বয়স ৫০? যেসব জটিলতা কাবু করতে পারে আপনাকে!

বার্ধক্য স্পষ্টতই শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের বয়স বাড়ায় এবং বয়স্কদের জীবনে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অন এজিং অনুসারে, প্রায় ৯২ শতাংশ বয়স্ক মানুষের কমপক্ষে একটি এবং প্রায় ৭৭ শতাংশের ২টি বা তার বেশি দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা আছে।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো-

বয়স ছাড়িয়ে যাওয়া

প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯ জন একটি এবং প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন একাধিক দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা বহন করে চলছেন। আপনিও এই তালিকায় পড়বেন হয়ত শিগগির। কিন্তু আপনি চাইলেই সুস্থভাবে বাঁচতে পারবেন।

উচ্চ রক্তচাপ

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীগুলোও কম নমনীয় হয়ে যায়। ফলে সংবহনতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

ডায়াবেটিস

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি যেন এখন একটি সাধারণ বিষয়। ডায়াবেটিস হৃদরোগ, কিডনির বিকলাঙ্গতা এবং অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

অন্যান্য কারণগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। আপনার ওজন দেখুন, ব্যায়াম করুন, ধূমপান ত্যাগ করুন, মানসিক চাপ পরিচালনা করুন এবং ভালো খান।

হৃদরোগ

ধমনীতে প্লাক জমে থাকা হৃদরোগের প্রাথমিক কারণ। শৈশব থেকে শুরু হয়ে বয়সের সঙ্গে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ৬০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৯ দশমিক ৭ শতাংশ নারী হৃদরোগে আক্রান্ত।

স্থূলতা

অতিরিক্ত কিছু পাউন্ড ওজন বেশি এমনটা না ভেবে উচ্চতার তুলনায় অনেক বেশি ওজন থাকলেই তা স্থূলতার অন্তর্ভুক্ত। এতে অন্তত ২০টি দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিস।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস

একসময় ডাক্তাররা জয়েন্টের ব্যথার জন্য বার্ধক্যকে দায়ী করতেন। কিন্তু বংশগতি এবং জীবনধারাও এটির কারণ হতে পারে। কিংবা জয়েন্ট ইনজুরি, অপরিমিত ব্যায়াম, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত স্থূলতা এসবও এর কারণ হতে পারে।

অস্টিওপরোসিস

অস্টিওপরোসিস হাড়কে দুর্বল করে দেয়, যা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ (এই দুটোই মজবুত হাড়ের জন্যে আবশ্যকীয়) সুষম খাবার এবং নিয়মিত বিভিন্ন শারীরিক কসরত বা কার্যক্রম যেমন নাচা, দৌঁড়ানো, সিঁড়ি বেয়ে উঠা অনেক উপকারী হবে।

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)

এটি প্রদাহ বাড়ায় এবং ফুসফুসে বাতাস প্রবেশে বাধা তৈরি করে। এটি এতই ধীরগতির অবস্থা যা বছরের পর বছর ধরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তবে লক্ষণসমূহ সাধারণত বয়স ৪০ বা ৫০ এর মধ্যে দেখা দেয়। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং কাশি, হাঁচি ও শ্লেষ্মা হতে পারে। ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান ও দূষণ থেকে দূরে থাকা এই অবস্থা পরিত্রাণে ভূমিকা রাখতে পারে।

শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া

কাউকে যদি বার বার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয় 'আপনি কী বলেছেন?' তাহলে ধরে নিতে পারেন এবার সত্যিই শরীরের বয়সটা বেড়েছে আপনার। উচ্চ শব্দ, অসুস্থতা ও জিনগত অসঙ্গতি ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধ থেকেও এই সমস্যা তৈরি হয়। ঠিকমত শুনতে না পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা

লেবেলে বা মেনুতে ছোট লেখা পড়ার চেষ্টা করেও যদি ব্যর্থ হন বা অস্পষ্টতা অনুভব করেন বুঝতে হবে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হয়েছে। ছানি (চোখের লেন্স অস্বচ্ছ বা ঘোলা হয়ে যায়, ফলে দেখতে অসুবিধা হয়) এবং গ্লুকোমা (চোখের একপ্রকার রোগ যাতে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে) দৃষ্টিকে ব্যাহত করতে পারে। নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা চোখ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

মূত্রথলির সমস্যা

বয়সের সঙ্গে একটি সাধারণ উদ্বেগ হলো যখন খুব ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হচ্ছে কিংবা প্রয়োজন হলেও যাচ্ছেন না, এমন অসঙ্গতি। পেশীর দুর্বলতা, স্নায়বিক সমস্যা, টিস্যু ঘন হয়ে যাওয়া এবং প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া এর সম্ভাব্য কারণ। কফি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া অথবা ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলা, জীবনধারা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এর থেকে নিস্তার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ক্যান্সার

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগের মধ্যে ক্যান্সার নতুন নয়। যদিও এই রোগটি কমবয়সীদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ, তবে ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সের মধ্যে ঝুঁকি মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পায়। যদিও বয়স বাড়লেও জিনগত গঠনের কারণে এর ঝুঁকি সীমাবদ্ধ তবুও ধূমপান এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিষণ্ণতা বা হতাশা

বয়স ১৮ বা তার বেশি হলেই দেখা যায় পুনরাবৃত্তিমূলক বহুল পরিচিত সমস্যা 'হতাশা'। কেউ বয়স বাড়ার সঙ্গে, স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে, প্রিয়জন হারালে এবং জীবন নতুন মোড় বা পরিবর্তন এলেও হতাশায় নিমজ্জিত হন।

পিঠের ব্যথা

মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি যেন খুবই নৈমিত্তিক ঘটনা। অতিরিক্ত ওজন, সিগারেট, যথেষ্ট ব্যায়াম না করা কিংবা আর্থ্রাইটিস এবং ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থা বিদ্যমান থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায় আরও। হাড় ভালো রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা জরুরি।

ডিমেনশিয়া

আলঝাইমার্স একটি মানসিক রোগ এবং এক ধরণের ডিমেনশিয়া যা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যেই প্রকাশ পায়। বয়স বা পারিবারিক ইতিহাসের মতো কিছু কারণে এর যে ঝুঁকি তা পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং রক্তের পরিমিত শর্করার পরিমাণ এক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করে বলেও প্রমাণিত হয়েছে।

অগ্রজরা সাধারণ যেসব স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন সে সম্পর্কে জানা, সচেতনতা, পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি থাকলে বার্ধক্যকালীন আসন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকা সহজ হবে।

অনুবাদ করেছেন তানজিনা আলম

Comments

The Daily Star  | English
Gen Z factor in geopolitics

The Gen Z factor in geopolitics and the Bangladesh-US dynamics

Gen Z should keep in mind that the US cannot afford to overlook a partner like Bangladesh given the country’s pivotal position in South Asia’s economic landscape.

10h ago