পূজার সময় সুস্থ থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ

ছবি: সংগৃহীত

শারদীয় দুর্গোৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। পূজার আনন্দ মানেই ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে উৎসবে মেতে উঠা। কিন্তু অনিয়ম আর অসর্তকতায় ভেস্তে যেতে পারে পূজা উপলক্ষে আপনার করে রাখা পরিকল্পনাগুলো।

তাই পূজার আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে আগে ও পরে সুস্থ থাকতে মেনে চলা উচিত বেশকিছু নিয়ম।

কীভাবে সুস্থ থেকে পূজার আনন্দ উপভোগ করবেন জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খানের কাছ থেকে।

ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, শরতের এই সময়টা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়। সারাদিন প্রচণ্ড গরম আর শেষ রাতে ঠান্ডা পড়ে। আবহাওয়ার এ তারতম্যের জন্যে সর্দি-কাশি, জ্বর হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই অবশ্যই খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান পরিহার করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে গরমের ঘাম শরীরে যেন না বসে যায় কিংবা বৃষ্টির পানিতে যেন ঠান্ডা না লাগে। এমন হলে দ্রুত শরীর মুছে নিতে হবে এবং ভেজা কাপড় পরিবর্তন করতে হবে। নইলে সর্দি বা ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে, যা পূজার আনন্দকে নষ্ট করতে পারে।

আর যদি ঠান্ডা-সর্দি লেগেই যায়, তবে কুসুম গরম পানি, আদা দিয়ে লাল চা বারবার পান করলে কিছুটা উপশম হতে পারে। কুসুম গরম জলে লবণ দিয়ে গড়গড়া করতে পারেন । নাক বন্ধ থাকলে নাকে মেনথলের ভাপ নিলে কিছুটা আরাম বোধ হতে পারে।

জ্বর আসলে বা গলাব্যাথা থাকলে প্যারসিটামল খাওয়া যেতে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়লে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আবেদ হোসেন খান।

আরও কিছু পরামর্শ দেন তিনি। এগুলো হলো-

  • পূজার বাজার করা, পূজা দেখা কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে একটানা হাঁটাহাঁটি করা যাবে না, বিশেষত পরিবারের শিশু ও বয়স্ক ব্যাক্তিদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
  • হাঁটাহাঁটির মাঝে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে।
  • দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা কিংবা অতিরিক্ত খাওয়ার কারনেও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে জানান ডা. আবেদ হোসেন খান।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের এ সময়ে রক্তে গ্লুকোজ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে।
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীরে ঘাম হওয়া, অস্থিরতার অনুভূতি হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা মাত্রই মিষ্টিজাতীয় খাবার বা পানীয় খেতে দিতে হবে এবং রক্তের গ্লুকোজ মাপতে হবে।
  • শরীর সুস্থ রাখতে অনিয়মিত খাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। পূজার মধ্যেও খাবারের রুটিন মেনে চলুন।
  • খাবার সঠিকভাবে হজম হওয়ার জন্য একবার খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা বিরতি নিন।

পূজায় শরীর সুস্থ রাখতে কেমন খাবার খাবেন আর কী পরিহার করবেন

  • পূজায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, পায়েস, লুচি-ডাল-তরকারি, পাঁঠার মাংস এসবের আয়োজন করা হয় বেশি। যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের এসব খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • যারা হাইপারএসিডিটি বা আলসার রোগে ভুগছেন তাদের অতিরিক্ত ঝাল, ভাজাপোড়া, তেল, মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করার পরামর্শ ডা. আবেদ হোসেন খানের।
  • রাস্তার পাশের ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর খাবার যাতে মাছি বসছে বা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে, এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • দূষিত পানি বা পঁচা-বাসি খাবার থেকে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ এমনকি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘুরতে বেরিয়ে যেখানে-সেখানে শরবত বা পানি জাতীয় কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আবেদ হোসেন খান।
  • প্রচুর সালাদ খাওয়ার কথা বলেন ডা. আবেদ হোসেন খান। সালাদ আপনার ক্ষুধা ভাব কমাবে, সেইসঙ্গে আপনাকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত এবং মেদযুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখবে।

     

  • প্রচণ্ড গরমে ঘোরাঘুরির ফলে ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তাই পূজার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানিস্বল্পতা অবহেলা করলে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ-পানি বের হয়ে শরীর সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বাইরে বের হলে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ, শরবত বহন করবেন। এ ছাড়া ঘোরাঘুরির সময় বাইরের বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত ইত্যাদি পান করলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ হবে।
  • খাবার হজমের ক্ষেত্রে কোমল পানীয়র কোন ভূমিকা নেই। বরং এসব পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় পরিহার করা উচিত। এর পরিবর্তে ডাবের পানি, টক দই, লাচ্ছি পান করার কথা বলেন ডা. আবেদ হোসেন খান।
  • ফল অত্যন্ত জরুরি খাদ্য উপাদান। প্রায় সব ধরনের ফলেই থাকে পানি, যা আপনার পানিশূন্যতা পূরণ করে। ত্বককে সুস্থ এবং নরম রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীরে লবণের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া প্রতিটি ফলে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিপরীতে কাজ করে থাকে। শরীর সুস্থ ও সুন্দর রাখতে ফল দারুণ কাজ করে।
  • ফুচকা, চটপটিসহ খোলা খাবার পরিহার করার পরামর্শ চিকিৎসকের। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো হয় এসব। যে বানায় তার পরিচ্ছন্নতার অভাবে চটপটি, ফুচকাতে রোগজীবাণু থাকতে পারে। এ থেকে ডায়েরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি নানা ধরণের রোগ হতে পারে। যদি পরিষ্কার পরিবেশে বানানো হয় তবুও এটি ক্ষতি করতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ঝাল ও টক পাকস্থলিতে এসিডিটি তৈরি করে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি খাওয়া কখনোই শরীরের পক্ষে ভাল নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি খাওয়ার ফলে শরীরে বাড়তি মেদ জমে যা ভবিষ্যতে নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পূজার সময় মিষ্টি খাওয়ার সময় পরিমাণ যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ঘুম শরীর ও মন দুইয়ের জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভালো ঘুম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। আপনি ঠিকমতো না ঘুমিয়ে যদি রাতের বেলা ঘুরতে বের হন এতে আপনার প্রেশার বেড়ে যেতে পারে, পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অপরদিকে ঘুম ঠিকমতো না হওয়ায় ঘুম থেকে ওঠার পরও ক্লান্তিবোধ ও সারাদিন ঘুম পাওয়া আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়বে। যা আপনার পূজার আনন্দকে মাটি করে দেবে।

সুস্থ থাকার জন্য তাই আপনাকে রুটিন মাফিক চলতে হবে। দৈনিক ৩ লিটার পানি পান করুন, খাবারের প্রতি খেয়াল রাখুন, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন, ধূমপান ও ক্যাফেইন ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকুন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Income inequality in Bangladesh

Growth obsession deepened rich-poor divide

Income inequality in Bangladesh has seen a steep rise over the past 12 years till 2022, according to official data, as economists blame a singular focus on growth rather than sorting out income disparities.

16h ago