ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ ও লক্ষণ, প্রতিরোধে যা করবেন

ফুসফুসের ক্যানসার
ছবি: সংগৃহীত

ফুসফুস ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়ার কারণে অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফুসফুস ক্যানসার সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস শাকুর খান।

ফুসফুসের ক্যানসার কী

ডা. আব্দুস শাকুর খান বলেন, ফুসফুসের ক্যানসার হচ্ছে ফুসফুসের এক ধরনের টিউমার। অর্থাৎ ফুসফুসের যে স্বাভাবিক কোষ আছে সেই স্বাভাবিক কোষের যখন অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হয়ে চাকার মত সৃষ্টি করে, তাকেই ফুসফুস ক্যানসার বলে। এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ক্যানসার যখন ফুসফুসে হয় এটা শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে না বরং অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে শনাক্ত ও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুরও কারণ হয়ে থাকে।

কেন হয়

ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার সরাসরি কারণ বলা কঠিন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতয় ঘটে যার কারণে ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে। কিছু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী আছে, যেমন- যারা ধূমপান করেন, তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন, অস্বাস্থ্যকর কলকারখানায় কাজ করেন, অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে থাকেন, তাদের ভেতর ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও জেনেটিক বা বংশগত কারণেও অনেকের ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে। কোনো পরিবারে একাধিক ব্যক্তির ফুসফুস ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি। এসব কারণের বাইরে বর্তমানে অধূমপায়ীদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ধরন

কোষগত এবং চরিত্রগত বিষয় বিবেচনা করে ফুসফুসের ক্যানসারের ধরন নির্ণয় করা হয়। ফুসফুস ক্যানসারকে প্রধানত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- স্মল সেল বা ছোট কোষের ফুসফুস ক্যানসার, যেখানে এক ধরনের বিশেষ কোষ থাকে, এই ছোট কোষের ফুসফুসের ক্যানসার বেশি ক্ষতিকারক। আরেকটি ধরন হচ্ছে নন স্মল সেল বা অক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যানসার।

লক্ষণ

ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম লক্ষন হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী কাশি হওয়া, কখনো কখনো কাশির সঙ্গে কফ এবং কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। ফুসফুসের ক্যানসারের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। ক্যানসার যদি ব্যাপকতা পায় এবং বুকে পানি চলে আসে অথবা ফুসফুসে বেশি ছড়িয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে, যেগুলো সব ক্যানসারেই দেখা যায়। যেমন- ওজন কমে যাওয়া, খাবারে অরুচি।

চিকিৎসা

ডা. আব্দুস শাকুর বলেন, ফুসফুস ক্যানসারের বিশেষ দিক হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে না। ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থা বলতে বোঝায় যখন তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। ক্যানসারের স্টেজিং বা ধাপের ওপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। ক্যানসারের নির্দিষ্ট স্টেজ অবধি রোগীর অস্ত্রোপচার করা যায়, পরবর্তীতে অন্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। বর্তমান সময়ে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া হয়। কোষের ধরন ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে টার্গেট করে যেটি কার্যকর হবে সেই ওষুধ দিয়ে রোগীকে টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া হয় ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায়।

ফুসফুসজনিত যেকোনো সমস্যা অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিরোধ

ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সবাইকে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন পরিহার করতে হবে। যে সমস্ত শিল্প কলকারখানায় কাজ করলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় বা ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে সেসব স্থানে স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থার উন্নয়ন করা এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করা। কলকারখানার ধোঁয়া, রাসায়নিক ও ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়া ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে বছরে একবার অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Yunus calls for peace

Yunus condemns attack at Amar Ekushey Boi Mela, orders swift action

In a statement, the chief adviser denounced the violence, emphasising that it goes against the open-minded spirit of the book fair, which honours the language martyrs of February 21, 1952, according to the CA's press wing

6h ago