বিশ্বের বিস্ময়কর ৭ টানেল

ছবি: সংগৃহীত

মহাসাগরের নিচে, হিমবাহের ভেতর দিয়ে কিংবা মাটি খুঁড়ে তৈরি করা সুড়ঙ্গ বা টানেল দীর্ঘকাল ধরে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে আসছে। বড় শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগতিতে চলাচল করা কিংবা ২টি দ্বীপের মধ্যে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত ও গতিশীল করার জন্য এই টানেলগুলো তৈরি করা হয়।

বিশ্বে অসংখ্য টানেল আছে। তবে আজ যেগুলোর কথা উল্লেখ করব, সেগুলো সবচেয়ে সুন্দর টানেলগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

গথার্ড বেজ টানেল, সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার ভেতর দিয়ে নির্মিত ৫৭ কিলোমিটার (৩৫.৫ মাইল) দীর্ঘ এই টানেলটি বিশ্বের দীর্ঘতম ও গভীরতম রেল টানেল। ২০১৬ সালে এই এই রেল টানেলটি চালু করা হয়েছে। অনন্য এই স্থাপনাটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল বা প্রকৌশল বিস্ময় হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

ছবি: রয়টার্স

ল্যার্ডল টানেল, নরওয়ে

নরওয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় টানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন টানেলের মাধ্যমে দেশটির অনেক উপকূলীয় শহর ও দ্বীপকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ল্যার্ডল টানেলের দৈর্ঘ্য ২৪.৫ কিলোমিটার (১৫.২৩ মাইল) এবং এটি বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক টানেল।

অসলো ও বার্গেন শহরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম সড়ক সংযোগ তৈরি করেছে এই টানেলটি। ২০০০ সালে এটি চালু করা হয়।

ছবি: সংগৃহীত

২০ মিনিটের এই ড্রাইভে চালকরা মনোযোগ হারাতে পারেন, এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে প্রকৌশলীরা প্রতি ৬ কিলোমিটার পরপর বিশেষ শিলা চেম্বার তৈরি করেছেন এবং নীল-হলুদ আলো দিয়ে সূর্যোদয়ের অনুকরণে অকর্ষণীয় ডিজাইন করেছেন।

চ্যানেল টানেল, যুক্তরাজ্য/ফ্রান্স

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সংযুক্তকারী ৫০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল টানেল এটি। সমুদ্রের নিচ দিয়ে দেশ ২টির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। উনিশ শতকের প্রকৌশলীরা ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে এই টানেল তৈরির কথা বিবেচনা করেছিলেন।

৬ বছর ধরে নির্মাণের পর ১৯৯৪ সালে টানেলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্তমানে মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীরা প্যারিস ও লন্ডনের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন। এ ছাড়া ইউরোটানেল নামের একটি শাটল সেবাও রয়েছে যেটা দিয়ে মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে।

টোকিও বে অ্যাকুয়া-লাইন, জাপান

অগণিত দ্বীপ ও বিস্তৃত উপকূল থাকায় জাপান দীর্ঘকাল ধরেই টানেল নির্মাতাদের জন্য আদর্শ জায়গা। টোকিও বে অ্যাকুয়া-লাইন কানাগাওয়া এবং চিবা নামক দুটি প্রসাশনিক অঞ্চলকে যুক্ত করেছে, ফলে এ দুটি এলাকায় যাতায়াতের জন্য দীর্ঘ পথ গাড়ি চালানোর প্রয়োজন হয় না। এটি ট্রান্স-টোকিও বে এক্সপ্রেসওয়ে নামেও পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

টানেলটির সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ২৩.৭ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৪.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু এবং সমুদ্রের নিচ দিয়ে ৯.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল রয়েছে। এটি বিশ্বের চতুর্থ দীর্ঘতম পানির নিচের টানেল।

সিইকেন টানেল, জাপান

গথার্ড বেজ টানেল বিশ্বের দীর্ঘতম রেলওয়ে টানেল, এটা সত্যি। কিন্তু সিইকেন টানেলটিও প্রকৌশল বিদ্যার একটি অনন্য নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য। পুরো টানেলটির দৈর্ঘ্য ৫৩.৮৫ কিলোমিটার (৩৩.৪৬ মাইল)। এটি জাপানের বৃহত্তম দ্বীপ হোনশুকে উত্তরের হোক্কাইডোর সঙ্গে সংযুক্ত করে। 

১৯৫০ এর দশকে বেশ কয়েকটি ফেরি দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম এই টানেলটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বর্তমানে এই টানেলটি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয়। টোকিও থেকে সারোপ্পো পর্যন্ত যে বুলেট ট্রেন, সেটিও এই টানেলের ভেতর দিয়েই যায়।

 

ইয়ুংফাউ রেলওয়ে, সুইজারল্যান্ড

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নির্মিত ইয়ুংফাউ রেলওয়েকে প্রকৌশলের অন্যতম বড় বিস্ময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই রেলওয়ে সুইস আল্পসের কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন পর্বতের মধ্য দিয়ে গেছে।

১৮৯৩ সালে অ্যাডলফ গাইয়ার-জেলার প্রথম এই রেলওয়ে টানেলটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯১২ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

২ হাজার ৬১ মিটার (৬,৭৬২ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত ক্লেইন শেইডেগ থেকে শুরু হয়ে আইগার পর্বতের ভেতর দিয়ে হাতে কাটা সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে এই রেললাইনটি প্রবাহিত হয়েছে।  আইগারে ২টি স্টেশন রয়েছে, যেগুলোর নাম আইগারওয়ান্ড ও আইসমির। এই ২টি স্টেশন থেকে সুইস পর্বতমালার অন্যন্য দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

ইয়ুংফাউ স্টেশন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৪৫৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু স্টেশন।

কু চি টানেল, ভিয়েতনাম

হো চি মিন সিটির উপকণ্ঠে তৈরি এই টানেলটি ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে ভিয়েতনামকে ধ্বংস করে দেওয়া যুদ্ধ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভিয়েতনামিদের বিভিন্ন অবস্থানে আক্রমণের জন্য এবং গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্য এই টানেলটি ব্যবহৃত হয়েছে।

৭৫ মাইল দীর্ঘ এই বিশাল টানেল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর বারবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এগুলোকে ধ্বংস করা যায়নি। বর্তমানে ভিয়েতনাম সরকার এটিকে স্মৃতিসৌধ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Comments

The Daily Star  | English

Trump started this war, we will end it, says Iranian military

Iran vowed to defend itself a day after the US dropped 30,000-pound bunker-buster bombs onto the mountain above Iran's Fordow nuclear site

1d ago