তিতা খাবারের অনেক গুণ, সত্যি নাকি মিথ

তিতা খাবারের নাম শুনলেই আমাদের মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়। অনেকেই তিতা খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন, আবার অনেকের পছন্দ খাবারের তালিকায় থাকে এমন খাবার। সাধারণত বাচ্চারা তিতা স্বাদের খাবার খেতেই চায় না।

কিন্তু এই তিতা স্বাদের খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। করলা, পাট শাক, মেথি শাক, চিরতার মতো খাদ্য উপকরণগুলো খেতে তিতা হলেও এগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষধি গুণ, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

এসব তিতা খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক মিরপুর ইসলামি ব্যাংক হসপিটাল অ্রাণ্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমানের কাছ থেকে।

তিনি জানান, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তিতা খাবার রাখা উচিত। এটি আমাদের শরীরের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়তা করে এবং মুখের রুচি বাড়ায়। তিতা শাক-সবজিতে পাওয়া যায় ভিটামিন এ, সি, বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লোমেটরি উপাদান।

করলা

বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত এবং সবচেয়ে সহজলভ্য সবজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করলা বা উচ্ছে। এতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলসের পাশাপাশি রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

প্রতিদিন সকালে করলার রস পান করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। করলাতে বিদ্যমান ইনফ্লামেটরি উপাদান রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট ভালো থাকে।

করলা বা উচ্ছেতে থাকা উপাদান রক্তচাপ ও রক্তের সুগার কমাতে সাহায্য করে। এটি চুল ও ত্বক ভালো রাখার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে।

পাট শাক

পাট গাছের কচি পাতাগুলোকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এই শাকের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লাইকোপিন শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

পাট শাকে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম, যা হাড় গঠনে সহায়োক এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। পাট শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ব্রাহ্মী শাক

তিতা স্বাদের এই শাকের রয়েছে বিশেষ কিছু ওষধি গুণ। স্বরভঙ্গ, বসন্ত রোগ, শিশুদের ঠাণ্ডা-কাশিতে এ শাক খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। এই শাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত ব্রাহ্মী শাক খেলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।

থানকুনি ও তেলাকুচা পাতা

গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এই লতা জাতীয় গাছ দুটি হয়ে থাকে। এগুলো শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এই শাকগুলোতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

তবে তেলে ভাজলে এর গুণাগুন নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেদ্ধ করে খেলে এর উপকার পাওয়া সম্ভব।

মেথি শাক

মেথির মতো মেথির শাকও অনেক উপকারি। মেথি শাক পুষ্টি জোগাতে অতুলনীয়। এটি এসিডিটি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যা দূরে রাখে। তাই তিতা স্বাদের এই শাকটি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

চিরতা

তিতা স্বাদের কারণে চিরতা অনেক পরিচিত। চিরতার পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত সবকিছুতেই ওষধি গুণ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে চিরতা ভেজানো পানি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়, জ্বর, পেট খারাপ, অন্ত্রের কৃমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, চর্মরোগ, যকৃতের প্রদাহ, পাকস্থলীর প্রদাহ ইত্যাদি বহুরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। চিরতা শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের করতেও সাহায্য করে।

গ্রিন টি

গ্রিন টি তিতা ও কষালো স্বাদের। ওজন কমাতে সাহায্য করে এটি। গ্রীন টি প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ত্বক ভালো রাখে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ডার্ক চকোলেট

এতক্ষণ যে তিতা স্বাদের খাবারগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল সেগুলো অপ্রিয় হলেও, চকোলেট খেতে কম-বেশি সবাই পছন্দ করে। তবে, ডার্ক চকোলেটের স্বাদ তিতা হওয়ায় অনেকের কাছে এই পছন্দের পরিমাণটা একটু কম হতে পারে।

মিষ্টি জাতীয় চকোলেট শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তবে ডার্ক চকোলেট উপকারী। এতে রয়েছে জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পলিফেনোল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বক ভালো রাখে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago