সাপে কাটলে কী করবেন, কী করবেন না

ছবি: পিক্সাবে

প্রতি বছর আমাদের দেশে সাপের কামড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। শহরের চেয়ে গ্রামে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি। বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ সচেতনতার অভাব, সঠিক চিকিৎসার অভাব বা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হওয়া।

এখনো অনেক গ্রামে কুসংস্কার আছে, সাপে কাটলে ওঝা বা বেদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেকেই সাপে কাটলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীভাবে চিকিৎসা নিতে হবে বা সাপে কাটলে করণীয় কী তা জানেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, শুধু সঠিক জ্ঞানের অভাবে মারা যান।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও  হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জি কে এম শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে চলুন জেনে নিই সাপে কাটলে কী করবেন আর কী করবেন না।

কী করবেন

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে, আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেওয়া যাবে না। নির্বিষ সাপের কামড়েও আতঙ্কিত হয়ে মানসিক আঘাতে মারা যেতে পারে মানুষ। বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই বিষহীন, অল্প কিছু সাপ বিষধর। আবার বিষধর সাপ পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এসব জানানোর মাধ্যমে রোগীকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত অঙ্গ অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। হাতে কামড়ালে হাত নাড়ানো যাবে না। পায়ে  কামড়ালে হাঁটাচলা করা যাবে না, স্থির হয়ে বসতে হবে।
  • আক্রান্ত অঙ্গ ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে প্যাঁচাতে হবে। একে প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলে। ব্যান্ডেজ না পাওয়া গেলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
  • ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি পড়ে থাকলে খুলে ফেলুন।
  • রোগীকে আধশোয়া অবস্থায় রাখুন।
  • যদি রোগী শ্বাস না নেন তাহলে তাকে মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
  • যদি সাপটিকে ইতোমধ্যে মেরেই ফেলেন, তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসুন। তবে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই হাত দিয়ে ধরা যাবে না। কিছু সাপ মরার ভান করে থাকে। তবে সাপ মারতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
  • যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম কাছাকাছি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

 

কী করবেন না

না জেনে আমরা এমন কিছু কাজ করি, যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি।

  • কোনো ধরনের শক্ত বাঁধন/গিঁট দেওয়া যাবে না। সাধারণত দেখা যায়, হাত বা পায়ে কামড় দিলে, কামড়ানো জায়গা থেকে ওপরের দিকে দড়ি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। বরং এতে হাত/পায়ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন (Necrosis) শুরু হতে পারে।
  • চিকিৎসার জন্য ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
  • কামড়ানোর স্থানে ব্লেড, ছুরি দিয়ে কাটাকুটি করা যাবে না।
  • অনেক মানুষের ধারণা, আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যাবেন। বিষ রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা এভাবে বের করা সম্ভব নয়। কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেবেন না।
  • কোনো ভেষজ ওষুধ, লালা, পাথর, উদ্ভিদের বীজ, গোবর, কাদা ইত্যাদি লাগানো যাবে না।
  • কোনো রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে সেঁক দেওয়া যাবে না।
  • যদি আক্রান্ত ব্যক্তির গিলতে বা কথা বলতে সমস্যা হয়, বমি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, নাসিক কণ্ঠস্বর ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে কিছু খাওয়ানো যাবে না।
  • কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না।
  • ব্যাথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago