জানা অজানা

কেন দক্ষিণ কোরিয়ার ২০ শতাংশ মানুষের নাম ‘কিম’?

দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশ (প্রায় ১ কোটি) মানুষের নামের সঙ্গে ‘কিম' আছে। দেশটিতে কিম হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত পারিবারিক বা বংশগত নাম।
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএসের ৩ সদসের নামও কিম। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএসের ৩ সদসের নামও কিম। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশ (প্রায় ১ কোটি) মানুষের নামের সঙ্গে 'কিম' আছে। দেশটিতে কিম হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত পারিবারিক বা বংশগত নাম।

এর  পরের স্থানেই আছে 'লি' আর 'পার্ক অথবা পাক'। সব মিলিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৫ শতাংশ মানুষের নামের সঙ্গে কিম, লি অথবা পার্ক যুক্ত আছে।

শেষের ২টি বাদ দিলেও  'কিম' নাম সেখানে কেনো এতটা প্রচলিত, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে পরিচিত নেতার নামও কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএসের ৩ সদসের নামও কিম। তাহলে কী কিম নামের সবাই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত?

'কিম' মূলত একটি পারিবারিক পদবী। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ সাল থেকে ৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সিলা রাজত্ব কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি রক্ষার দায়িত্বে ছিল। পরে ৬৬৮ সালের দিকে কোরীয় উপদ্বীপের প্রায় সব অঞ্চল মিলে একটি একীভূত রাষ্ট্র গঠনে রাজি হয়। 'কিম' পরিবার এই সিলা রাজত্বের শাসনভার গ্রহণ করে এবং তারা প্রায় ৭০০ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করে। বাংলায় কিম শব্দের অর্থ 'স্বর্ণ'।

বহু শতাব্দী ধরে কোরিয়ায় রাজ পরিবার ও অভিজাত বংশের সদস্যদের বাইরে অন্য কারও বংশনাম ব্যবহারের রীতি ছিল না। গরিয়ো রাজত্বের শাসনামলে (৯৩৫-১৩৯২ খ্রিস্টাব্দ) অবশ্য এই রীতি কিছুটা শিথিল করা হয়। পরবর্তীতে জসেওন রাজত্বের শাসনামলে (১৩৯২-১৯১০ খ্রিস্টাব্দ) কিছু কিছু সাধারণ মানুষও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য  তাদের  নামের শেষে পারিবারিক পদবী হিসেবে প্রভাবশালী বংশের নাম যোগ করা শুরু করেন। ১৮৯৪ সালে শ্রেণীপ্রথা বিলোপ হওয়ার পর এবং জাপানি ঔপনিবেশিকদের চাপে বাধ্য হয়ে অনেক কোরিয়ানই নামের সঙ্গে পারিবারিক পদবী যুক্ত করতে শুরু করেন। সাধারণ মানুষদের মধ্যে বেশিরভাগই তখন পদবী হিসেবে কিম, লি কিংবা পার্কের মতো অভিজাত ও ক্ষমতাশালী বংশের নাম ব্যবহার করতে শুরু করে।

নামের সঙ্গে কিম আছে বলেই যে তারা সবাই একই গোত্রের, তা নয়। কোরিয়ায় কারও জ্ঞাতি-গোষ্ঠি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে তার বংশের নাম, যা দিয়ে সেই গোত্রের আসল ভৌগলিক উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দেখা গেছে, একেক কিম গোত্রের ভৌগলিত উৎপত্তি একেক জায়গায়।

তবে তাদের বেশিরভাগেরই উৎপত্তি গিমহাতে। দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরটিতে কিম সু-রো এর জন্মস্থান। ইতিহাসবিদরা মনে করেন তিনিই হচ্ছে আসল কিম এবং প্রাচীন কোরিয়ান সাম্রাজ্য গায়ার প্রতিষ্ঠাতা। কোরিয়ায় অন্তত ৩০০টি কিম গোত্র আছে।

যেসব কোরিয়ানের পারিবারিক নাম একই, তারা কী একজন আরেকজনের আত্নীয় বা একই গোত্রীয়? এখন কোরিয়ানদের গোত্রগুলোর একটির চেয়ে আরেকটির যোগসূত্র অনেক দূরবর্তী হওয়ায় একই নামধারী দুটি গোত্রের আসল গোড়া যদি ভিন্ন দুটি গ্রামে হয়, তাহলে তারা বিয়ের বৈধতা পান। দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে একই বংশীয় নামের ২ জনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান এই আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়। ২০০৫ সালের সংশোধিত আইনে শুধু নিকটাত্নীয়দের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মিস্টার কিম আরেকজন মিস কিমের প্রেমে পড়ার পর তারা চাইলে বিয়ে করতে পারবে। আগে যা সম্ভব ছিল না একই বংশীয় নামের কারণে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeds

Intensified Israeli airstrikes on Gaza yesterday killed dozens on the eve of the first anniversary of its offensive in the besieged territory that has killed nearly 42,000 Palestinians and left the enclave in ruins.

8h ago