চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার

দেশে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ রোগকে বলে কনজাংটিভাইটিস। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহই চোখ ওঠা রোগ। এ রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে।

চোখ ওঠা রোগ কেন হয়? কীভাবে এটি ছড়ায়? লক্ষণ কী? প্রতিরোধে করণীয়? কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত? দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. চন্দ্র শেখর মজুমদার।

চোখ ওঠা রোগ কেন হয়

সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়।

কীভাবে ছড়ায়

সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়।

সারতে কতদিন লাগে

সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

লক্ষণ

  • চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে
  • চোখে অস্বস্তিবোধ হয় (খচখচ করে)
  • চোখের পাতা ফুলে যায়
  • চোখে ব্যথা হয়
  • আলো সহ্য হয় না
  • চোখে পিচুটি (কেতুর) হয়
  • চোখে হালকা জ্বালাপোড়া হয়
  • ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা লেগে থাকে
  • কারো চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে তারা চোখে ঝাপসা দেখেন

চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সতর্কতা

  • সাধারণত এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়
  • প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে
  • হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না
  • রোগীকে কালো চশমা পরতে হবে
  • ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে
  • চোখ মোছার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে
  • চোখ ওঠা রোগীদের আলাদা থাকতে হবে, যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে
  • অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তরা ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ নেন। কিন্তু এ জাতীয় ড্রপ বেশি দিলে চোখের জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন: গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কোনো ধরনের ড্রপ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত না। চিকিৎসকরা অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ দিয়ে থাকেন

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

  • কারো চোখের খচখচে ভাবটা যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে বা চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম
  • শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা একই। তবে, শিশুরা যেহেতু মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উত্তম
  • অনেক সময় চোখ বেশি ফুলে যায় এবং কনজাংটিভায় পানি জমে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
  • খুব কমক্ষেত্রে এমন হয় যে, রোগীর চোখ দিয়ে রক্তও পড়ে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
  • সাধারণভাবে চোখ লাল হলে ও সামান্য পানি পড়লে ৭ দিন অপেক্ষা করাই ভালো। যদি এই সময়ে ভালো না হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেতে পারে

চোখ ওঠা রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. চন্দ্র শেখর মজুমদার বলেন, 'সাধারণত এমনিই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তা ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকেই পরামর্শ নেওয়া উত্তম।'

Comments

The Daily Star  | English

US sends list of items, seeking zero duty

The US has demanded zero duty facility for a large number of its products from Bangladesh.

13h ago