কোন ঘর সাজাতে কেমন আয়না, পাবেন কোথায়

ছবি: সংগৃহীত

'আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন

কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে…'

সময় বদলেছে। এখন আয়না শুধু মুখ দেখার কাজে ব্যবহার হয় না, বরং এটি গৃহসজ্জায় অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। যারা ঘর সাজাতে ভালবাসেন এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করেন তাদের কাছে আয়না হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘর সাজানোর এক অন্যতম প্রিয় উপকরণ।

আয়নার প্রতিচ্ছবি ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। যদি যথাযথভাবে আয়না ব্যবহার করা যায় তবে ঘর আরও উজ্জ্বল লাগবে, লাইট রিফ্লেকশনের কারণে ঘর আরও বড় দেখাবে। তবে আয়নার অবস্থানও হওয়া চাই ঠিকঠাক। ঠিক কীভাবে আয়না ব্যবহার করে আপনার ঘরে নতুন আমেজ আনবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন হোম ডেকর কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নাফিয়া নাফ

বসার ঘর

ঢাকার ফ্ল্যাটগুলো বেশ ছোট হওয়ার কারণে খুব বেশি আসবাবপত্র রাখা যায় না। নাফিয়া নাফ বলেন, `যেহেতু মেহমান এসে ড্রয়িং রুমেই প্রথমে বসেন তাই ড্রয়িং রুমের সাজসজ্জা হওয়া চাই আকর্ষণীয়। ড্রয়িং রুমে আয়না লম্বা বা গোলাকার যে আকৃতির হোক না কেনো সেটি হওয়া চাই কারুকার্যমণ্ডিত। এতে ঘরের চেহারায় যেমন আভিজাত্য আসবে, তেমনি অতিথিরা রুচির পরিচয় পাবেন। যদি বড় আয়না দিয়ে সাজাতে চান তবে সেক্ষেত্রে দুটি আয়না দিয়ে সাজাতে পারেন, এতে করে ঘরটি বড় লাগবে। আর যদি ছোট ছোট আয়না দিয়ে সাজাতে চান তবে একই শেপের বেশ কয়েকটি আয়না বসানো যেতে পারে।'

ছবি: সংগৃহীত

শোবার ঘর

শোবার ঘরে আয়না বলতে বুঝি ড্রেসিং টেবিলের আয়নাকেই। বর্তমানে মিনিমাল ডিজাইনে ড্রেসিং টেবিলের প্রচলন বেশি। এতে যেমন জায়গা কম লাগে তেমনি ঘরকে আরও বড় দেখায়। তাছাড়া ওয়্যারড্রোব, আলমারি, শো কেসে খুব সহজেই আয়না সংযোজন করা সম্ভব। শুধু দেয়ালে বা ড্রেসিং টেবিলে আয়না ব্যবহার না করে পছন্দের ডিজাইনের যে কোনো ফার্নিচারে আয়নার সংযোগ ঘটানো যায়। এতে ফার্নিচারটি নতুন রূপ পাবে। জানালার বিপরীতে আয়না সাজিয়ে রাখলেও ঘরে রোদের ছটার প্রতিফলনে ঘরকে আরও উজ্জ্বল দেখাবে।

ছবি: সংগৃহীত

খাওয়ার ঘর

নাফিয়া নাফ বলেন, ডাইনিং রুমে লাগানো যেতে পারে রাউন্ড মিরর কিংবা উইন্ডো মিরর। তবে আয়না এমন স্থানে রাখা উচিত নয় যেন বাসার লোকজন বা অতিথি খেতে বসলে তাদের মুখ দেখতে পান। অপরদিকে খুব উঁচুতে কিংবা নিচু করে আয়না না বসিয়ে টেবিলের সমান্তরালে আয়না বসানো উচিত। তাছাড়া ডাইমেনশনাল মিরর দিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে নিতে পারেন আপনার ডাইনিং রুম।

বাথরুম

দেয়ালে বড় কাঁচের ব্যবহার বাথরুমের লুকে আনবে নতুন মাত্রা। তবে বাথরুমে লম্বা আয়না ব্যবহার না করে আড়াআড়ি আয়না ব্যবহার করা ভালো। পানি লেগে আয়না নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।

আয়নার যত্ন

আয়না অনেকদিন ভাল রাখতে চাইলে, দাগ থেকে দূরে রাখতে চাইলে নিয়মিত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনই আয়না মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে। এই মোছার কাজে সুতি নরম কাপড় বা রুমাল ব্যবহার করা উচিত। প্রতিদিন আয়না পরিষ্কার করলে দাগ পড়বে না।

আয়নায় খুব দ্রুত পানির দাগ বসে যায় ,তাই বাথরুমে আয়না রাখলে যেখানে পানি আসার আশঙ্কা কম সেখানে রাখা উচিত। সপ্তাহে একদিন গ্লাস ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যেতে পারে। শিশুদের আয়না থেকে দূরে রাখুন। নাহলে বিপদ ঘটতে পারে। আয়না ভেঙে গেলে সেই কাঁচ থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।

ঘর সাজাতে আয়না

আয়না যেহেতু ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হবে তাই সেটি হওয়া চাই একটু ব্যতিক্রম। ঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন রকমের আয়না নির্বাচন করতে পারেন। যেমন- কাঠের কারুকার্য, বেত, টেরাকোটা, মেটালের কাজ করা আয়না, শীতলপাটির ফ্রেমের আয়না, হ্যান্ডপেইন্ট করা আয়না, ক্লে দিয়ে সাজানো আয়না ইত্যাদি। মূলত আয়না থেকে আয়নার ফ্রেমের কাজগুলোই এখানে প্রাধান্য পাবে।

কোথায় পাবেন এবং দরদাম

আড়ং, যাত্রাসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাবেন বিভিন্ন ডিজাইনের দারুণ সব আয়না। তাছাড়া বেতের আসবাবের দোকানগুলোতে মিলবে ট্রেন্ডি বেতের আয়না। এন্টিক ডিজাইনের আয়নার খোঁজ মিলবে ঢাকার গুলশান ডিসিসি মার্কেট, নিউমার্কেট, মহাখালীতে। বাঁশ, কাপড়, দড়ি, কাগজের ফ্রেমের আয়না পেতে দোয়েল চত্বর, মিরপুর স্টেডিয়াম মার্কেটে একবার ঢুঁ মারতে পারেন।

আবার কেউ চাইলে নিজেই ডিজাইন করে কাঠমিস্ত্রি দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। তাছাড়া বর্তমানে অনলাইনের অনেক পেজে বাহারি আয়না পাওয়া যায়। আড়ংয়ে নকশার ওপর নির্ভর করবে আয়নার দাম। ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকার আয়না পাওয়া যাবে। এন্টিকের আয়নাগুলোর দাম আসবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার  টাকা পর্যন্ত। কাঠের কারুকাজ করা আয়না ১ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার, হ্যান্ড পেইন্টিং, টেরাকোটার আয়না পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago