সিগারেট না খেয়েও পরোক্ষ ধূমপানে যেসব বিপদ ডেকে আনছেন

পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক
ছবি: সংগৃহীত

নিজে ধূমপান করছেন না তার মানে আপনি ধূমপায়ী নন বিষয়টা এমন নাও হতে পারে। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে ধূমপায়ী ব্যক্তির ধূমপান থেকে নির্গত ধোঁয়া যারা গ্রহণ করছেন প্রতিনিয়ত, তারা পরোক্ষ ধূমপায়ী।

পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

পরোক্ষ ধূমপান কী

অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, যারা সরাসরি ধূমপান করেন তারা প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী। আর কোনো প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী ধূমপানের সময় পরিবেশে যে ধোঁয়া নির্গত করেন, তার আশপাশে থাকা ব্যক্তিরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে সেই ধোঁয়া গ্রহণ করেন। এটি হচ্ছে প্যাসিভ স্মোকিং বা পরোক্ষ ধূমপান। অর্থাৎ সরাসরি ধূমপান করছেন না কিন্তু অন্যদের ত্যাগ করা ধোঁয়া নিঃশাসের মাধ্যমে যারা গ্রহণ করছেন তারাই পরোক্ষ ধূমপায়ী।

পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক

পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা। পরোক্ষ ধূমপান কারা বেশি করছেন এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন ধূমপায়ীর বাসায় থাকা লোকজন। ঘরে থাকার সময় ধূমপায়ীরা যখন ধূমপান করেন তখন বাড়ির শিশু, অন্তঃসত্ত্বা এবং বয়স্ক ব্যক্তিসহ পরিবারের থাকা অন্য সদস্যরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক বছর আগে বিশ্বে প্রত্যক্ষ ধূমপানের কারণে ৬০ লাখ মানুষ মারা যেতেন। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানে মারা যেতেন ৬ লাখ। সম্প্রতি ২০২৪ সালের হিসেব বলছে, বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যান ধূমপানের কারণে। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যান ১২ লাখ মানুষ। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মৃত্যু হার বিগত সময়ের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষ ধূমপানের কারণে যে ক্ষতি হয় ধূমপায়ী ব্যক্তির, পরোক্ষ ধূমপানের অবস্থা তৈরি করে তিনি অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলে দেন।

১. ধূমপানের কারণে ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফুসফুসে শ্বাসকষ্টের রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) হয়। পরোক্ষ ধূমপানে এই সমস্যা হতে পারে।

২. হার্ট অ্যাটাক, হার্টের বিভিন্ন রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় পরোক্ষ ধূমপান।

৩. রক্তচাপ বেড়ে যায়।

৪. বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে ফুসফুস, মুখ গহ্বর, স্বরযন্ত্রে বা গলার ক্যানসার বেশি হয়।

৫. যারা ধূমপায়ী তাদের যৌন অক্ষমতাজনিত সমস্যায় ৮০ শতাংশ দায়ী হচ্ছে ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে।

৬. পরোক্ষ ধূমপান নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

৭. অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে, শিশুর জন্মের সময় নানাবিধ সমস্যাসহ শিশুর মৃত্যু হতে পারে, জন্ম নেওয়া শিশুর ওজন অনেক কম হতে পারে।

৮. শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, ফুসফুসের নানা সংক্রমণ, হার্ট, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভারজনিত বিভিন্ন রোগ হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ে।

৯. কম বয়সের শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। বয়স্কদের অ্যাজমা, সিওপিডিসহ শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, ফুসফুস, গলাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।

করণীয়

যারা নিজেরা ধূমপান করেন না কিন্তু ধূমপায়ীদের সঙ্গে সারাক্ষণ থাকতে হয় তাদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।

নিজের বাড়ি এবং কর্মস্থলকে ধূমপানমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে সম্মিলিতভাবে। ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করতে হবে এবং ওই স্থানের বাইরে যাতে কেউ ধূমপান না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

কর্মস্থলে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান না থাকলে এবং ধূমপায়ীদের সাথে সারাক্ষণ থাকতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে, প্রতিরক্ষামূলক চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কিছুটা হলেও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। এ ছাড়া ধূমপানের সময় বদ্ধ না রেখে ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে যাতে ঘরে বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে করে ধূমপানে নির্গত ধোঁয়া বাইরে চলে যাবে। যতটা সম্ভব ধূমপানের সময় ধূমপায়ী ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত প্রত্যেকের।

 

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

In a year stripped of spectacle, interim govt set to deliver an outlay shaped by restraint, realism and possibly, reform

10h ago