাইস্কুল ময়দানে কয়েক হাজার ছাত্রের উপস্থিতিতে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই জনসভা থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ ও ছাত্রদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।
এদিনের আন্দোলনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী কাওরাইদ হাইস্কুল ময়দানে গফরগাঁও, ধলা, মশাখালী, কান্দিপাড়া, মুখী ও কাওরাইদ হাইস্কুলের কয়েক হাজার ছাত্র ও স্থানীয় জনসাধারণের এক সভায় ঢাকায় নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর পুলিশের নৃশংস গুলী চালনার নিন্দা করিয়া প্রস্তাব গৃহীত হয়। অপর একটি প্রস্তাবে নুরুল আমীন মন্ত্রিসভার পদত্যাগ ও আটক ছাত্রদের বিনাশর্তে মুক্তি দাবী করা হয়। এই সভায় মজলুম শহীদানের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তাঁহাদের পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।'
২৪ ফেব্রুয়ারি রোববার ছিল সরকারি ছুটির দিন। এদিনও একের পর এক মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ময়মনসিংহ শহর। সর্বত্র প্রতিবাদী পোস্টার ও কালো পতাকায় ঢেকে যায়। এদিন মিছিলে অংশ নেওয়া সর্বস্তরের মানুষের বুকে লাগানো ছিল কালো ব্যাজ। সব দোকানপাট ছিল বন্ধ।
জনমানুষকে আন্দোলন থেকে মোড় ঘোরাতে ময়মনসিংহ মুসলিম লীগ টাউন হলে আয়োজন করে জমকালো এক সভার। কিন্তু প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ জনতা তা মেনে নেয়নি। মুসলিম লীগ সদস্যদের সঙ্গে এক পর্যায়ে সভা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় আন্দোলনের নেতাকর্মীদের। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা পিটুনি দেয় মুসলিম লীগের সদস্যদের। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সভাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায় মুসলিম লীগের নেতাকর্মীরা।
২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ও সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এদিন বিকেলে শহরের বিপিন পার্কে আয়োজিত হয় এক মহাসমাবেশ। সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো২৬ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের চিত্র।
প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মোমেনশাহী, ২৬শে ফেব্রুয়ারী। ঢাকাস্থ পুলিশ জুলুমের প্রতিবাদে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে অদ্য এখানে পূর্ণ হরতাল প্রতিপালিত হয়। মোমেনশাহির ইতিহাসে এই ধরণের হরতাল ইহাই প্রথম। দোকানপাট, সিনেমা, খেলাধুলা, আমোদ প্রমোদ সব কিছু সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে এবং স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত গমন হইতে ছাত্র-ছাত্রী উকীল, মোক্তার ও বাদী-বিবাদীগণ নিবৃত থাকেন। মফঃস্বল হইতে পায়ে হাঁটিয়া ও ট্রেনযোগে দলে দলে ছাত্র ও সাধারণ লোক শহরে আসিয়া পৌঁছে। পরে এক শোভাযাত্রা 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই", "নুরুল আমীন মন্ত্রীসভার পদত্যাগ চাই", "পুলিশ জুলুম বন্ধ কর" প্রভৃতি ধ্বনি সহকারে সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। ছাত্রীদের শোভাযাত্রা " রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই", মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চাই" প্রভৃতি ধ্বনি উত্থিত হয়। বেলা ৪টায় স্থানীয় বিপিন পার্কে জনাব আবুল মনসুর আহমদের সভাপতিত্বে প্রায় ৩০ হাজার লোকের এক সভা হয়। জবাব হালিমুদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসেন, উকিল জনাব গোলাম আলী, রফিকুদ্দীন ভূঁইয়া, হাতেম আলী তালুকদার, আলতাফুদ্দীন তালুকদার, সামসুল হক বক্তৃতা করে। বক্তাগণ বাংলা ভাষার দাবীকে সার্বজনীন দাবী বলিয়া উল্লেখ করেন। সভায় গৃহীত কতিপয় প্রস্তাবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, শোকার্ত আত্মীয়স্বজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, নুরুল আমীন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ, বে-সরকারী তদন্ত কমিটি গঠন, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিষদ সদস্যদের পদত্যাগের দাবী করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন দাবাইয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিষদের বাজেট অধিবেশন স্থগিত রাখা হইয়াছে বলিয়া উল্লেখ করা হয়।'
আন্দোলন পুরোপুরি দমন করতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক রফিকউদ্দিন ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এ সত্ত্বেও আন্দোলন দমে যায়নি। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ময়মনসিংহের নান্দিনা, চণ্ডীপাশা, লাউহাটি, হালুয়াঘাট, গফরগাঁও, ফুলবাড়িয়া, ঈশ্বরগঞ্জসহ জেলার সর্বত্র। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পালিত ২৪ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ঈশ্বরগঞ্জ, ২৪শে ফেব্রুয়ারী। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও জনসাধারণের উপর পুলিশের গুলীবর্ষণের প্রতিবাদে অদ্য এখানে ব্যবসায়ীগণ আপনা হইতেই সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ রাখিয়া পূর্ণ হরতাল করেন। ২৬শে ফেব্রুয়ারী এখানে এক শোভসভা আয়োজন করা হয়।'
একুশের আন্দোলন ময়মনসিংহে পালিত হয়েছিল মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা শহীদদের স্মরণে ময়মনসিংহে প্রথমবারের মতো শহীদ মিনার নির্মিত হয়।
তথ্যসূত্র:
ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া/ আহমদ রফিক
ভাষা আন্দোলন কোষ/ এম আবদুল আলীম।
১৩ এবং ১৫ মার্চ ১৯৪৮/ দৈনিক আজাদ
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২/ দৈনিক আজাদ
Comments