বিদেশের যেসব বাজারে করতে পারেন সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা

বিদেশে কেনাকাটা
ছবি: সংগৃহীত

'দেইখা লন বাইছা লন, 'যা নেবেন ১০০ একদাম ১০০', এমন দাম হাকাহাকির শোরগোল শোনা যায় নিউমার্কেট, মিরপুর হোপ মার্কেটের মতো স্ট্রিট মার্কেটের অলিগলিতে। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের শহরে সস্তায় জিনিসপাতি বিকিকিনি স্বাভাবিক হলেও, ধনদৌলত বা পর্যটকদের আনাগোনা বেশি এমন দেশগুলোতেও সস্তায় পাওয়া যায় নানা প্রয়োজনীয় ও শখের জিনিস।

চলুন তবে ঘুরে আসি কয়েকটি দেশের নামকরা স্ট্রিট মার্কেট থেকে।

চাতুচক উইকেন্ড মার্কেট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সবসময়ই থাকে লোকে লোকারণ্য। তাই বাজারে ক্রেতার আনাগোনাও হয় বেশি। আর চাতুচক উইকেন্ড মার্কেট তার আয়তন দিয়ে সামলে যাচ্ছে সেই ভার। ৩৫ একর জায়গা জুড়ে থাকা সবচেয়ে বড় বাজার চাতুচকে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজারের মতো দোকান। যেখানে প্রয়োজনের সবকিছুই বিক্রি হয় সস্তা দরে। অনেক দোকানি তাদের স্থানীয় কারখানা থেকে সরাসরি জিনিস এনে খুচরা দরে বিক্রি করেন চাতুচকের হাটে। সেখানে কেউ কেউ বসেন জামাকাপড়, জুতো, গয়না নিয়ে, কেউ বা আসেন সুনিপুণ হাতে বানানো বাহারি কারুশিল্পের পসরা সাজিয়ে। বিশাল বাজারের গলিতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটুখানি জলখাবার, আইসক্রিম খেয়ে আবারও বেরিয়ে পড়তে পারেন বাজারের থলি ভরার জন্য।

যেভাবে যাবেন

চাতুচক উইকেন্ড মার্কেট প্রতি সপ্তাহের শনি ও রোববার বসে। সেখানে যেতে মো চিট স্কাইট্রেন স্টেশন বা মেট্রোতে করে সুয়ান চাতুচক স্টেশনে নামতে পারেন, বা টুকটুকে চেপেও সরাসরি নামতে পারেন বাজারের সামনে।

গ্র‍্যান্ড বাজার, ইস্তানবুল, তুরস্ক

গ্র্যান্ড বাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও পুরোনো বাজারগুলোর একটি। শোনা যায়, যে জায়গায় বাজারটি বসে তার কিছু অংশ অটোমানদের সময়ে গড়া। ইস্তাম্বুলের এই বাজারটিতে রয়েছে প্রায় ৬০টির বেশি রাস্তা। রাস্তার আঁকেবাঁকে দোকান আছে প্রায় ৫ হাজারের মতো। বাজারটি ঠিক কতটা বড় ভেবে দেখুন তাহলে। গয়না, কার্পেট, প্রাচীন জিনিসপত্র, সিরামিকসহ নানা জিনিস পাওয়া যায় এখানে। দর কষাকষিতে ভালো হলে কম দামে সেরা জিনিস কিনতে পারবেন সহজে। এমনকি উটের বিনিময়েও জিনিস কেনাবেচা হয় গ্র‍্যান্ড বাজারে। চমৎকার স্থাপনা দেখার সঙ্গে এক কাপ তুর্কি চা বা কফি উপভোগ করতেই হবে গ্র‍্যান্ড বাজারের কোণে দাঁড়িয়ে।

যেভাবে যাবেন

গ্র্যান্ড বাজার রোববার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বেয়াজিট, ইউনিভার্সিটি বা সিরকেচি থেকে ট্রামে করে সেখানে যাওয়া যায়।

ফেরিয়া দে সান পেড্রো টেলমো- বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্টিনা

ফেরিয়া দে সান পেড্রো টেলমো আর্জেন্টিনার প্রাণবন্ত বাজার হিসেবে পরিচিত। সান টেলমোর প্রধান চত্বর প্লাজা ডোরেগোতে চামড়া ও পোশাকের মতো সবকিছুই বিক্রি হয়। এ ছাড়া আর্ট, জামাকাপড়, গয়না ছাড়াও প্রাচীন জিনিসপাতির আধিক্য দেখা যায় এখানে। এই বাজারের আরেকটি আকর্ষণ হলো স্ট্রিট শিল্পীদের বিনোদন দেওয়ার কায়দা। তাদের ট্যাঙ্গো নাচের শৈলী, গিটারের সুর, অভিনয়ের চমকে বাজারের আসর আরও জাঁকালো হয়ে ওঠে। দোকানের পাট নামার পরও সারারাত চলতে থাকে এসব আয়োজন।

যেভাবে যাবেন

ছয়দিনব্যাপী অন্য বাজার বসলেও এই বড় বাজারটি শুধু রোববার খোলা থাকে। বাজারে যাওয়ার জন্য দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্সিয়া স্টেশনে যেতে হবে প্রথমে, তারপর পায়ে হেঁটে যাওয়া যাবে প্লাজা ডোরেগোতে।

ক্যামডেন মার্কেট, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

ক্যামডেন মার্কেট লন্ডনের বেশ মজার ও জনপ্রিয় বাজার, যা সপ্তাহান্তে বেশি জমকালো হয়ে ওঠে। আপনি এখানে গয়না, কারুশিল্প, জামাকাপড় সব পাবেন। এখানকার খাবারদাবারের দোকান, ক্যাফে বৈচিত্র্যময়, বহু-সাংস্কৃতিক অনুভূতি দেবে আপনাকে। বাজার সবচেয়ে জমজমাট হয় শনিবার ও রোববার। আগস্ট মাসে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হয় ডিজে, লাইভ মিউজিক। পাওয়া যায় সুস্বাদু খাবার ও পানীয়সহ স্ট্রিট ফুডের বাহার।

যেভাবে যাবেন

সপ্তাহের প্রতিটি দিন খোলা থাকে, তবে সপ্তাহান্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয় বাজার। এখানে যেতে আন্ডারগ্রাউন্ড, ক্যামডেন টাউন স্টেশন বা চক ফার্ম রোডে নামতে হবে।

লাস বোভেদাস- কার্তেগানা, কলম্বিয়া

কার্তেগানার প্রাচীন আমলের দেয়ালঘেরা শহরে বসে লাস বোভেদাসের বেচাকেনার আসর। ১৮ শতকের স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের ৪৭টি খিলান, ২৩টি গম্বুজের সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ে এই বাজারে।

ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, এই স্থানটি মূলত যুদ্ধাস্ত্র সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধবন্দীদের থাকার জন্য অন্ধকূপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে এই জায়গায় হাতে বোনা ব্যাগ, ট্রিঙ্কেট, আর্টওয়ার্ক, কলম্বিয়ান হ্যামক, পাবলো এসকোবার আদলে গড়া স্যুভেনির নিয়ে বসে বিক্রেতারা। যেভাবে যাবেন

প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা অবধি খোলা থাকে বাজার। ট্যাক্সি, বাইক বা বাসে ওল্ড টাউনে যেতে হবে। তারপর ক্লক টাওয়ার থেকে কিছুদূর গেলেই দেখতে পাবেন বাজারটি।

কেনাকাটার উদ্দেশ্যে এসব বাজারে গেলে আগে থেকেই জেনেশুনে যেতে হবে স্থানীয়দের কাছ থেকে। বিলাসবহুল জিনিসের দাম বেশি চাইলে ভেবেচিন্তে দাম বলতে হবে। দামাদামিতে পারদর্শী হলে তো কথাই নেই।

 

Comments

The Daily Star  | English
rickshaws banned on Dhaka's main roads

Rickshaws no longer allowed on main roads: DNCC

More than 100 illegal battery-powered rickshaws were seized during the joint operation

53m ago