দর-কষাকষির ১০ কৌশল

ছবি: অর্কিড চাকমা

কেনাকাটার ক্ষেত্রে দর-কষাকষির কৌশল ঠিকমতো শিখে ফেলতে পারলে অনেক অর্থ বাঁচানো যায়। ভালোভাবে দরদাম করতে পারলে ক্রেতার দাম হাঁকানো শুনে যেমন ভয় পাবেন না,  তেমনি পছন্দের জিনিসটিও উপযুক্ত মূল্যে কিনতে পারবেন।

কোনো কিছু কেনার সময় কীভাবে ভালো দর-কষাকষি করবেন, তা  জানাব এই লেখায়।

ভালোভাবে হোমওয়ার্ক করুন

পোশাক, গাড়ি-বাড়ি বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, যা-ই কিনুন না কেন, সেটি সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকাটা জরুরি। এটি হচ্ছে দর-কষাকষির প্রধান শর্ত। কখনো কিছু না জেনে দরদাম করতে যাবেন না। বাজারে পণ্যটির স্বাভাবিক দাম কত, মান কেমন, কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্য হলে সেই ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে মানুষের ধারণা কেমন ইত্যাদি সবকিছু আগে জেনে নিন। পণ্য ও বাজার সম্পর্কে আপনি যত ভালো ধারণা রাখবেন, আপনার প্রতারিত হওয়া বা বাড়তি মূল্য পরিশোধের আশঙ্কা তত কম থাকবে।

 

বাজেট ঠিক করুন

কিছু কেনার আগে বাজেট ঠিক করুন এবং সেই বাজেটের মধ্যেই থাকুন। মনে মনে একটা অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করুন যে, পণ্যটির জন্য আপনি এর বেশি অর্থ খরচ করবেন না। বিক্রেতাকে 'না' বলা এবং দামে না মিললে দোকান থেকে বেরিয়ে আসতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনি উপযুক্ত দাম বলেছেন, কিন্তু তাও বিক্রেতা পণ্যটি বিক্রি করতে চাইছেন না, তাহলে চলে আসুন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সময় বিক্রেতা পণ্যটি আপনার কাছেই বিক্রি করবেন। তারা অনেক সময় কিছুটা বাড়তি দাম পাওয়ার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তবে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটুট থাকুন।

সঠিক সময় নির্বাচন করুন

পণ্য কেনার সময় বাড়তি খরচ বাঁচাতে দর-কষাকষি করাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, পণ্যটি কোন সময় কিনছেন সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- শীত-গ্রীষ্মের মৌসুম শুরুর আগে ও পরে প্রায় সব পোশাকের দোকানেই ডিসকাউন্ট থাকে। নতুন মৌসুমের পোশাক তোলার আগে দোকানগুলো আগের সব পোশাক বিক্রি করে দিতে চায়। এজন্য এই সময়টায় একটু বেশি ডিসকাউন্ট থাকে। আমাদের দেশে উৎসবের মৌসুমে জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকলেও বিশ্বজুড়ে উৎসবের মৌসুমে অনেক ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।

বছরের শেষদিকে গাড়ি কিনলে তুলনামূলক বেশি ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। কারণ নতুন বছর মানেই রেজিস্ট্রেশনে সে বছরের তারিখ ‍উল্লেখ থাকে। সেক্ষেত্রে গাড়িটি পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে এক বছর আগের রেজিস্ট্রি করা গাড়ির তুলনায় বেশি দাম পাওয়া যায়। এজন্যই বছরের শেষদিকে গাড়ির দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যেহেতু তখন রেজিস্ট্রেশনে পুরোনো বছরের তারিখ উল্লেখ থাকে অর্থাৎ, গাড়ির বয়স কিছুটা বেড়ে যায়।

এর বাইরেও মাস বা বছরের শেষ অংশে কেনাকাটা করাটা ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ তখন সব প্রতিষ্ঠানই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি করে।

আপনার অ্যাপিয়ারেন্সের প্রতি নজর দিন

দৈনন্দিন পণ্য যা মোটামুটি সস্তা দামে কেনা যায়, তা নিয়ে দর-কষাকষি করা কিছুটা সহজ। আপনি যদি খুব সাধারণ পোশাক পরেন তবে বিক্রেতারা মনে করবেন, আপনার বেশি টাকা নেই। পক্ষান্তরে, আপনি যদি দামি কোনো কিছু কিনতে যান, তাহলে ভালো পোশাক পরুন। বিক্রেতা তখন আপনাকে সম্ভাব্য ক্রেতা মনে করবেন ও সিরিয়াসলি নেবেন।

আপনি যদি শিক্ষার্থী হন আর সস্তায় কিছু কিনতে চান, তাহলে সেটি বিক্রেতাকে জানান। শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক বিক্রেতাই বেশি সদয় থাকেন।

আবেগী না হয়ে বিনয়ী হোন

সবসময় বিনয়ী থাকুন। বিক্রেতার অযাচিত দাম শুনে মাথা গরম করার দরকার নেই। মেজাজ খারাপ থাকার মুহূর্তে আমরা অনেক সময়ই সঠিক সদ্ধান্তটি নিতে পারি না। এমনও তো হতে পারে পরে কোনো কিছু কেনার জন্য ওই দোকানে আবারও যাওয়া লাগতে পারে। বিক্রেতার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক থাকলে কখনোই দর-কষাকষিতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না।

কোনো কিছু অনেক বেশি পছন্দ হলে গেলেও সেটি নিজের মধ্যে রাখুন। বিক্রেতা যদি বুঝতে পারেন জিনিসটা আপনার খুবই পছন্দ হয়েছে, তাহলে তিনি দাম ছাড়তে চাইবেন না। এতে বিক্রেতা বাড়তি সুবিধা পাবেন।

আবার আপনি যদি উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনো দোকানে ঢোকেন, তাহলে নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের দিকে বাড়তি মনোযোগ দেবেন না। এতে বিক্রেতা মনে করবেন আপনি বেশি দাম দিয়ে হলেও পণ্যটি কিনবেন।

অঙ্গভঙ্গি

শুধু কথা বলে নয়, শারীরিক ও মৌখিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও ক্রেতা-বিক্রেতার যোগাযোগ হতে পারে। এটা উভয় পক্ষের বেলাতেই সত্যি। আপনি যদি বিক্রেতার সঙ্গে ভালো ও হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করেন তাহলে তিনিও আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। এতে দর-কষাকষিতে আপনি বাড়তি সুবিধা পাবেন।

কম থেকে শুরু করুন

ধরুন, কোনো পণ্যের দাম বিক্রেতা ১ হাজার টাকা চাইলেন আর আপনি শুরুতেই ৮০০ টাকা বলে ফেললেন। আপনি কিন্তু এখান থেকে আর কমাতে পারবেন না, বরং আরও বাড়াতে হতে পারে। তাই দারদাম শুরু করুন একদম কম থেকে। যদি আপনাকে কোনো দাম বলতেই হয়, তাহলেও খুব অল্প দাম থেকে শুরু করুন।

পণ্যে কোনো ত্রুটি আছে কি না দেখুন

পণ্যের ব্যবহার উপযোগিতা কমায় না এমন কোনো ত্রুটি আছে কি না দেখুন। যদি কোনো ত্রুটি খুঁজে পান, তাহলে দরদামের ক্ষেত্রে আপনি বিশাল সুবিধা পাবেন। পণ্যের গায়ে হালকা দাগ থেকে শুরু করে ছোট ত্রুটি থাকলেও আপনি বড় ডিসকাউন্ট দাবি করতে পারবেন।

মানসিক হিসাব

সাধারণত বিক্রেতা যে দাম চান তার অর্ধেক থেকে দরদাম শুরু করা উচিত। তবে অনেক সময় বিক্রেতা ৩ গুণ দাম চেয়ে বসেন, যাতে ক্রেতা তার অর্ধেক দামে কিনলেও তার লাভ থাকে। এটা আসলে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিক্রেতার চোখে চোখ রেখে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজে আত্মবিশ্বাসী থাকুন এবং পণ্যটির জন্য আপনি যে দামটি যৌক্তিক বলে মনে করেন, সেটি নির্দ্বিধায় বলুন। তবে আপনিও যৌক্তিক দাম বলুন। কারণ বিক্রেতারও তো লাভ করতে হবে।

বিক্রেতার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন

বিক্রেতার সঙ্গে দাম চূড়ান্ত করার পরও আপনার হাতে দাম কমানোর আরেকটা উপায় হচ্ছে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা। কারণ বিক্রেতার চেয়ে তার কর্তৃত্ব বেশি এবং তিনি চাইলে আরেকটু দাম ছাড়তে পারেন।

অনেকে আবার বিক্রেতাকে এড়িয়ে সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দারদাম করেন। এটা সবসময় যথার্থ আচরণ নাও হতে পারে। তারপরও পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু দাম চূড়ান্ত হওয়ার পর দোকানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে আরেকটু ডিসকাউন্ট দেওয়ার অনুরোধ করাই যায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

2h ago