বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ৭ খাবার

ক্যাভিয়ার

খাদ্য এখন আর শুধু বেঁচে থাকার উপকরণ হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই। কিছু খাবার পরিণত হয়েছে শিল্পে, কখনো বিলাসিতায়। পৃথিবীতে এমন কিছু খাবার আছে যার স্বাদ পেতে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি খাবার সম্পর্কে পরিচিত হওয়া যাক।

আলবিনো ক্যাভিয়ার

ব্যয়বহুল খাবারের তালিকায় শুরুর দিকেই থাকবে এই নামটি। এক ধরনের সামুদ্রিক মাছের ডিম হলো ক্যাভিয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারের মধ্যেও ক্যাভিয়ারের নাম রয়েছে। বেলুগা স্টার্জেন মাছ থেকে সবচেয়ে সুস্বাদু ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়। এই মাছের ডিম সংগ্রহ করা খুব দুরূহ। এই মাছ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। শুধুমাত্র কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরে এই মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়া একটি বেলুগা স্টার্জেন পূর্ণবয়স্ক হতে প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত সময় নেয়। এরপরই মাছটিকে হত্যা করে এর ডিম সংগ্রহ করা হয়।

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাভিয়ার হলো আলমাস, যা বিপন্ন প্রায় ইরানি আলবিনো বেলুগা স্টার্জেন মাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, এক কেজি অ্যালবিনো ক্যাভিয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল সড়ে ৩৪ হাজার ডলার পর্যন্ত।

বিশ্বের ৩৫ শতাংশ ক্যাভিয়ার উৎপন্ন হয় চীনের কালুগা কুইন ক্যাভিয়ার ফার্ম থেকে।

পাখির বাসার স্যুপ

পাখির বাসার স্যুপ

সুইফটলেট পাখি লালা দিয়ে তার বাসা তৈরি করে। এই পাখির বাসা থেকে ব্যতিক্রমী একটি স্যুপ তৈরি করে চীনা রন্ধনশিল্পীরা যা বার্ডস নেস্ট স্যুপ নামে পরিচিত। এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল খাবারগুলোর একটি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে এই স্যুপের ভীষণ সমাদর আছে।

ভোজন রসিকদের কাছে জনপ্রিয় এই স্যুপটি লাল, হলুদ ও সাদা তিনটি ভিন্ন রঙে পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে লাল রঙের বার্ড নেস্ট স্যুপের দাম সবচেয়ে বেশি। এরকম এক বাটি স্যুপের দাম ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়।

সাদা ট্রাফলস

সাদা ট্রাফলস

সাদা ট্রাফলস বিরল প্রজাতির তীব্র সুগন্ধযুক্ত এক ধরনের ভূগর্ভস্থ ছত্রাক। ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল ও অস্ট্রেলিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বনাঞ্চলে বসন্তকাল ও বর্ষাকালে এই ছত্রাক জন্মায়। ব্ল্যাক ও হোয়াইট- দুই রকমের ট্রাফল পাওয়া যায়। দুটোই দামী খাবারের তালিকায় জায়গা করে নিলেও এর স্বাদে ব্যাপক ভিন্নতা আছে।

হোয়াইট ট্রাফল রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হয় না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এটি প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত খাদ্য-উপযোগী থাকে। এক পাউন্ড হোয়াইট ট্রাফলের দাম সাধারণত ৩ হাজার মার্কিন ডলার হয়।

বনে মাটি খুঁড়ে ট্রাফল খুঁজতে সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর বা শুকর ব্যবহার করা হয়।

মুজ পনির

মুজ পনির

দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে পনিরের চাহিদা ও বাজারদর দুটোই সবচেয়ে বেশি। তবে এক ধরনের হরিণের দুধ থেকে তৈরি মুজ পনির বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পনির। এই পনিরের স্বাদ নিতে চাইলে যেতে হবে সুইডেনে। শুধুমাত্র এই দেশেই মুজ পনির তৈরি ও বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মুজ পনিরের দাম প্রায় এক হাজার মার্কিন ডলার।

ওয়াগু গরুর মাংস

ওয়াগু গরুর মাংস

জাপানি গরুর মাংস 'ওয়াগু বিফ' বিশ্বের ব্যয়বহুল খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ গরুর মাংসে পরতে পরতে চর্বি থাকে বলে খেতেও বেশি সুস্বাদু হয়। জাপানের চারটি ভিন্ন প্রজাতির গরু থেকে এ মাংস পাওয়া যায়।

ওয়াগু গরুর মাংসের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ, এসব গরু প্রতিপালনে খরচ অনেক বেশি হয়। সব গরুর মাংস ওয়াগু হিসেবে গণ্য হয় না। ওয়াগু হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য প্রচুর নিয়মকানুন মেনে এই গরুগুলোকে লালনপালন করতে হয়। পেশীর পরতে পরতে চর্বি জমা হওয়ার জন্য বাছুর অবস্থা থেকেই এদেরকে বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়।

জাপানের সবচেয়ে দামি ওয়াগু বিফ হলো 'কোবে বিফ' যার স্বাদ নিতে আপনাকে গুনতে হবে প্রতি কেজিতে ৬৪০ ডলার।

কোপি লুয়াক

কোপি লুয়াক

বিশ্বের কফিপ্রেমীদের কাছে কোপি লুয়াক অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। এই কফির স্বাদ নেওয়ার সৌভাগ্য সবার না হলেও অনেকেই এর নামের সঙ্গে পরিচিত।

কোপি লুয়াক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল কফি। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এই কফি সংগ্রহ করা হয় এশিয়ান পাম সিভেট নামের বিড়ালের মল থেকে। এটি এক ধরনের ছোট বিড়াল যা এশিয়ার কিছু অঞ্চলে বাস করে। প্রথমে যে কফি বিন থেকে এই কফি তৈরি তবে সেই বিনগুলোকে এশিয়ান পাম সিভেট নামের বিড়ালকে খাওয়ানো হয়। কফি বিনগুলো খাওয়ার পর সেগুলো বিড়ালের পাকস্থলীর এসিডে জারিত হয়ে মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। সেই বিন থেকে তৈরি হয় অত্যন্ত সুস্বাদু কোপি লুয়াক কফি। এর স্বাদ নিতে চাইলে প্রতি পাউন্ডের জন্য আপনাকে গুণতে হবে প্রায় ৬০০ ডলার।

জাফরান

জাফরান

ফুল থেকে সংগৃহীত সুগন্ধিযুক্ত জাফরান সারা বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা হিসেবে পরিচিত। শরতের শুরুতে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এই ফুল ফোটে। এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে জাফরান উৎপাদিত হয়।

জাফরানের উৎপত্তি মূলত গ্রিসে। খাবারের স্বাদ ও রঙের জন্য জাফরান ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলার একটি হলো ইরানি জাফরান। ১ পাউন্ড জাফরানের দাম ৫০০-৫০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

তথ্যসূত্র-বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

CSA to be repealed within a week: Nahid Islam

About the election, Nahid said an election based on national consensus will be held after completing all necessary reforms.

3h ago