বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও রাষ্ট্র গঠনে যুক্ত করতে হবে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক কথা। কখনও বলা হয় এখানের পড়ুয়ারা স্বতন্ত্র মনোজগতে বাস করে। আত্মকেন্দ্রিক শিক্ষার্থীরা দেশের প্রতি তেমন দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী। তাদের আবাসিক হল নেই, ভালো শিক্ষকের সংস্পর্শ পাওয়ার সুযোগ কম। শিক্ষার অনেক কিছু থেকেই তারা পিছিয়ে। সনদ-সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা জীবনের দর্শন থেকে যোজন দূরে। মূল্যবোধ ও আদর্শের চর্চায় অগ্রপথিক নয় কখনো কখনো।
অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিক ও সরকারি শিক্ষার্থীরা বিদ্যাতায়নে অনেক সুযোগ পায়। আবাসিক হল থেকে পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে সঙ্গে জীবণাচরণের বিবিধ সম্মিলন ঘটায়। সংকটকালে দেশের ধ্বজা ধরে রাখে-জীবন দিতেও কাপর্ণ্যবোধ করে না। এসব বচনের অনেকটাই চাওর হয়েছে দীর্ঘদিনের বয়ানে। কিন্তু এবারের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একটা জিনিস পরিস্কার হয়ে গেছে-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রস্তুত দেশের কল্যাণে-প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও। বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই জীবনসংহারে। বুকের তাজা রক্ত আর দুর্বার সাহস তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে। তারা জ্ঞানের রাজ্যে অপরিসীম সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে পশ্চিমা বিশ্বের মত শিক্ষায় সাফল্য হয়নি এখনও। শিক্ষার মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। তবুও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখযোগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের যেকোনো আন্দোলনের সূতিকাগার বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পটভূমির উন্নয়ন ও পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা।
রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় সরাসরি অবদান রাখা বিশ্ববিদ্যালয়টি অতুলনীয় হয়ে আছে দেশের সমগ্র উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো একটি মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজ গঠন করা। এ সমাজই পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ সূচিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সহজেই প্রতিভাত যে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকগণ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন হয়েছেন। তারা নিরলস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কল্যানকর ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশের সর্বস্তরে অভূত কল্যাণ সাধন করে চলেছে। তাঁরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে-বিদেশে জ্ঞানবিতরণ করে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও চালিকাশক্তিরূপে কাজ করে অবদান রেখেছেন শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে আলোকিত করতে।
এরই ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষে দেশে বহু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনবদ্য অবদান রয়েছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও নীতিনির্ধারকদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক। অন্যদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় বেসামরিক প্রশাসনের বড় একটি অংশ তৈরি করেছে, আজও বিভিন্ন ক্যাডারের অধিকাংশ সদস্য এ বিদ্যাতায়নের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানও প্রণিধানযোগ্য।
বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত জনপদে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়- ১৯৯২ সালে। বর্তমান তালিকায় এর সংখ্যা ১১২। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় বৈচিত্র্য এনেছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও আকৃষ্ট করছে। বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ১১৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় রত। এদের মধ্যে ১৬ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী। তুলনামূলকভাবে এ সংখ্যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। গত তিন দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে শিক্ষক রয়েছেন ১৫ হাজার। ৭৭ শতাংশ শিক্ষক পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে মেধা পাচারও কমেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এখন বিতর্কের ঊর্ধ্বে। মার্কেট ইকোনমিতে হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, এমআইটি, প্রিন্সটন, কিংবা কেমব্রিজের মতো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ শতাংশই বেসরকারি খাতের আওতাধীন। ইউজিসি এখানে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে পড়ানোর সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে। এতে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কথা চিন্তাই করতে পারত না, তারাও কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ারও দৃষ্টান্ত আছে। গবেষণা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। ইউজিসির ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গবেষণায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ সরকার দুর্নীতি, অর্থপাচার ও লুট করে দেশকে একক দলের রাজনীতিতে পরিণত করার অপকর্মে লিপ্ত ছিল। দলীয় কর্মীদের অগাধ সম্পত্তি, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কায়েম করতে চেয়েছিলো একদলীয় শাসন। বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোও পরিণত করেছিলো সরকারি চ্যানেলের ন্যায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পৌছে গিয়েছিলো শূন্যের কোটায়। সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য কোটার আধিক্যে মেধাবীরা হয়ে পড়েছিলো নিষ্পেষিত।
আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকায় অবাক সারা বিশ্ব। দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শামিল হয়েছিলো এক কাতারে-দাবি আদায়ে। দারুণ এক ঐক্যে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস দেশের আপামর জনগোষ্ঠী। মন্ত্রী-এমপিরা কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যে ব্যতিব্যস্ত ছিলো। এলাকার উন্নয়নে ছিলো না তাঁদের মনোযোগ। বড় অঙ্কের টাকা দেনদরবার হতো মনোনয়ন বাণিজ্যে। নিজের ভোট নিজে প্রয়োগ করতে পারেনি ভিন্ন দলের বলে। দেশটা কেমন যেন একটা কর্তার ইচ্ছায় কর্মে পরিণত হয়েছিল। মতের অনৈক্য হলেই জামায়াত-শিবির-রাজাকার ট্যাগ দেওয়ায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা বাড়তে থাকে। দেশের যখন এরূপ দশা তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সোচ্চার হয়ে ওঠে রাজপথে। সরকার তাদের আন্দোলনে বিন্দুমাত্র সাড়া দেয়নি। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করায় আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা পালন করতে থাকে লাগাতার কর্মসূচি। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অগ্নিস্ফুরণ বিচ্ছুরিত হলেও এ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সব বিদ্যাতায়নে।
আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমুহ বিপদে সরকার মাঠে নামায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। তাতেও দমন করা যায়নি জনস্রোতকে। বাধ্য হয়েই জারি করা হয় কারফিউ। প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু তাতেও নিবৃত্ত করা যায়নি। অবশেষে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী প্রধানের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকায় অবাক সারা বিশ্ব। দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শামিল হয়েছিলো এক কাতারে-দাবি আদায়ে। দারুণ এক ঐক্যে। দ্রোহের দাবানলে জর্জরিত তরুণ শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ভুলবার নয়। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আশা জাগানিয়া ইস্পাত সম দৃঢচেতনা তাদের। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার দুর্জয় মনোবল নিয়ে তারা হাজির। 'আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাইবে আমার সত্য।'
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অগ্নিবাণী অগ্নিমূর্ত হয়ে দেখা দিলো তাদের কাছে। তারা রচনা করলো এক নতুন দৃষ্টান্তের। পৃথিবীর ইতিহাসের রাজনীতির পটপরিবর্তনের মহাকাব্যে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলো। অবাক বিস্ময়ে বাংলার জনগণ তাদেরকে বাহবা দিতে কার্পণ্য করেনি। পত্রিকার পাতায়-গণমাধ্যমে ইতিহাসের চিরস্বাক্ষী লাখো তরুণের বীরত্বগাঁথা উদ্দীপনার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জগদ্দল পাথরের ন্যায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে তারা যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল-তা অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালানোর ন্যায়।
প্রসঙ্গে হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর কথোপকথন উল্লেথ করছি-প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। "আমার কোন বইপত্র কি পড়েছ?" 'জ্বি হ্যাঁ।'"দুই একটার নাম বলতে পারবে [গলার স্বরে সন্দেহের আভাস?]" "আমি নছর পেয়াদা পড়েছি, আমাদের পাঠ্য ছিল।" "পাঠ্যের বাইরে কিছু পড় নাই?" "বাতায়ন পড়েছি।" "প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত?" "জ্বি"। খাঁ সাহেবের ভ্রূকুঞ্চিত হলো। বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না।
"কেমন লাগলো বাতায়ন?" "প্রথম অর্ধেক চমৎকার!" "বাকি অর্ধেক?" আমি চুপচাপ [খাঁ সাহেবের ঠোঁটের কোণে হাসির আভাস]।"আমার ধারণা ছিল আজকালকার ছেলেরা আমার মতো বড়দের লেখা পড়ে না।""আপনার ধারণা ঠিক না। আমরা ঠিকই পড়ি, আপনারাই পড়েন না। খাঁ সাহেব গম্ভীর হলেন। চশমা খুলে চশমার কাঁচ মুছতে লাগলেন। আমি সাহস করে বলে ফেললাম-"আপনি নিশ্চয় হুমায়ূন আহমেদের কোন বই পড়েন নাই।"খাঁ সাহেব থমথমে গলায় বললেন,"হুমায়ূন আহমেদ কে?""আমি। আমার নাম হুমায়ূন আহমেদ।"
অস্থির সমাজব্যবস্থায় মূল্যবোধ ও আদর্শ, সমাজ থেকে বিলীন হওয়ার পথে। রাজনীতির অশুভ ছায়ায় নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনাময় জীবন। সমাজের এরূপ ক্রান্তিলগ্নে দেখা দিলো একদল তরুণ সমাজ। তারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দুর্বার-অপরাজেয়।
খানিকক্ষণ চুপচাপ কাটল। তিনি চশমা চোখে পরলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। এক অসম বন্ধুত্বের সৃষ্টি হলো সেদিন [৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪]।
অরুণ প্রাতের তরুণ দলকে শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সর্বদা বিচার করা চলে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তা প্রমাণ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই তরুণ সমাজ নিয়ে অন্তহীন দুর্ভাবনা আমাদের। লেখাপড়ায় মন নেই। সারাক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত। অনেকে বিপথগামী। মরণনেশার ছোবলে জীবন-প্রদীপ ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছে কারো কারো।
অস্থির সমাজব্যবস্থায় মূল্যবোধ ও আদর্শ, সমাজ থেকে বিলীন হওয়ার পথে। রাজনীতির অশুভ ছায়ায় নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনাময় জীবন। সমাজের এরূপ ক্রান্তিলগ্নে দেখা দিলো একদল তরুণ সমাজ। তারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দুর্বার-অপরাজেয়। জীবন দিয়ে প্রমাণ করলো দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে, তারা কেবল নিজেদের কথা ভাবে না। ভাবে অন্যের কথাও। সুন্দর ও সত্যের পৃথিবী গড়তে জীবন দিতেও প্রস্তুত। আমরা বিস্মিত হলাম।
এ আবার কোন তারুণ্যের অগ্ন্যৎপাত। উপর্যুক্ত হুমায়ুন আহমেদের জীবনের গল্পের ন্যায়। তারা বিশ্বের সব খবর রাখে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, নানা বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। ভবিষ্যৎ দেশ পরিচালনায় হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার ন্যায় এই তরুণ সমাজ অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করবে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়তে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে তাদের চিন্তা, ত্যাগ ও মেধার।
Comments