খাবার ডেকোরেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ
অক্সফোর্ডের ক্রসমোডাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রফেসর চার্লস স্পেন্সের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, খাবারের ডেকোরেশন খাবারের স্বাদকে আরও লোভনীয় করে তুলতে পারে।
গবেষণায়, স্পেন্সের দল ৩ ধরনের সালাদ প্রস্তুত করে এবং অংশগ্রহণকারী ৬০ জনের প্রত্যেককে সেগুলো খাওয়ার আগে এবং পরে রেটিং দিতে বলা হয়। প্রতিটি সালাদেই একই উপাদান ব্যবহার করা হলেও সেগুলো ডেকোরেশনের ধরন ছিল ভিন্ন।
প্রথমটিতে, একটি সালাদের ডেকোরেশন ছিল শিল্পী ওয়াসিলি ক্যান্ডিনস্কির একটি চিত্রকলার অনুরূপ। দ্বিতীয়টিতে অন্য সালাদটির ডেকোরেশন করা হয় সচরাচর বাড়িতে যে ধরণের সালাদ করা হয় সেরকম (তাড়াহুড়োয় করা সালাদ) এবং তৃতীয়টিতে উপাদানগুলো সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা করে সাজানো ছিল।
ক্যান্ডিনস্কি-অনুপ্রাণিত পেইন্টিং অনুরূপ সালাদ বাকী দুটোর চেয়ে বেশি পছন্দ করেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা মনে করেন এটি আরও ভাল স্বাদযুক্ত। অংশগ্রহণকারীরা এর জন্য দ্বিগুণ অর্থ দিতেও প্রস্তুত ছিলেন।
স্পেন্স মনে করেন-
* এর কারণ খাবারটি দেখে বেশি আবেদনপূর্ণ মনে হয়।
* অন্য কারণ হতে পারে যখন কেউ সেই নান্দনিক ডেকোরেশনটি দেখে, তখন এতে যে কারো প্রচেষ্টা আছে, তা খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয় এবং খাদ্য অভিজ্ঞতায় প্রভাব ফেলে।
* অথবা হয়তো এটি শিল্পপূর্ণ ডেকোরেশনের প্রতি অন্তর্নিহিত নান্দনিক আবেদন।
যেহেতু আমাদের ইন্দ্রিয় সংশ্লিষ্ট অনুভূতিগুলো মিশ্রিত ধরনের এবং একটি আরেকটিকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য রাখে। তাই চোখের তৃপ্তি জিহ্বার স্বাদের সঙ্গে সংযুক্ত।
এই গবেষণার পর ফ্লেভার জার্নালে দেওয়া তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, ডাইনাররা আসলে স্বজ্ঞাতভাবে খাবারের একটি শৈল্পিক মূল্যকে প্রাধান্য দেয়। তখন তাদের কাছে এটিকে আরও জটিল মনে হয়। তাই যখন রান্নার উপাদানগুলোকে একটি বিমূর্ত-শিল্পের চিত্রের মতো সাজানো হয় তখন তারা এটি আরও বেশি পছন্দ করেন।
সফল ডাইনিং অভিজ্ঞতার একটি মূল দিক হলো উপলব্ধি। যেমন, খাবারের রঙ, কাটলারি, রেস্তোঁরার পরিবেশ, আন্তরিকতা সবই উপলব্ধির বিষয় এবং তা খাবার উপভোগকে প্রভাবিত করে।
তাই গ্রাহকরাও তাদের খাবারের বিচারের জন্য খাবারের দৃশ্যত স্বাদের ওপরও নির্ভরশীল। যার কারণে, খাবারের স্বাদ নেওয়ার আগেই এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা ফলপ্রসূ হলো কিনা তা মনে মনে নির্ধারণ করে নেন৷
রেস্তোরাঁর টেবিলে যেই ডিশই নিয়ে আসা হোক সেটিই রেস্তোরার উৎকর্ষতার সাক্ষ্য দেয়। অর্থাৎ খাদ্য ডেকোরেশনের মাধ্যমেই মনস্তাত্ত্বিকভাবে রেস্তোরাঁর মান কেমন সেই বিষয়ে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে যায়। একই সঙ্গে এটিই ওই রেস্তোরার কিচেনের কর্মীদের অভিজ্ঞতার এবং দক্ষতার জানান দেয়।
বড় এবং দামী রেস্তোরাগুলো তাদের গ্রাহক কারা তা বেশ ভালোভাবে অনুমান করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো সেবা পেলে ক্রেতারা নতুন স্থান, নতুন কিছুর পরিবর্তে জানাশোনা স্থানেই বারবার যাওয়ার প্রবণতা রাখে। তাই দামী এবং ক্লাসিক রেস্টুরেন্টগুলো খাবার ডেকোরেশনেও থাকে দৃষ্টিনন্দন!
Comments