চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা

ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত অচল

চিকিৎসকদের কর্মবিরতীতে খালি থাকে নয়াদিল্লির এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ। ছবি: রয়টার্স
চিকিৎসকদের কর্মবিরতীতে খালি থাকে নয়াদিল্লির এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ। ছবি: রয়টার্স

কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জুনিয়র চিকিৎসকের (৩১) ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসকরা। 

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি, এনডিটিভি ও রয়টার্স। 

কর্মবিরতি চলাকালীন সময় জরুরি বিভাগের রোগী ছাড়া বাকি সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা। এতে ১০ লাখেরও বেশি চিকিৎসক অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ভারতের চিকিৎসাসেবা খাত। 

রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের লখনৌ, গুজরাটের আহমেদাবাদ, আসামের গুয়াহাটি, তামিলনাড়ুর চেন্নাইসহ আরও অসংখ্য শহরের চিকিৎসকরা সতঃস্ফূর্থভাবে এই কর্মবিরতিতে অংশ নেন। যার ফলে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতে চিকিৎসা সেবা বন্ধের সবচেয়ে বড় ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছে এই ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি।

আহমেদাবাদে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
আহমেদাবাদে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

বেশ কয়েকজন ডাক্তার রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা জরুরি চিকিৎসা ছাড়া আর কোন ধরনের চিকিৎসা দেননি।

এ সময় দূর-দূরান্ত থেকে ভারতের বড় শহরগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয় পরিজন পড়েন বিপাকে। অনেকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। 

ভারতের চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) আহ্বানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সংগঠনটি বলেছেন 'ঘরে-বাইরে নারীদের নিরাপত্তা না থাকায়' গত সপ্তাহের এই নৃশংস ও বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে। একইসঙ্গে তারা 'ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে' দেশবাসীর সমর্থন চেয়েছে।

এই ঘটনার পর হাসপাতালের সামনে রাতে চিকিৎসক ও সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ জানাতে এলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সেখানে এসে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এই হামলার জেরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ছয় টায় কর্মবিরতি শেষ হয়েছে। আইএমএ এক বিবৃতি জানিয়েছিল, জরুরি সেবা দেওয়া অব্যাহত থাকবে।

আইএমএ'র সভাপতি আর ভি আসোকান বিবিসিকে জানান, ডাক্তাররা দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অপরাধ ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং তারা প্রতিবাদও জানাচ্ছেন, কিন্তু কলকাতার এই ঘটনাটি 'অনেকাংশেই ভিন্ন মাত্রার।'

'যদি দেশের একটি বড় শহরের মেডিকেল কলেজের ভেতর এরকম ঘটতে পারে, তাহলে এটাই প্রমাণ হয় যে কোনোখানেই ডাক্তাররা নিরাপদ নয়', যোগ করেন তিনি।

শনিবার এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আইএমএর প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে এবং সেখানে জনগণের স্বার্থে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মীদের সার্বিকভাবে সুরক্ষা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে সুপারিশ জানানোর জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

জবাবে আইএমএ বলেছে, তারা সরকারের প্রস্তাব যাচাই করছে, কিন্তু গতকাল তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেনি।

কিছু সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা আলাদা করে গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন।

আইএমএ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছে, যার মধ্যে আছে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতদের সহিংসতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন, হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো ও চিকিৎসকদের বিশ্রামের জন্য নিরাপদ জায়গা তৈরি।'

নয়াদিল্লিতে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
নয়াদিল্লিতে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

সংগঠনটি হত্যাকাণ্ড ও ভাংচুরের ঘটনার 'পূর্ণাঙ্গ ও পেশাদার তদন্তের' আহ্বান এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের জন্য যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে বলেছে আইএমএ।

চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের জেরে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদল বিজেপি ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। বিজেপি দাবি করেছে, এই ঘটনার জন্য মমতাই দায়ী।

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, 'বহিরাগত রাজনৈতিক মহল' সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজ্যে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে মমতার সরকার।

বুধবার 'রাত দখল' বিক্ষোভে পশ্চিমবঙ্গের লাখো নারী অংশগ্রহণ করেন। তারা 'স্বাধীন ও নির্ভীক জীবন যাপনের অধিকার' দাবি করেন।

দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, পুনেসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরেও বড় আকারে বিক্ষোভ হয়েছে।

শুক্রবার কলকাতার সড়কগুলোতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। সুমিতা দত্ত নামের এক বিক্ষোভকারী এএফপিকে বলেন, 'মনে হচ্ছে আশার আগুন জ্বলে উঠেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Working to make people true source of all power: CA

He also said his government's responsibility is to bind people into a larger family

1h ago