কী দেখবেন নেপালে

নেপাল ভ্রমণ
গান্দ্রুক। ছবি: সাইমা তাবাসসুম উপমা

এক অদ্ভুত মায়ার দেশ নেপাল। হিমালয় কন্যা নামেই তার পরিচিতি। বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয় দেশটি। সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুরা যান সেখানে।

আমাদের দেশ থেকেও প্রতি বছর অনেক মানুষ নেপাল ভ্রমণে যান। যারা সামনে দেশটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য আজ থাকছে নেপালের দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি তালিকা।

কাঠমান্ডু

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু অনেক পুরোনো একটি শহর। কাঠমান্ডু ভালোভাবে ঘুরে দেখতে কমপক্ষে দুই রাত দুই দিন হাতে রাখতে হবে।

চলুন জেনে নিই কাঠমান্ডুতে কোন কোন জায়গায় ঘুরবেন-

দরবার স্কয়ার

নেপালের রাজপ্রাসাদের ঠিক উল্টো দিকেই এটি অবস্থিত। এখানে অনেকগুলো মন্দির রয়েছে।

দরবার স্কয়ার
দরবার স্কয়ার। ছবি: সাইমা তাবাসসুম উপমা

রাজাদের আমলে জনসাধারণের একত্রিত হওয়ার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই দরবার স্কয়ার। একদম সকালে আর বিকেলের দিকে কবুতরের ঝাঁক দেখা যায় এখানে। দরবার স্কয়ার ঘিরে গড়ে উঠেছে মার্কেট। রাস্তায় জমজমাট খোলা মার্কেটেরও দেখা মেলে। সুন্দর সুন্দর জিনিস খুঁজে পাবেন সেখানে।

বৌধনাথ স্তূপ

এখানকার কারুকার্যে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা খুঁজে পাবেন। এর বিশাল গম্বুজ আপনার চোখে পড়বে সবার আগে। রয়েছে পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। গম্বুজ ও টাওয়ারের মাঝখানে দেখতে পাবেন চারকোণা বাক্স, যার চার দিকে চার জোড়া চোখ।

পশুপতিনাথ মন্দির

শিবের সেবার ওপর ভিত্তি করেই এই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে। শুধু নেপালিরাই নন, প্রতি বছর ভারত এবং অন্যান্য দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন শিবের পূজা করার জন্য।

স্বয়ম্ভূনাথ মন্দির

কাঠমান্ডুর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং প্রাণবন্ত স্থানগুলোর মধ্যে একটি স্বয়ম্ভূনাথ মন্দির। একে বানর মন্দিরও বলা হয়। এখানকার কাঠের মুকুট, পাথরের শিলালিপি, চাকা আপনার মন জয় করবেই।  

গার্ডেন অব ড্রিমস

গার্ডেন অফ ড্রিমস
গার্ডেন অফ ড্রিমস। ছবি: সাইমা তাবাসসুম উপমা

উদ্যানটি শহরের মাঝখানে একটি নির্মল আনন্দের জায়গা। এর প্রধান আকর্ষণ গার্ডেন, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, পুকুর।

নমো বুদ্ধ মন্দির

কাঠমান্ডু শহরের একটি পবিত্র স্থান নমো বুদ্ধ মন্দির। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত নমো বুদ্ধ তার আসল সৌন্দর্য মেলে ধরে। আবহাওয়া সাধারণত সুন্দর থাকে, আকাশ থাকে পরিষ্কার। হিমালয়ের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য চমৎকার স্থান এটি।

রাণীপোখরি

এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পুকুর। রাতে এর অন্য এক সৌন্দর্য দেখা যায়।

থামেল

থামেলে প্রচুর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রাতে থামেল যেন জেগে উঠে অন্য থামেল হয়ে।

পোখারা

নেপাল ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি পোখারায় আপনার পা না পড়ে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনি নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবেন নিজের মাঝে।

পোখারা
ফেওয়া লেক। ছবি: সাইমা তাবাসসুম উপমা

পোখারায় যা যা দেখতে পারেন-

ফেওয়া লেক

এই লেক আপনাকে অন্যরকম ভালো লাগায় ভরিয়ে তুলবে। রাত হতে হতে জ্বলে উঠবে আলো আর আপনাকে নিয়ে যাবে সুরের দেশে। নৌকা চালানো, সাঁতার কাটা, সেইলিং, মাছ ধরা ও কায়াকিং সবই করতে পারবেন এখানে। এই লেকের মাঝে বারাহি নামের একটি মন্দিরও আছে। 

ডেভিস ফল

এটি একটি সুন্দর ঝরনা। ফেওয়া লেকের পানি এই ঝরনার মূল উৎস। শীতের সময় গেলে এখানে ঝরনা দেখা যায় না। বর্ষাকালে দেখা পাবেন।

গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা

ডেভিস ফলের পাশেই এই গুহার অবস্থান। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে এই গুহার ভেতর যেতে হয়। এই গুহাকে শিবের পুরোনো ঘর মনে করা হয়।

জাংছুব ছোলিং গুম্পা

এই মঠটি তিব্বতিয়ান শরণার্থীদের আবাসস্থল।তিব্বতিয়ান ধাঁচে বানানো তাই সবার নজর কাড়ে এটি। এখানে ৭ ফুট লম্বা কপার ও সোনা দিয়ে মোড়ানো বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ।

সারাংকোট

সারাংকোট ভোরে আর সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি সুন্দর। এখান থেকে পোখারা ভ্যালি, অন্নপূর্ণা পর্বত ও ফেওয়া লেক চোখে পড়ে। সূর্যোদয়ের অসাধারণ দৃশ্য দেখার জন্য সবাই এখানটায় যান। এখানে আপনি প্যারাগ্লাইডিং করতে পারবেন, যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে পোখারা ভ্রমণে।

পোখারা শান্তি স্তূপ

নিস্তব্ধতাকে উপলব্ধি করতে চাইলে অবশ্যই যাবেন পোখারা শান্তি স্তূপ। পিস প্যাগোডা নামে পরিচিত এই প্যাগোডা ফেওয়া তাইয়ের ওপর অবস্থিত। 

নেপাল ভ্রমণ
পিস প্যাগোডা। ছবি: সাইমা তাবাসসুম উপমা

এখানে পৌঁছানোর বেশ কিছু রাস্তা আছে। চাইলে আপনি নৌকায় চড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে পারেন, আবার জিপ নিয়েও যেতে পারেন। তবে যেভাবেই যান, কিছুদূর হাঁটতেই হবে।

ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়াম

পোখারার জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এখান থেকে তিনটি পর্বতশৃঙ্গ- ধওলাগিরি, অন্নপূর্ণা ও মানাসুল দেখা যায়।

গুরখা মেমোরিয়াল মিউজিয়াম

গুরখা মিউজিয়াম পোখারার জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এবং শান্তি রক্ষা মিশনে নেপালি সৈনিকদের অর্জনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

অন্নপূর্ণা প্রজাপতি জাদুঘর

হরেক রঙের প্রজাপতি দেখতে চাইলে এই ছোট জাদুঘরে চলে যান। নানা প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাবেন। 

নাগারকোট

মেঘের ওপর থাকতে চান? তাহলে অবশ্যই নাগারকোট ঘুরতে যান। আপনার থাকার হোটেলটির জানালা দিয়ে প্রায়ই মেঘ ঢুকে হয়তো আপনাকে কিছুটা ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। নেপালে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান নাগারকোট। তাই নেপাল ভ্রমণে যাবেন অথচ নাগারকোটে যাবেন না, এটা তো হতেই পারে না।

কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। নাগারকোট থেকে হিমালয়ের দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর দেখা যায়। বিশেষ করে সূর্যোদয় দেখার জন্য নাগারকোট প্রসিদ্ধ। নাগারকোট থেকে কাঠমান্ডু শহরটিকেও দারুণভাবে দেখা যায়। হিমালয়ের ১৩টি পর্বতশৃঙ্ঘের মধ্যে ৮টিই নাগারকোট থেকে দেখা যায়। এ ছাড়া যারা হাইকিং করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এক কথায় এটি সেরা স্থান।

গান্দ্রুক

গান্দ্রুকে খুব কম পর্যটকই যায়। এটি মূলত অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প যাওয়ার পথে পড়ে। শহর থেকে যাওয়ার অর্ধেক রাস্তা সুন্দর হলেও বাকি পথ রোলারকোস্টার থেকে কম কিছু না! পাহাড়ি এই দুর্গম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ আপনাকে হতেই হবে। গান্দ্রুক ছবির মতো সুন্দর। পাহাড়ের ওপর সারি সারি বাড়ি, গোছানো দারুণ একটি গ্রাম।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে মাচুপুছারে, অন্নপূর্ণা সাউথসহ অনেকগুলো পাহাড়ের সারি দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায়।

 

নেপালের সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। আরও অনেক অনেক জায়গা রয়েছে নেপালে দেখার মতো, ঘোরার মতো। তবে এই জায়গাগুলোতে আপনি মোটামুটি নেপাল পুরোটা ঘুরে আসার অনভূতি পাবেন।

কীভাবে যাবেন

নেপালের ভিসা পেতে আপনাকে নেপাল দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অন-অ্যারাইভাল ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভিসা পেয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন।

যাওয়ার উড়োজাহাজের ভাড়া তারিখের ওপর নির্ভর করে। তবে হাতে সময় নিয়ে কাটলে ১৬ হাজার টাকায় যাওয়া-আসার টিকিট পেয়ে যেতে পারেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago