ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন ‘সিটি অব জয়’ কলকাতা

কলকাতা
হলুদ ট্যাক্সির শহর কলকাতা। ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/স্টার

কলকাতা শহর, যেখানে পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। অদ্ভুত এক যুগলবন্দী। রসগোল্লা থেকে দই, ট্রামের ঘণ্টাধ্বনি থেকে গড়ের মাঠে আড্ডা, নিউমার্কেটে শপিং কিংবা হাওড়া ঘাটে বিকেল বিলিয়ে দেওয়া উন্মাদনা যেন কলকাতার সর্বত্র।

'সিটি অব জয়' খ্যাত হলুদ ট্যাক্সির এই শহরে খুঁজে পাবেন ভালোবাসা কিংবা ভালোবেসে ফেলবেন নিজেকেই। সে জন্যই হয়ত অঞ্জন দত্ত গেয়েছিলেন, 'তবু আসব আমি তোমার পাড়ায়, ফিরে আসব আমি তোমার পাড়ায়।' 

এবার তাহলে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা করেই ফেলুন আনন্দের শহর কলকাতায়। কলকাতায় সড়ক, রেল ও আকাশপথে তিনভাবেই যাওয়া যায়। যদি ভিসা না থাকে, তাহলে অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করে নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হবে।

হাওড়া ব্রিজ
হাওড়া ব্রিজ। ছবি: সাদী মুহাম্মদ আলোক/স্টার

দেখে নিন কলকাতা গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরে ছুটিটাকে পরিপূর্ণ করতে পারবেন।

হাওড়া ব্রিজ

হুগলি নদীর ওপরে মনোরম হাওড়া ব্রিজ কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ। ব্রিজটির মাঝে কোনো পিলার নেই। বিকেলে নৌকা ভ্রমণে কিংবা রাতের হাওড়া ব্রিজ হয়ে ওঠে অনন্য সুন্দর।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

কলকাতায় দর্শনীয় স্থানগুলোর নাম বলতে হলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কথা প্রথমেই আসবে। সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত এই মহলটি রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়। এটি বর্তমানে একটি জাদুঘর। সোমবার ছাড়া বাকি ৬ দিন এর গ্যালারিগুলো খোলা থাকে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/স্টার

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গল্প আমরা কে না শুনেছি। ঠাকুরদের পৈতৃক বাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন ছাড়া শহরে থাকা যেন অসম্পূর্ণ। চমৎকার এই বাড়িটি কলকাতার সবচেয়ে অত্যাশ্চর্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর একটি। এখানেই জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পার করেছেন যৌবন।

কফি হাউজ

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আর না থাকলেও, সব স্মৃতি আগলে রেখে কলেজ স্ট্রিটে কফি হাউজ ঠিকই রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের উল্টোদিকে কলকাতার প্রাচীনতম কফি হাউস এটি।

কফি হাউজ
কফি হাউজ। ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/স্টার

সায়েন্স সিটি

বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ঘুরে আসতে পারেন সায়েন্স সিটি থেকে। এখানে রয়েছে থ্রি-ডি শো, স্পেস ট্র্যাভেল শো এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিনোদনের ব্যবস্থা।

বেলুর মঠ

কলকাতা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই নিদর্শনটির কারুকার্য সত্যিই মুগ্ধকর। এটি একটি সুপরিচিত আন্তর্জাতিক তীর্থস্থানও।

প্রিন্সেপ ঘাট

জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে নির্মিত প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতা সবচেয়ে পুরোনো দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম। বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় এখান থেকে একটা নৌকা ভাড়া করে ঘুরে ফেলুন।

প্রিন্সেপ ঘাট
প্রিন্সেপ ঘাট। ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/স্টার

দক্ষিণেশ্বর মন্দির

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত স্থান। মন্দিরের স্থাপত্যের মাস্টারওয়ার্ক শ্বাসরুদ্ধকর। 

বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম

কলকাতার বিখ্যাত স্থানগুলোর কথা বলতে গেলে বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম বাদ দেওয়া যাবে না। এটি জওহরলাল নেহেরু রোডে অবস্থিত। এখানে একটি বিশাল লাইব্রেরি এবং অত্যাধুনিক প্রজেকশন সুবিধাসহ সুবিশাল থিয়েটার রুম আছে।

কলেজ স্ট্রিট

মধ্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিট পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরোনো বইয়ের বাজার। যারা বই পড়তে পছন্দ করেন, তাদের অবশ্যই এখানে যাওয়া উচিত। এখানে পাওয়া যাবে না এমন কোনো বই মনে হয় নেই। 

কলেজ স্ট্রিট
কলেজ স্ট্রিটের একটি বইয়ের দোকান। ছবি: জারীন তাসনিম মৌরি/স্টার

স্নো পার্ক

প্রচণ্ড গরমে বরফের মজা নিতে নিউ টাউনের এক্সিস মলে একদম শেষ তলায় ৯ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে কলকাতার প্রথম স্নো পার্ক গড়ে উঠেছে।

পার্ক স্ট্রিট 

সাধারণ কলকাতাবাসীর কাছে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট জায়গাটি এখনো সাহেবপাড়া হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় ধাঁচের জীবনচর্যা, খাওয়াদাওয়া, পানীয়, পোশাক, গানবাজনা ইত্যাদি যেন শহরের ভেতর এক ছোট্ট ইউরোপ। এখানে অক্সফোর্ড বুক স্টোরের কাছাকাছি পেয়ে যাবেন বইয়ের এমন অনেক দোকান যেখানে সস্তায় কিনতে পারবেন অনেক দুষ্প্রাপ্য বই।

ছুটির দিনে ঝলমলে আবহাওয়ায় আপনি এখানে এলে পরিচয় হয়ে যাবে বাস্কার সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে।

নাইট লাইফ উপভোগ করতে পার্ক স্ট্রিট আসতেই হবে। এখানে ক্লাব-পাব পুরো রাস্তাজুড়ে, দেয়ালে দেয়ালে পেইন্টিং। 

সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে রাতে হোটেলের কাছেই হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ কিংবা হেঁটে ফিরুন হোটেলে। সোডিয়ামের আলোতে, রাতের নিশ্চুপ গুনগুনে হেডফোনে বাজুক 'কলকাতা, তুমিও হেঁটে দেখ কলকাতা, তুমিও ভেবে দেখ, যাবে কি না যাবে আমার সাথে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago