সুন্দরবন ভ্রমণের আগে যা জানা জরুরি

সুন্দরবনের কোকিলমনির কাছে খাল পার হচ্ছে একদল চিত্রা হরিণ।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত পানির বন সুন্দরবন। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানটি দেখতে।

সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্রের মূল আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনে গেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা সবসময় না পাওয়া গেলেও এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীরবতা ও জীববৈচিত্র্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়া, দেখতে পাওয়া যায় হরিণ, বানর, বন্য শুকর, বন বেড়াল, ডলফিন, বিভিন্ন পাখি।

শহুরে কোলাহলের বাইরে গিয়ে অপরূপ প্রকৃতি দেখতে সুন্দরবনের জুড়ি মেলা ভার। চাইলে সময় করে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন।

কখন যাবেন

সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়কালটি বন ও প্রকৃতি শান্ত থাকে।

 

 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সুন্দরবনে যেতে চাইলে প্রথমে যেতে হবে খুলনা। খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা অথবা সাতক্ষীরার শ্যামনগর হয়ে সুন্দরবনে যাওয়া যায়।

একদিনের জন্য সুন্দরবন ঘুরে দেখতে চাইলে করমজল অথবা হাড়বাড়িয়া যেতে হবে। মোংলা থেকে করমজল ও হাড়বাড়িয়া যেতে হয়। সেখান থেকে ট্রলারে করে একদিনের জন্য সুন্দরবনের কিছু জায়গা ঘুরে আসা যায়।

সাঁতরে পশুর নদী পার হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

সুন্দরবনে যেতে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়। নিজ ব্যবস্থাপনায় সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হওয়ায় আপনি চাইলে ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নিতে পারেন।

ট্যুর অপারেটরদের বিভিন্ন রকম প্যাকেজ থাকে। তবে তিন দিন-দুই রাতের প্যাকেজটিই বেশি জনপ্রিয়। সাধারণত এসব প্যাকেজে ভ্রমণের অনুমতি এবং ফি, খাওয়ার খরচ, সুন্দরবনের কিছু দর্শনীয় জায়গা ঘুরে দেখাসহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকে। অবশ্যই প্যাকেজ নেওয়ার আগে ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে প্যাকেজের বাইরে কোনো ধরনের খরচ আছে কি না।

যেখানে ঘুরবেন

বন বিভাগ সুন্দরবনের সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না। আর কিছু জায়গায় যেতে প্রয়োজন হয় বিশেষ অনুমতির।

করমজল ও হাড়বাড়িয়া: এই দুটো জায়গা মোংলা থেকে সবচেয়ে কাছে। করমজল হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। হাড়বাড়িয়ার মূল আকর্ষণ কাঠের ট্রেইল, পদ্মপুকুর ও ওয়াচ টাওয়ার।

কটকা ও কটকা বীচ: কটকায় একটি কাঠের ট্রেইল রয়েছে, যেখান থেকে দেখা যায় হরিণের দল, নানা পশুপাখি আর কিছুদূর পরেই সমুদ্রসৈকত। দেখা মেলে লাল কাঁকড়ার। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষা এই কটকা সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা।

দুবলার চর: এটি একটি ছোট দ্বীপ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূণ্যস্নান ও রাসমেলার জন্য এই জায়গাটি বিখ্যাত। প্রতি বছর কার্তিক মাসে তিন দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জেলেদের বসতি রয়েছে।

হিরণ পয়েন্ট: এটি সুন্দরবনের সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এখানে কাঠের তৈরি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অনেক ধরণের বন্য প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলতে পারে।

সুন্দরবনের খালে মাছ ধরছেন স্থানীয় জেলেরা।

খরচ

লঞ্চ, জাহাজ বা ট্রলারযোগে সুন্দরবনে যেতে হয়। গহীন বনে ঢুকতে হয় নৌকায়।

কম খরচে একদিনে সুন্দরবনের কিছু জায়গা ঘুরে দেখা যায়। অভয়ারণ্যে দেশি পর্যটক, শিক্ষার্থী ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফি নির্ধারণ করা আছে।

একদিনে ট্রলারে সুন্দরবনের করমজল, কালাবগী ও কলাগাছিয়া ঘুরতে খরচ হয় মাথাপিছু প্রায় দুই হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এর সঙ্গে হাড়বাড়িয়া, শেখেরটেক ও দোবেকীর মতো স্পটে ঘুরতে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

ট্যুর অপারেটরদের তিন দিনের প্যাকেজে জনপ্রতি ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লঞ্চে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগে।

প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য

● সুন্দরবন ভ্রমণের ন্যূন্যতম তিন দিন আগে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। যে তারিখে যেতে চান তার অন্তত পাঁচ দিন আগে ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

● শীতে সুন্দরবনে গেলে অবশ্যই শীতের ভারী পোশাক নিতে হবে।

● লোকালয় থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে। সুতরাং, জরুরি প্রয়োজনীয় সব জিনিস ও ওষুধ গুছিয়ে নিতে হবে।

● দল ছাড়া সুন্দরবনে প্রবেশ করা নিরাপদ না। দলে বন বিভাগের একজন নিরাপত্তারক্ষী অবশ্যই থাকতে হবে।

● ট্যুর গাইডের কথা মেনে চলতে হবে।

● সুন্দরবনে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।

● জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ক্ষতি করা যাবে না। বনের ভেতরে যথাসম্ভব নীরব থাকতে হবে।

● প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে। বনের ভেতরে কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা অনুচিত।

তথ্যসূত্রঃ

১। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়

২। ভ্রমণ গাইড

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

11h ago