কেন বই পড়বেন

বই, বই পড়ার অভ্যাস, জীবনযাপন,

ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার আগে সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম ছিল বই। তখন অনেকেরই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস ছিল। অথচ, বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, বই পড়ার বিষয়টি খুব কমই চিন্তা করি।

এ কথা খুবই পরিচিত যে, নিয়মিত বই পড়ার অনেক উপকারিতা আছে। তাই এটি নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু, নিয়মিত বই পড়ার অনেক সুবিধা আছে। এখানে তেমন কয়েকটি সুবিধার কথা তুলে ধরা হলো। যেগুলো যে কাউকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ‍বৃদ্ধি

প্রতিদিন বই পড়লে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং আরও সক্রিয় হয়। বই পড়ার উপকারিতা জানতে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে। একটি গবেষণা অনুসারে, বই পড়ার অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো- আলঝাইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগের প্রক্রিয়া ধীর করে। এর কারণ বই পড়লে মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয় এবং ব্রেন সচল থাকে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে শরীরের প্রতিটি অংশের ব্যায়াম প্রয়োজন। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় এবং মস্তিষ্ককে স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ রাখে।

চাপ কমানোর ভালো অভ্যাস

মানসিক চাপ কমানোর দারুণ একটি উপায় নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস। সাধারণত আমরা প্রতিদিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। যা আমাদের মানসিক চাপ বাড়ায়। এ থেকে মুক্তি পেতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে মস্তিষ্ক দুশ্চিন্তা মুক্ত হবে। যেমন- কেউ যখন একটি ভালো গল্প পড়েন, তখন তার সব মানসিক চাপ দূরে সরে যায়। একইসঙ্গে মস্তিষ্ককে শান্ত করে। আর মস্তিষ্ক শান্ত থাকলে মানসিক চাপ কমে যায়। এছাড়া, নিয়মিত বই পড়লে বিভিন্ন সমস্যার পরামর্শ বা সমাধান পাওয়া যায়।

শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি

বই পড়া কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে যদি এখনো নিশ্চিত না হন, তাহলে এই বিষয়টি আপনাকে আগ্রহী করতে পারে। নিয়মিত পড়লে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। যেকোনো ধরণের বই শব্দভাণ্ডার বাড়াতে সহায়ক। আর সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার ভাষার ওপর দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। ভাষা দক্ষতা নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। আবার প্রতিদিন বিভিন্ন বই পড়লে নতুন নতুন ভাষা শেখা যায়।

স্মৃতিশক্তি উন্নত করে

আগেই বলেছি নিয়মিত পড়া মস্তিষ্কের জন্য খুব ভালো একটি ব্যায়াম। কেউ যদি কাল্পনিক গল্পের বই পড়ে তাহলে তার মস্তিষ্ক বিভিন্ন চরিত্রের নাম এবং বিভিন্ন বিষয় মনে রাখতে বাধ্য হয়। ফলে, গল্পের প্লট বা ইতিহাস আমাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। প্রতিদিন বই পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, মস্তিষ্ক সুপার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর অন্যতম কারণ আমাদের মস্তিষ্কের প্রচুর তথ্য ধরে রাখার সক্ষমতা আছে। বই পড়লে এই ক্ষমতা আরও বাড়ে। তাই বই পড়ার অভ্যাস আমাদের স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে।

চিন্তার দক্ষতা বাড়ায়

প্রতিদিন বই পড়ার আশ্চর্যজনক সুবিধাগুলোর একটি- আমাদের চিন্তার দক্ষতা উন্নত করে। রহস্য উপন্যাস পড়ার অভ্যাস চিন্তার দক্ষতা বিকাশে ভূমিকা রাখে। আর চিন্তার দক্ষতা উন্নত হলে যেকোনো সমস্যা সমাধান সহজ হয়। আবার কোনো উপন্যাস পড়ার সময় আমাদের মন ভবিষ্যদ্বাণী বা অনুমান করতে বাধ্য হয়। এতে কল্পনা শক্তি বাড়ে। তাই বই পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্ককে স্মার্ট করে ও চিন্তার দক্ষতা বাড়ায়। যা আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি

বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তার লেখার দক্ষতা ভালো হয়। যেহেতু নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার ও কল্পনাশক্তি উন্নত হয়। তাই, একজন ভালো পাঠক একজন ভালো লেখক হয়ে ওঠেন। এখানে শুধু কল্পকাহিনী, বই, উপন্যাস লেখার কথা বলা হচ্ছে না। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে কিছু লেখার দক্ষতাকেও উন্নত করে। তাই যত বেশি বই পড়া হবে, লেখার দক্ষতা তত উন্নত হবে।

প্রশান্তি

প্রতিদিনের কোলাহল থেকে দূরে যেতে আমরা প্রায়ই ভ্রমণ পরিকল্পনা করি। উদ্দেশ্য থাকে একাকীত্বে কিছুটা সময় কাটানো। তবে, ভ্রমণের পরিকল্পনা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। অথচ, একটি বই পড়ে একই ধরনের প্রশান্তি পাওয়া সম্ভব। যারা উচ্চ রক্তচাপ বা উদ্বেগে ভুগছেন তারা পড়ার মাধ্যমে প্রশান্তি পেতে পারেন। আর মোটিভেশনাল বা আধ্যাত্মিক বই পড়লে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

বিনোদনের মাধ্যম

আমরা সিনেমা ও গান শুনতে টাকা খরচ করি, কিন্তু কেন? বিনোদনের জন্য, তাই না? তাহলে কেন বিনোদনের জন্য বই পড়া যাবে না? জানলে হয়তো অবাক হবেন যে, আমাদের প্রিয় কিছু চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজ বিখ্যাত উপন্যাস বা সেগুলো অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- বই পড়লে খরচ অনেক কম হয় এবং দীর্ঘসময়ের জন্য বিনোদন পাওয়া যায়। আমাদের আশপাশে অনেকে গ্রন্থাগার আছে। সেখানে যে কোনো বিষয়ের ওপর বই পাওয়া যায়। চাইলে সেখানে থেকে বই সংগ্রহ করে পড়তে পারেন। যদি লাইব্রেরিতে যেতে না পারেন তাহলে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে বিনামূল্যে অসংখ্য ই-বুক পাওয়া যায়। সেখানে থেকে বই সংগ্রহ করে সহজে বই পড়া সম্ভব।

স্বাস্থ্যগত সুবিধা থেকে শুরু করে স্মার্টনেস- বই পড়ার এমন অসংখ্য সুবিধা আছে। যেগুলো আমাদের নিয়মিত বই পড়তে উৎসাহিত করে। এছাড়া নিয়মিত বই পড়লে বিভিন্ন বিষয়ে জানার পরিধি বাড়ে। কিন্তু, বই পড়া শুরু না করলে বিষয়টি কারো কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু, একবার শুরু করলে এটা অভ্যাসে পরিণত হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

5h ago