মাশরুমের উপকারিতা, কীভাবে খাবেন

মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।
মাশরুমের উপকারিতা
ছবি: শাকেরা আরজু

'ব্যাঙের ছাতা' হিসেবে পরিচিত মাশরুম খেতে চান না অনেকেই, অথচ এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ‍মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।

 

মাশরুম কী

পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুম ছত্রাক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির মাশরুম এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে সব ধরনের মাশরুম খাওয়া যায় না। অনেক বিষাক্ত মাশরুম রয়েছে যেগুলো বনে জঙ্গলে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অর্গানিক বা নিজেদের চাষ করা মাশরুম খাওয়াই ভালো। যেমন- বাটান মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, পোর্টেবেলো মাশরুম এগুলো বেশ জনপ্রিয়।

আমাদের দেশে মাশরুম ব্যাঙের ছাতা হিসেবেই অনেকের কাছে পরিচিত। এটিকে খাবার হিসেবে অনেকেই এখনও গ্রহণ করতে পারেননি। শহরের মানুষের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও, সেটি এখনও খুব বেশি নয়।

তবে যেখানে-সেখানে গজানো নয়, অর্গানিক বা নিজে চাষ করা মাশরুম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

অনেকেই জানেন না কীভাবে মাশরুম খেতে হবে, কীভাবে চাষ করা যায়। আবার মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিয়েও সংশয়ে থাকেন অনেকে। যে কারণে মাশরুমের চাহিদা কম, সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না এটি দেশে। এ ছাড়া, মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যে কারণে গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংস খাওয়ার দিকে ঝোঁক বেশি। অথচ সঠিক উপায় যদি মাশরুম দিয়ে স্যুপ, সবজি কিংবা বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খাওয়া যায় তাহলে সব বয়সী মানুষের প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মাশরুমের কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আরও আছে অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক, জিঙ্ক,  মিনারেল, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি।

মাশরুমের উপকারিতা

১. মাশরুমে লো ক্যালোরি থাকায় যারা ওজন কমাতে চান তারা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

২. পেশি বাড়াতে যারা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খোঁজেন, তাদের জন্য মাশরুম প্রোটিনের সেরা উৎস হতে পারে।

৩. মাশরুমে পেনিসিলিন থাকে, যা এক রকম অ্যান্টিবায়োটিক যেটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৪. মাশরুম ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।

৫. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক মাশরুম।

৬. হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

৮. মাশরুমে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধে বেশ সাহায্য করে।

৯. শিশুদের হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে।

১০. অ্যানিমিয়া দূর করতে ভূমিকা রাখে মাশরুম। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন মাশরুম খাদ্যতালিকায় থাকলে বেশ উপকারে আসে এক্ষেত্রে।

১১. মাশরুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কীভাবে খাবেন

সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা ও কারা খাবেন না

কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে।

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Where should I invest my money?

Amid persistently higher inflation in Bangladesh for more than a year, the low- and middle-income groups are struggling to meet their daily expenses.

13h ago