হিল কি ট্রেন্ডের বাইরে চলে যাচ্ছে
ফ্যাশনে হিল জুতার ব্যবহার সবসময়ই ছিল স্টাইল, গ্ল্যামার আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। তবে কোভিড মহামারির পর বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ নান্দনিকতার পরিবর্তে আরামকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে ফ্যাশন বিশ্বে জুতার ক্ষেত্রে একটি আকস্মিক পরিবর্তন এসেছে।
যদিও হিল পরার অস্বস্তিকে উপেক্ষা করেই ফ্যাশনের জন্য এতদিন নারীরা হিল পরে এসেছেন, কোভিড মহামারির পর ফরমাল পোশাক আর আরামদায়ক ক্যাজুয়াল পোশাকের মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে। উঁচু হিল জুতা যে নারীত্ব আর আভিজাত্যের প্রতীক, এই ধারণা ভেঙে এখন নারীরা স্টাইলের ক্ষেত্রে আরামকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আরামকে প্রাধান্য দেওয়া স্টাইলের ট্রেন্ডই এখন ফ্যাশনকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
এনপিডি গ্রুপ নামের একটি মার্কেটিং রিসার্চ ফার্মের তথ্যানুসারে, ২০২০ এর মধ্যভাগ থেকে হাই হিল বিক্রির পরিমাণ ৬৫ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে রিমোট ওয়ার্কের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায়, ফ্যাশন সচেতন নারীরাও এখন উঁচু হিলের পরিবর্তে আরামদায়ক লোফার, ওয়েজ, ফ্লাট ব্যালেরিনা অথবা স্নিকার্সের দিকে ঝুঁকছেন।
ফ্যাশনে জুতার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আসার কারণ সম্পর্কে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে প্রথমেই যেই প্রশ্নটি আসে তা হলো, নারীদের জুতার পছন্দে পরিবর্তন আসার জন্য কি শুধু করোনা মহামারী দায়ী?
কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট এবং ফ্যাশন বিজনেস কনসালটেন্ট ড. ক্যারোলিন মেইর মনে করেন, করোনা এই ট্রেন্ডকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। মর্ডান ফেমিনিনিটি শুধু জুতার মতো কিছু অনুষঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে সমাজ সমতা ও ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী এবং সেইসঙ্গে নারীবাদও সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রখ্যাত ডিজাইনার ভ্যালেন্টিনোর লেটেস্ট ফল-উইন্টার ফ্যাশন শো ২০২৩-২০২৪ এর রানওয়েতে অধিকাংশ লুকের সঙ্গে হিলের বদলে ফ্ল্যাট জুতার ব্যবহার দেখা গেছে, যা হিলের ব্যবহারকে আরও কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি ভ্যালেন্টিনো, প্রোয়েনজা স্কুলারের মতো বড় বড় জুতার ব্র্যান্ডগুলো একসঙ্গে কোলাবোরেশানের মাধ্যমে আমাদের পরিচিত জুতাগুলোই আরামদায়ক করে নতুনভাবে নিয়ে এসেছে। যেমন: বার্কেনস্টকের ক্লাসিক আরিজোনা স্যান্ডেল। এই জুতাগুলো লকডাউনের সময়ে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। ২০২৩ সালের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ৭১ শতাংশ মানুষ হিলের পরিবর্তে স্নিকার্স ও ৭০ শতাংশ মানুষ হিলের পরিবর্তে কালো ফ্লাট ব্যালে জুতার খোঁজ করেছেন।
যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের বিখ্যাত বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যনিাডগুলোর জন্য কাপড় বানিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিত, বাংলাদেশি ফুটওয়্যার ডিজাইনাররাও এই ট্রেন্ড সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন।
বাটা বাংলাদেশের সিনিয়র ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ মার্চেন্ডাইজিং খন্দকার তাসনিম ফারিহা বলেন, 'যদিও হিলের বিক্রি রাতারাতি খুব কমে যায়নি, তবে ক্রেতাদের চাহিদায় পরিবর্তন এসেছে। ক্রেতারা এখন অস্বস্তিকর স্টিলেটো হিলের পরিবর্তে ব্লক হিলের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'ফ্যাশন সচেতন নারীরা এখন কিটেন হিল পছন্দ করছেন। স্টাইলের ক্ষেত্রে আপস না করা এই হিলের স্টাইলটি ভীষণ আরামদায়ক এবং এটি পায়ের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।'
এপেক্স ফুটওয়্যারের মার্কেটিং ম্যানেজার ও ই-কমার্স লিড রায়হান কবির বলেন, 'বর্তমানে গ্লোবাল ট্রেন্ড আরামদায়ক, ক্যাজুয়াল ফ্যাশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্রেতারা এমন জুতা খুঁজছেন যা একইসঙ্গে ফ্যাশন ও আরামের সঠিক সংমিশ্রণ। ফলে নির্দিষ্ট কিছু স্টাইল যেমন- ফ্ল্যাট, ওয়েজ, ব্লক হিল, প্লাটফর্ম হিল এমনকি স্নিকার্সের চাহিদা বাড়ছে। এই জুতাগুলো ব্যবহারকারীকে কোনো অস্বস্তি ছাড়াই আরামের সঙ্গে চলাচলের সুযোগ দেয়। আজকাল ক্রেতারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার ব্যাপারে খুবই সচেতন, যার প্রভাব ধীরে ধীরে ফ্যাশন ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতেও দেখা যাচ্ছে।'
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments