স্বাদে-গন্ধে মন মাতানো জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ

এই সন্দেশ একবার যে খেয়েছে, বারবার খাওয়ার ইচ্ছে তার হবেই। 
জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ
জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ। ছবি: মির্জা শাকিল/ স্টার

টাঙ্গাইল পোড়াবাড়ির চমচমের জন্য বিখ্যাত হলেও এ জেলার আরেকটি মিষ্টিরও রয়েছে দেশজোড়া খ্যাতি ও সুনাম। সেটি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ। অপূর্ব স্বাদ আর মন মাতানো গন্ধের এই সন্দেশ এক কথায় অসাধারণ। একবার যে খেয়েছে, বারবার খাওয়ার ইচ্ছে তার হবেই। 

শোনা যায়, লৌহজং নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী এলাকার মাটি, পানি, আবহাওয়া এ সব কিছু জামুর্কীর এই সন্দেশ তৈরির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তবে প্রস্ততকারকরা জানান, ভোক্তাদের সন্তুষ্টির জন্য গুণগত মান ধরে রাখতে দুধসহ অন্যান্য খাঁটি উপাদান ব্যবহার এই সন্দেশের লোকপ্রিয়তার আসল কারণ।

সন্দেশ
ছবি: মির্জা শাকিল/ স্টার

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই কালীদাস মিষ্টান্ন ভান্ডার।

ব্রিটিশ আমলে জামুর্কী এবং এর আশপাশের এলাকায় ছিল জমিদার ও সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের বসবাস। গ্রামের মদন মোহন সাহা মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করতেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে কালীদাস সাহা পৈত্রিক ব্যবসার হাল ধরেন। পরে তিনি দুধ, চিনি ও পাটালি গুড় দিয়ে চিনি ও গুড়ের দুই প্রকার সন্দেশ তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে তার তৈরি এই সন্দেশের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

টাঙ্গাইল
ছবি: মির্জা শাকিল/ স্টার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি কালীদাসের সন্দেশ খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুর সফরে এলে তাকে যেসব খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে জামুর্কীর সন্দেশও ছিল। 

এখনও জেলায় আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আপ্যায়ন করতে এই সন্দেশের অর্ডার দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিয়ে, ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন আয়োজন ও আচার অনুষ্ঠানে এই সন্দেশ যেন অপরিহার্য।

আশির দশকে কালীদাসের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের মধ্যে সমর সাহা বাবার ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে তার দোকানে চমচম, রসগোল্লা, দইসহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি হলেও সন্দেশটা চলে একচেটিয়া। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ মণ দুধের মিষ্টি তৈরি হয় এখানে।     

সম্প্রতি কালীদাস মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে দেখা যায়, এখনও সেই পুরাতন চারচালা টিনের অবকাঠামো মিষ্টির দোকানটির। দোকানের সামনের অংশে মালিক নিজে বসে কয়েকজন কর্মচারী দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করছেন। পেছনের অংশে কারখানা। সেখানে দুধ ঢালা, জ্বাল দেওয়া, ছানা কাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আট-দশ জন শ্রমিক ও কর্মচারী।  

দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিষ্টির দোকানটিতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের অধিকাংশই কিনছেন এই সন্দেশ। কেউ নিচ্ছেন নিজেরা খেতে, আবার কেউ বা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় বাড়ি নিয়ে যেতে।

গাজীপুর মৌচাকের বাসিন্দা মিলন সরকার জানান, তার এই সন্দেশ প্রথম খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল এক আত্মীয়ের মাধ্যমে। দারুণ স্বাদ, মনে রাখার মতো। তাই এদিকে এলেই কিনে নিয়ে যান এই সন্দেশ। তবে সন্দেশের কেজি কিছুদিন আগে ৭০০ টাকা হলেও, এখন ৮০০ টাকা কেজি বলে জানান তিনি।   

দোকানের মালিক সমর সাহা অবশ্য দাবি করলেন, দুধসহ মিষ্টি তৈরির সব উপাদানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধ্য হয়ে সন্দেশসহ অন্যান্য মিষ্টির দাম বাড়াতে হয়েছে।

'আমরা খাঁটি দুধ ব্যবহার করি। রাজশাহী থেকে ভালো গুড়টা নিয়ে আসি। তাই দাম কিছুটা না বাড়ালে মান ধরে রাখা যায় না', বলেন তিনি। 

খুব তাড়াতাড়ি দোকানের পেছনে কারখানার নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

কালীদাস মিষ্টান্ন ভান্ডারের কোথাও কোনো শাখা নেই বলেও জানান সমর সাহা।

এদিকে টাঙ্গাইলের চমচমের জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভের পর ঐতিহ্যবাহী জামুর্কীর সন্দেশের জিআই স্বীকৃতি লাভের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আবেদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম।

   

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago