ওজন কমানো থেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ওটসের যত উপকার

ওটসের উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

ওটস একটি স্বাস্থ্যসম্মত শস্যজাতীয় খাবার। বর্তমানে এই খাবারটির জনপ্রিয়তা অনেক। সাধারণত শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর সময় এ খাবারটি বেশি খাওয়া হয়। তবে ওজন কমানোর উদ্দেশ্য ছাড়াও এই খাবারটি খাদ্যতালিকায় রাখলে পাওয়া যাবে স্বাস্থ্য উপকারিতা।

ওটস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম।

তিনি বলেন, 'ওটস পুষ্টিগুণে ভরপুর ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন, অ্যাভিন্যানথ্রামাইড ইত্যাদি অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ওটস ভাতের বিকল্প হিসেবে সকাল, দুপুর অথবা রাতের প্রধান খাবার হতে পারে।'

ওটসের উপকারিতা

  • ওটস উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রেখে ক্ষুধাভাব কমায়। এটি শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করার প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়াও ওটসে থাকা বেটা-গ্লুকোনের প্রভাবে পাকস্থলীতে পেপটাইড ওয়াইওয়াই নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমায়। আর সারাদিনে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কম হলে ওজন কমানোও সহজ হয়।
  • ওটসের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন কলা, আপেল, খেজুর, ব্ল্যাকবেরি, বাদাম ইত্যাদি যোগ করে খাওয়া হলে এটি কৌষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
  • ওটসের পুষ্টি উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণও কমায়। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। তাই বলা যায় ওটস হার্টের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ওটস একটি উপকারী খাবার। এটি কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় ধীরে ধীরে হজম হয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমায় এবং লো ক্যালোরি ও সুগার ফ্রি হওয়ায় রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
  • ওটস খেলে শরীরের সঙ্গে মনও ভালো থাকে। কারণ ওটস খেলে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন দুশ্চিতা কমায় এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • ওটস খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ওটসের উপাদান অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যকটেরিয়াকে পুষ্টির যোগান দিয়ে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এজন্য ওটসকে প্রিবায়োটিক খাবার বলা হয়।
  • ওটসে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। এই উপাদানগুলো ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্তন ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশ কমিয়ে দেয়।
  • শরীরের বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ওটসের পুষ্টি উপাদান।

কীভাবে খাবেন

ওটস বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া যেতে পারে।

  • এটি শুকনো চিড়ার মত খেতে পারেন।
  • দুধ দিয়ে ভিজিয়ে বিভিন্ন ফল মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে চিনি যোগ করা যাবে না। চিনি যোগ করলে উপকারের পরিবর্তে অপকার বেশি হবে। যারা দুধ খেতে পারেন না তারা ওটস দুধ ছাড়া হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে নিতে পারেন।
  • এ ছাড়াও ওটস দিয়ে প্যানকেক, বিস্কিট,স্মুদি, স্যুপ তৈরি করা যেতে পারে।
  • ওটস সবজি দিয়ে ফ্রাইড রাইসের মতো রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা

  • অনেকের ধারণা শুধু ওটস খেলে ওজন কমে যাবে। কিন্তু শুধু স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ওটস রাখলে তখন এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। অন্যথায় প্রতিদিন ওটস খেতে থাকলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যেতে পারে।
  • একটানা প্রতিদিন বা তিনবেলা ওটস খাওয়া ঠিক নয়। ভাত, রুটি বাদ দিয়ে একটানা ওটস খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পাবে। অ্যাসিডিটি, পেটের সমস্যা, পেট ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর ওটস খাওয়ার পর এসব সমস্যা দেখা দিলে এটি খাওয়া বাদ দিতে হবে।
  • যাদের কিডনির সমস্যা, আইবিএসের সমস্যা আছে তাদের ওটস খাওয়া উচিত নয়।
  • যাদের রুচির সমস্যা অর্থাৎ খাবার খেতে ইচ্ছা করে না তারা ওটস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এটি ক্ষুধা আরও কমিয়ে দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago